• সিবিআই-ইডি’র সাঁড়াশি চাপেও জেলে ফুরফুরে মেজাজে অনুব্রত
    বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২২
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: কালীপুজোটাও অনুব্রত মণ্ডলকে কাটাতে হবে জেলেই। তেমনই আঁটঘাঁট বেঁধে এগিয়েছে সিবিআই। গ্রেপ্তারের ৫৭ দিনের মাথায় তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেখানে তাঁকে ‘গোরু পাচার ব্যবস্থার মূল কাণ্ডারী’ বলা হয়েছে। তাঁর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকেও নিজেদের হেফাজতে নিতে মরিয়া এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। গতকাল আসানসোল সংশোধনাগারে টানা জেরার পর সায়গলকে গ্রেপ্তারের আর্জি জানায় ইডি। সবমিলিয়ে সিবিআই-ইডি’র সাঁড়াশি চাপে বীরভূমের কেষ্ট। অথচ, তিনি নির্বিকার! 

    গতবছর মা কালীকে ৫২০ ভরি সোনার গয়না পরিয়েছিলেন অনুব্রত। তার আগের বছর সাড়ে তিনশো ভরি। এবার সেই পুজোর কী হবে, মা’কে কে বা পরাবেন সোনার গয়না, তা নিয়ে কেষ্টর আক্ষেপ থাকলেও খুব একটা উৎকণ্ঠায় নেই বলে জেল সূত্রে খবর। তাঁর বন্দিদশা কাটছে বহাল তবিয়তেই। প্রথম দিকে জেলের হাসপাতাল ওয়ার্ডের মধ্যেই নিজেকে আটকে রেখেছিলেন। এখন অন্যত্রও ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। জেলের অন্দরে গড়ে উঠেছে তাঁর ‘ফ্যান- ফলোয়ার’। সর্বক্ষণের সঙ্গী কমকরে ২০ জন বন্দি। পুজোয় তাঁদের নতুন বস্ত্র দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছিলেন কেষ্ট। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের চাপে সেই আশা পূরণ হয়নি। তবে, দুর্গোপুজোর মতোই খাওয়া-দাওয়ার এলাহি আয়োজন থাকছে কালীপুজোতেও। জানা গিয়েছে, ওই দিন ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন দিয়ে ভোজ সারবেন বন্দিরা। ভাইফোঁটার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে খবর। নিয়ম মেনে ফোঁটা দেওয়া যাবে অনুব্রত মণ্ডলকেও। 

    আসানসোল জেলা সংশোধনাগারের সুপার কৃপাময় নন্দী বলেন, ‘কালীপুজোর দিন বন্দিদের জন্য ফ্রায়েড রাইসের বন্দোবস্ত থাকছে। নিয়ম মেনে বন্দিদের ভাইফোঁটাও দেওয়া যাবে। তবে, কোনও অবস্থাতেই সংশোধনাগারের নিয়ম লঙ্ঘন করা যাবে না।’ 

    আসানসোল সংশোধনাগার এখন বন্দি হাইপ্রোফাইল সব লোকজন। অনুব্রত, সায়গল ছাড়াও রয়েছেন কয়লা পাচার মামলায় অভিযুক্ত ইসিএলের একাধিক শীর্ষ আধিকারিক। তাঁদের জেরা করতে আসছেন সিবিআই অফিসাররা। তবে তাঁরা সবচেয়ে বেশি তৎপর গোরু পাচার নিয়ে। তাই অনুব্রতের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার পরও তাঁকে জেরা করে চলেছেন তদন্তকারীরা। গতকালও সংশোধনাগারে গিয়ে তাঁকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেছে। তাঁর দেহরক্ষীকেও ১৯টি প্রশ্ন নিয়ে জেরা করেছে ইডি। পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিও করা হয়েছে। তারপরই তদন্তের অসহযোগিতা করার অভিযোগে সায়গলকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানায় ইডি। তবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে আদালতে হাজির করাতে না পারায় গ্রেপ্তার কতটা বৈধ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

    এমন প্রবল চাপের মধ্যে কেষ্ট কী করছেন, তা নিয়ে মানুষের আগ্রহ তুঙ্গে। সংশোধনাগার সূত্রে খবর, কেষ্টর চোখেমুখে খুব বেশি চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছে না। শনিবার সকালেও স্ব-মেজাজেই ঘোরাঘুরি করেছেন। জেলের মধ্যে তাঁর নিজস্ব একটা অনুগামীদল তৈরি হয়েছে। সকলেই কেষ্টকে ‘বস’ মানছেন। তাঁর যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেদিকে নজর রাখছে অনুগামীরা। কেষ্টর ব্যবহারে মজেছেন কয়েকজন কারারক্ষীও। তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন তিনি। সবসময় ফুরফুরে মেজাজে অনুব্রত। 
  • Link to this news (বর্তমান)