• সাভারকরকে ঘিরে আরএসএসকে আক্রমণ রাহুলের
    আনন্দবাজার | ০৯ অক্টোবর ২০২২
  • স্বাধীনতা সংগ্রামে সঙ্ঘ পরিবারের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক বহু দিনেরই। আজ ভারত জোড়ো যাত্রার ৩১তম দিনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সেই বিতর্ক উস্কে দিয়ে অভিযোগ করেন, আরএসএসের তৎকালীন নেতৃত্ব সে সময়ে ব্রিটিশদের সাহায্য করতেন। একই সঙ্গে রাহুলের অভিযোগ, হিন্দুত্ববাদী নেতা বিনায়ক দামোদর সাভারকর সে সময়ে ইংরেজদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পেতেন। আরএসএসের পাল্টা যুক্তি, একের পর এক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে পরাস্ত হওয়ার হতাশা থেকেই এ ধরনের মন্তব্য করেছেন রাহুল।

    ভারত জোড়ো যাত্রার অংশ হিসাবে আজ কর্নাটকে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাহুল। সেখানেই এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারকে তীব্র আক্রমণ শানান রাহুল। এক সাংবাদিক রাহুলকে প্রশ্ন করেন, যে কংগ্রেস ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের জন্য দায়ী, সেই কংগ্রেস কী ভাবে আজ ভারত জোড়ো যাত্রা করে? রাহুল বলেন, ‘‘আমি ইতিহাস যা পড়েছি, তাতে জেনেছি, স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন আরএসএস ব্রিটিশদের সাহায্য করত। সাভারকর ব্রিটিশদের কাছ থেকে মাসোহারা পেতেন। এ সবই ঐতিহাসিক সত্য।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘সে সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের নেতারাই স্বাধীনতা সংগ্রামে লড়াই করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধী, জহওরলাল নেহরু, বল্লভভাই পটেল দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পাশাপাশি সেই কংগ্রেসেরই অবদান হল সংবিধান ও পরবর্তী সময়ে দেশে সবুজ বিপ্লব আসে কংগ্রেসের হাত ধরে।’’ একই সঙ্গে রাহুল বলেন, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজেপি কোথায় ছিল! ওই দল একাই ঘৃণা ছড়িয়ে দেশকে বিভাজিত করে চলেছে।’’

    রাহুলের বক্তব্য, বর্তমান সময়ে দেশ জুড়ে হিংসা ও ঘৃণার যে বাতাবরণ বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার সৃষ্টি করেছে, তারই বিরুদ্ধে তিনি ভারত জোড়ো যাত্রায় নেমেছেন। সম্প্রতি পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া নামে একটি মৌলবাদী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ এ প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, ‘‘ঘৃণা ও হিংসা ছড়ানো দেশদ্রোহ। তা কে ছড়াচ্ছে, কোন সম্প্রদায়ের মানুষ ছড়াচ্ছে তার উপরে কিছু নির্ভর করে না। যারা হিংসা ছড়ানোয় সক্রিয় রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই কংগ্রেসের লড়াই চলছে, চলবে। কারণ, কংগ্রেস সংবিধানে বিশ্বাস করে।’’

    স্বাধীনতা সংগ্রামে সঙ্ঘ পরিবারের ভূমিকা নিয়ে বারবারই প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। রাজনীতির অনেকের মতে, সেই ঘাটতি ঢাকতে কখনও বল্লভভাই পটেল, কখনও সুভাষচন্দ্র বসুকে কাছে টেনে নিতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে। হিন্দুত্ববাদী নেতা বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের একমাত্র‘আইকন’ হিসাবে সঙ্ঘ তথা বিজেপি তুলে ধরার কৌশল নিলেও, ব্রিটিশদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বহুবিতর্কিত।। আজ সাভারকরের সঙ্গে ব্রিটিশদের সেই মাসোহারার বিতর্ক আরও একবার উস্কে দেন রাহুল। যদিও রাহুলের সাভারকরকে উদ্দেশ্য করে আক্রমণ নতুন নয়। বছর দু’য়েক আগে সংসদে ধর্ষণ প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন রাহুল। সে সময়ে রাহুলের ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলে বিজেপি। যার জবাবে রাহুল বলেছিলেন, তিনি রাহুল গান্ধী। রাহুল সাভারকর নন যে ক্ষমা চাইবেন। সে সময়ে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের জোট সঙ্গী উদ্ধব ঠাকরের দলও রাহুলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন।

    আজ কংগ্রেস নেতার সমালোচনায় মুখ খুলেছেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব। সঙ্ঘের নেতা ইন্দ্রেশ কুমার বলেন, ‘‘সঙ্ঘ ও সাভারকর নিয়ে রাহুল যা বলেছেন, তা একেবারেই মিথ্যা। সঙ্ঘ ও সাভারকরকে দোষী সাব্যস্ত করাই এখন কংগ্রেসের ফ্যাশন হয়ে গিয়েছে। সকলেই জানেন, দেশভাগের জন্য কংগ্রেসই দায়ী। ক্ষমতার লোভে নেহরুই দেশভাগের প্রশ্নে ব্রিটিশদের সমর্থন করেছিলেন। তবে রাহুল যে উল্টোপাল্টা বলেন, তা সকলেই এত দিনে জেনে গিয়েছেন। রাজনীতিতে ক্রমাগত ব্যর্থতার কারণে হতাশা থেকে এ সব বলেন তিনি।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)