• বঙ্গের বাম রাজনীতিতে আমূল ‘ভূমি’ সংস্কার! ১৯৭৭-এর ভোট-ফর্মুলা বাতিল বামফ্রন্ট বৈঠকে
    আনন্দবাজার | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • প্রথম বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে আমূল ভূমি সংস্কার করেছিল। কিন্তু বাংলার বাম রাজনীতির জমিতে আমূল ‘ভূমি’ সংস্কার ঘটে গেল সোমবার। নতুন পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাড়ে চার দশকের পুরনো ফর্মুলা বাতিল করে দিল রাজ্য বামফ্রন্ট।

    ১৯৭৭ থেকে ২০২৪। ৪৭ বছরের ব্যবধানে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হাওয়ায় আমূল বদলই ঘটে গিয়েছে। কিন্তু ১৯৭৭ সালের আসন বণ্টন ফর্মুলাই সদ্য হওয়া উপনির্বাচন পর্যন্ত বহাল ছিল বামফ্রন্টে। এ বার তা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলেন বিমান বসুরা। সোমবার রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠক বসেছিল। চেয়ারম্যান বিমান যে প্রস্তাব রেখেছিলেন, তা সব শরিকদলই গ্রহণ করেছে বলে খবর। নতুন ফর্মুলা কী হবে, সে ব্যাপারে প্রত্যেকটি দল নিজেদের প্রস্তাব বামফ্রন্টে রাখবে। তার পর ২০২৬ সালের ভোটের জন্য আসন বণ্টনের নতুন ফর্মুলা নির্ধারিত হবে।

    একটা সময়ে কোচবিহারের বড় অংশ জুড়ে দাপট ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের। অবিভক্ত মেদিনীপুর জুড়ে ছিল সিপিআইয়ের আধিপত্য। দক্ষিণ দিনাজপুর কিংবা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর, কুলতলিতে ছিল আরএসপির জমাট সংগঠন। ফ্রন্টের মধ্যে থাকা আরও কিছু ছোট শরিক দলেরও কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় শক্তি পুঞ্জীভূত ছিল। কিন্তু এখন সেই দিন নেই। বামফ্রন্ট সরকার থেকে চলে গিয়েছে সাড়ে ১৩ বছর হয়ে গেল। তার পর এখন তারা বিরোধী পরিসরেও ‘নেই’। ক্ষইতে ক্ষইতে ‘প্রান্তিক’ শক্তিতে পরিণত হয়েছে ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করা জোট। বামফ্রন্ট সূত্রে খবর, সেই বাস্তবতার কথা মাথায় রেখেই পরিবর্তিত ফর্মুলা তৈরি করা হবে।

    সম্প্রতি ছ’টি বিধানসভার উপনির্বাচনে মাত্র একটি আসনে নিজেদের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল সিপিএম। একমাত্র সেই তালড্যাংরাতেই বামেরা ১০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। মাদারিহাটে আরএসপি, সিতাইয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক, মেদিনীপুরে সিপিআই বড় জোর দেড়, দুই অথবা তিন শতাংশ ভোট পেয়েছে। এমতাবস্থায় ৪৭ বছরের পুরনো ফর্মুলা বদলেরই সিদ্ধান্ত নিল বামফ্রন্ট। কেউ কেউ মনে করছেন, একটু দেরিতেই নিল।

    ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল রাজ্যে। যা চলেছিল ২০১১ পর্যন্ত। ১৯৭৭ সালে যে আসন যাদের ছিল, এখনও সেই ফর্মুলাতেই আসন বণ্টন হয়। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কংগ্রেস, আইএসএফ এমনকি সদ্য সমাপ্ত উপনির্বাচনে ফ্রন্টের বাইরে থাকা বাম দল সিপিএমএল (লিবারেশন)-এর সঙ্গেও আসন সমঝোতা করেছিল বামেরা। কিন্তু দেখা গিয়েছে, শরিকদলগুলি নিজেদের আসন ছাড়ার ব্যাপারে জেদাজেদি করে। চার দশক ধরে লড়ে আসার দোহাই দিয়ে তারা এখনও লড়তে চায়। কিন্তু ভোটের পর ভোট যায়, জয় আসে না। ক্ষয়ের রোজনামচা দেখতে হচ্ছে বাম কর্মীদের। সেই বাস্তবতাকেই অগ্রাধিকার দিতে চাইছে সিপিএম। মূলত বড় শরিক সিপিএমের তরফেই ফ্রন্টের বৈঠকে ফর্মুলা বদলের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। বৈঠকে উপস্থিত শরিকদলের এক প্রবীণ বাম নেতা বলেন, ‘‘বাস্তব পরিস্থিতি বদলেছে। আমাদের সেটা মেনে নিয়েই পরিবর্তিত পদক্ষেপ করতে হবে। ১৯৭৭ সালের ফর্মুলা আর চলবে না।’’ ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের মুখে যাতে জোট বা আসন সমঝোতায় কোনও শরিকি জটিলতা বা বাধা তৈরি না-হয়, সেই কাজ এখনই সেরে রাখতে চায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

    তবে, আগে প্রস্তুতি নিলেও ভোটের বাক্সে বামেরা কত দাগ কাটতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। কারণ ভোটে জেতার জন্য যে পরিসর দরকার, তা আপাতত বামেদের জন্য নেই বলেই অভিমত রাজনৈতিক মহলের অনেকের। কারণ, বঙ্গের রাজনীতি তৃণমূল এবং বিজেপির দ্বিমেরু অক্ষেই আবর্তিত হচ্ছে। বামেদের লড়াই আপাতত জামানত রক্ষার। অন্তত গত কয়েকটি সাধারণ নির্বাচন সেই দিকনির্দেশই করছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)