• দু’বছর পর দেবীকে স্পর্শ করলেন ভক্তরা
    বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২২
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: করোনা কালে সংক্রমণ রোধে দেবী তারাকে স্পর্শ করা নিষিদ্ধ ছিল। দু’বছর পর শনিবার মায়ের আবির্ভাব তিথিতে তারাকে স্পর্শ করে পুজো দিলেন হাজার হাজার ভক্ত।  সেই সঙ্গে ‘জয় তারা’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠল বামাখ্যাপার সাধনাক্ষেত্র। 

    মায়ের জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার রাত থেকেই সাজিয়ে তোলা হয়েছিল গোটা মন্দির। নিয়মানুযায়ী, শনিবার ভোর তিনটের সময় মাকে গর্ভগৃহ থেকে বের করে বিরাম মঞ্চে আনা হয়। এরপর মন্দির চত্বরে থাকা জীবিত কুণ্ডের জলে মাকে স্নান করিয়ে রাজবেশে সাজিয়ে তোলা হয়। পরে মায়ের বিশেষ পুজো ও মঙ্গলারতির পর সর্বসাধারণের জন্য বিশ্রামাগার খুলে দেওয়া হয়। এদিন যেহেতু সকলে মাকে স্পর্শ করে পুজো দিতে পারেন, তাই ভোর থেকে মাকে পুজো দিতে ভক্তদের লম্বা লাইন পড়েছিল। বিশ্রামাগারের আটটি গেটই এদিন খুলে দেওয়া হয়েছিল। অনেকে মানতের পাঁঠা বলি দেন। ভক্তরা ‘জয় তারা’ ধ্বনি ও বাজনা সহযোগে মায়ের জন্মদিনে মেতে ওঠেন। 

    কলকাতা থেকে আগত দীপান্বিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, দুর্গাপুজো শেষে কিছুই ভালো লাগে না। কিন্তু চর্তুদশী তিথিতে মায়ের আবির্ভাব উৎসব সেই খামতি মিটিয়ে দেয়। আগত ব্যবসায়ী জয়দেব রায় বলেন, পুজোর ক’টা দিন ব্যবসা বন্ধ থাকে। চর্তুদশী তিথিতে মায়ের কাছে পুজো দিয়ে ফের ব্যবসা চালু করি। কলকাতা থেকে পরিবার নিয়ে আগত সৌমেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, প্রতি বছরই আবির্ভাব তিথিতে মায়ের কাছে পুজো দিয়ে সন্তান-সন্ততি নিয়ে সুখে সংসার করার প্রার্থনা জানাই। মেদিনীপুর থেকে আগত রিঙ্কি মণ্ডল বলেন, এই দিনটিতে আমার পুত্র জন্মেছিলে। এদিন তারা মায়েরও জন্মদিন। তাই প্রতি বছরই এই দিনটিতে তারাপীঠে আসি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে তারাপীঠের ভোল পাল্টে গিয়েছে। মন্দির চত্বরে মায়ের চরণের ফুল, বেলপাতা গড়াগড়ি খাচ্ছে দেখে মন খারাপ হয়ে যায়। 

    মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, যত দিন যাচ্ছে মায়ের আর্বিভাব তিথিতে ভক্ত সমাগম বাড়ছে। করোনার কারণে দু’বছর মাকে স্পর্শ করা নিষিদ্ধ ছিল ভক্তদের। এদিন অবশ্য সবাই মাকে স্পর্শ করে পুজো দিয়েছেন। এদিন ভিড় ব্যাপক হয়েছে। তিনি বলেন, মন্দির চত্বরে মায়ের ফুল পায়ে ঠেকলে কোনও দোষ নেই। গঙ্গা জল যখন বাড়িতে থাকে, তখন আমরা মাথায় ছিটিয়ে নিই, পায়ে নয়। আবার যখন গঙ্গায় স্নান করতে যাই, তখন পা আগে নামে। তবে নিয়মিত মায়ের ভোগের সময়, আরতি ও রাত্রে মন্দির চত্বর পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট জায়গায় ফুল ফেলা হয়। সেখান থেকে চুক্তিবদ্ধ একটি এনজিও সংস্থা ফুল তুলে নিয়ে গিয়ে সার তৈরি করে। 

    বছরের এই একটা দিনে দুপুরে মন্দির বন্ধ হয় না। কারণ, এদিন মধ্যাহ্নে মায়ের কোনও অন্নভোগ হয় না। সারাদিন মা প্যাঁড়া, ফল খেয়ে থাকেন। সন্ধ্যায় সাতটায় ফের মাকে মূল গর্ভগৃহে ফিরিয়ে আরও একবার স্নান করিয়ে সন্ধ্যারতি ও শীতলভোগ নিবেদন করা হয়। রাতে বলির পাঁঠার মাংস, মাছ, পাঁচ রকম ভাজা ও তরকারি দিয়ে মাকে অন্নভোগ দেওয়া হয়। সেই প্রসাদ খেয়ে উপবাস ভাঙেন সেবাইতরা। 

     তারাপীঠ মন্দির চত্বরে ভক্তের ঢল।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)