২৬ হাজার চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলায় আসল ওএমআর শিট না থাকার সমস্যার কথা তুলে ধরেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। তিনি জানান, আসল তথ্য জানা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে ক্ষেত্রে আদালত কী করতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির।
রাজ্যে এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি খন্নার এজলাসে এ কথা জানান সিবিআইয়ের আইনজীবী। ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় হাই কোর্টের রায়কেই সমর্থন করছে তদন্তকারী সংস্থা। সোমবার এই মামলায় প্রধান বিচারপতি সিবিআইয়ের বক্তব্য জানতে চান। তখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী বলেন, “নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি হয়েছে। হাই কোর্টের রায় যথার্থ। ওই রায়ই বহাল রাখা হোক।”
সিবিআইয়ের বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতি খন্না জানান, সমস্যা হল আসল ওএমআর শিট নেই। সে ক্ষেত্রে কোন ওএমআর শিটকে আসল বলে ধরে নেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “এসএসসি (স্কুল সার্ভিস কমিশন) না কি পঙ্কজ বনসলের সংস্থার কাছে তথ্য রয়েছে? অনেক সন্দেহ রয়েছে! পঙ্কজ বনসলের সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে সন্দেহ আছে। আসল তথ্য জানা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় আমরা কী করতে পারি?” চারটি বিভাগে কত নিয়োগ হয়েছিল, সে বিষয়েও সিবিআই এবং এসএসসির কাছে জানতে চান প্রধান বিচারপতি।
কত জন যোগ্য এবং অযোগ্যকে বাছাই করা হয়েছে, তা নিয়েও এসএসসিকে প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। তাতে কমিশনের আইনজীবী জানান, ‘র্যাঙ্ক জাম্প’ এবং প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য তাঁদের কাছে রয়েছে। কিন্তু ওএমআর শিট কারচুপির তথ্য কমিশনের কাছে নেই। সে কথা শুনে প্রধান বিচারপতি খন্না বলেন, “সমস্যা তো এখানেই। বনসলের সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে আপনাদের তথ্য মিলিয়ে দেখেননি। আপনারা বলতে পারছেন না কোনটি আসল তথ্য। কিন্তু সিবিআইয়ের তথ্য গ্রহণ করলে বলতে হবে বনসলের তথ্য আসল। উল্টো দিকে অন্য পক্ষ বলছেন, তাঁদের নম্বর আসল। বনসলের তথ্য সঠিক নয়।”
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি এই মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে কি না, সে বিষয়ে গত শুনানিতে জানতে চান শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি খন্না। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া কতটা কঠিন, তা-ও জানতে চান তিনি। তখন মূল মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, অনেকে চাকরির আবেদন না করেও নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যাঁরা চাকরির আবেদন করেছিলেন, তাঁদের আবার নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে বলে প্রধান বিচারপতির এজলাসে জানান বিকাশরঞ্জন।
নিয়োগের পুরো প্যানেলই বাতিল করার জন্য গত শুনানিতে সওয়াল করেন বিকাশ। তিনি জানান, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। তাই পুরো প্যানেলই বাতিল করা উচিত। মূল মামলাকারীদের হয়ে আইনজীবী ফিরদৌস শামিমও জানান, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম দু’টি কাউন্সেলিং এবং নবম-দশম শ্রেণির জন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে তৃতীয় কাউন্সেলিং পর্যন্ত পদ্ধতি মানা হয়েছে। এর পরের কাউন্সেলিংগুলির সময়ে পদ্ধতি মানা হয়নি বলেই মনে করছেন ফিরদৌস।
গত ২২ এপ্রিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করে। তার ফলে চাকরি যায় ২৫,৭৫৩ জনের। যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে বলা হয় ওই চাকরিপ্রাপকদের।
হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। পৃথক ভাবে মামলা করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তার পর সুপ্রিম কোর্টে দফায় দফায় মামলা করেন হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারাদের কয়েক জনও। গত ৭ মে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ চাকরি বাতিল মামলায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। এ ক্ষেত্রে সেই সময় শীর্ষ আদালতের যুক্তি ছিল, যদি যোগ্য এবং অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তা হলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না।