বেহালার ডায়মন্ডহারবার রোডের একটি বড় জমির একাংশ বেআইনি ভাবে আলাদা করে অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে এমনই অভিযোগ জানানো হলে ঘটনাটি কলকাতা পুরসভার নজরে আসে। অভিযোগ পাওয়ার পরই মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিযোগকারী তাঁকে জানান, ৫৮ নম্বর ডায়মন্ডহারবার রোডের প্রায় ১০ কাঠা জমির মধ্যে দু’কাঠা আলাদা করে ৫৮এ ডায়মন্ডহারবার রোড নামে নতুন ঠিকানা তৈরি করা হয়েছে। অথচ জমির কোনও আইনসিদ্ধ বিভাজন হয়নি। শুধু তা-ই নয়, সংশ্লিষ্ট জমি বেআইনি অ্যাসেসমেন্টের ভিত্তিতে সম্পত্তিকরের আওতাভুক্ত করা হয়েছে এবং গোপনে মিউটেশনও সম্পন্ন করা হয়েছে বলে দাবি করেন ওই ব্যক্তি। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই মেয়র পুর কমিশনার ধবল জৈনকে তদন্তের নির্দেশ দেন এবং স্পষ্ট জানান, যদি পুরসভার কোনও কর্মী এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তা হলে তাঁকে কোনও ভাবেই রেহাই দেওয়া হবে না। মেয়র আরও বলেন, “পুর কমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। দুর্নীতি ধরা পড়লে তার দায় সেই কর্মীর। যদি তিনি অবসরগ্রহণ করে থাকেন, তা হলে তাঁর পেনশন বন্ধ করা হবে।”
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা পুরসভার শীর্ষ আধিকারিকদেরও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, মেয়র জানতে চান, পুরসভার নিজস্ব নজরদারি ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে এই ধরনের বেআইনি কাজ সম্ভব হল? পুরসভার অন্দরে কোনও অসাধু চক্র কাজ করছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের বেআইনি অ্যাসেসমেন্ট এবং মিউটেশন নিয়ে কলকাতা পুরসভায় আগেও একাধিক অভিযোগ উঠেছে। সাধারণত কোনও জমিকে আইনি প্রক্রিয়া মেনে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত (সাব ডিভিশন) না করলে আলাদা করে সম্পত্তিকর আরোপ করা যায় না। তবে কিছু অসাধু কর্মী ও স্বার্থান্বেষী মহল যোগসাজশ করে এ ধরনের কাজ করে থাকেন বলেই অভিযোগ। অভিযোগকারী এই দুর্নীতির অভিযোগের নেপথ্যে পুরসভার কিছু কর্মীর ভূমিকা থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে বলেছেন মেয়র।
মেয়রের কড়া অবস্থানের ফলে এই অভিযোগের তদন্ত দ্রুত ও নিরপেক্ষ ভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ। যদিও সত্যিই বেআইনি উপায়ে জমি বিভাজন ও সম্পত্তিকর আরোপ করা হয়ে থাকে, তবে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মেয়র। কলকাতা পুরসভা ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে। এই তদন্তের আওতায় আনা হতে পারে পুরসভার আধিকারিকদের ভূমিকাও।