বাজারে গিয়ে দুই আনাজের দামে এমনই অবস্থা ক্রেতাদের। পেঁয়াজের দাম অগস্ট থেকেই ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি কেজির দর ৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন পৌঁছে গিয়েছে ৭০-৮০ টাকায়। জুলাইয়ে আলুর দাম খানিক নিয়ন্ত্রণে এলেও, এখন আবার তা প্রতি কেজি ৩৫ টাকায় বিকোচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, প্রশ্ন উঠছে টাস্ক ফোর্সের ভূমিকা নিয়ে।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বরে অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার ফলে খুচরো বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, প্রতি বছরই পুজোর মরসুম থেকে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়ে। তবে অন্য বছরে মহারাষ্ট্রের নাসিকের পেঁয়াজ বাজারে চলে আসে। এ বার সেই আমদানি কম হওয়ায়, দাম চড়েছে বেশি।
রাজ্য টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা কলকাতার কোলে মার্কেটের ব্যবসায়ী কমল দে বলেন, “এই রাজ্যে প্রতি মাসে দেড় লক্ষ টন পেঁয়াজ লাগে। তার অর্ধেকেরও কম পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও আমদানি করতে ভয় পাচ্ছেন।”
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের দাবি, রাজ্যে এখন ৮ লক্ষ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার ব্যবসায়ী একসাদুল শেখ বলেন, “বাজারে এখন যা পেঁয়াজ আসছে, তা চাষিদের ঘর থেকে। সেই পেঁয়াজও প্রায় শেষ।’’ রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেছেন, “এখানে পেঁয়াজ চাষ বাড়ানোর সঙ্গে, সংরক্ষণের উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। এর সুবিধা আগামী মরসুম থেকেবোঝা যাবে।”
রাজ্যে গত মরসুমে প্রায় ১২৫ লক্ষ টন আলু ফলেছিল। তার মধ্যে হিমঘরে ঢুকেছিল ৬৩ লক্ষ টন। বাকি খুচরো বাজারে ও ভিন্ রাজ্যে রফতানি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, এখন হিমঘরের ফটক থেকে জ্যোতি আলু প্রতি কেজি গড়ে ২৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খুচরো বাজারে সেই দাম দাঁড়াচ্ছে ৩৫ টাকা। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরো বাজারের দাম ৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে, আমাদেরকাছেও প্রশ্ন।”
টাস্ক ফোর্স কেন দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, প্রশ্ন তুলছেন ক্রেতাদের অনেকে। টাস্ক ফোর্স সূত্রের যদিও দাবি, তারা বাজারে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। এক সদস্যের কথায়, “আমরা অভিযান চালানোর সময়ে ঠিক দাম নেওয়া হচ্ছে। ফিরে এলেই আবার দাম বাড়ছে!” যদিও টাস্ক ফোর্সের অভিযানের খবর আগাম কী ভাবে বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে, সে প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।
রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের বক্তব্য, “কলকাতার যে সব খুচরো বাজারে দাম বাড়ানোর প্রবণতা রয়েছে, সেই সব বাজারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সামনের মরসুমে সেখানে সুফল বাংলার স্টল খুলে সরকারি দামে আলু বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” কৃষি বিপণন দফতরের দাবি, সুফল বাংলা স্টল থেকে জেলায় জেলায় ২৫ টাকা ও কলকাতায় ২৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা হচ্ছে।