• মা-মেয়ে দু’জনের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতা জানাজানি হতেই নৃশংস খুন অয়ন হরিদেবপুর কাণ্ডে দাবি পুলিসের, গ্রেপ্তার মোট ৭
    বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২২
  • ‌নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শুধু বান্ধবী নয়, তাঁর মায়ের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে গড়ে উঠেছিল অয়ন মণ্ডলের। সেকথা জানাজানি হতে দেরি হয়নি। তার জেরেই নৃশংসভাবে খুন করা হয় হরিদেবপুরের যুবককে। রীতিমতো পরিকল্পনা করেই তাঁকে বান্ধবীর নতুনপল্লির বাড়িতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তের পর এমনটাই দাবি কলকাতা পুলিসের। খুনের অভিযোগে শুক্রবারই গ্রেপ্তার করা হয় অয়নের বান্ধবী প্রীতি জানা, মা রুমা জানা ও নাবালক ভাইকে। শনিবার প্রীতির বাবা দীপক জানা সহ চারজনকে পাকড়াও করেছেন তদন্তকারীরা। এনিয়ে মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিস।

    বান্ধবীর মায়ের সঙ্গে ছেলের ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অয়নের বাবা অমর মণ্ডল। তাঁর দাবি, সম্প্রতি ও এই অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। সেই কারণেই ওকে খুন করা হয়েছে। পুলিসের দাবি, এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রীতির নাবালক ভাই। সে-ই ইট ও ব্যাট দিয়ে অয়নের মাথায় আঘাত করে। তাতেই মৃত্যু হয় ২১ বছর বয়সি ওই যুবকের। নাবালক ভাইকে এব্যাপারে ইন্ধন দিয়েছিলেন প্রীতি ও তাঁর মা। লাশ কীভাবে পাচার হবে, তা অবশ্য স্থির হয় খুনের পর। সেই পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ড বান্ধবীর বাবা দীপক জানা। তাঁর কথামতো দুই বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রীতির ভাই। দশমীর রাতেই কুঁদঘাট থেকে একটি মিনিডোর ভাড়া করে নিয়ে আসে তারা। পাঁচ হাজার টাকা চেয়েছিলেন মালবাহী গাড়ির চালক সুজিত রায়। শেষমেশ দু’হাজার টাকায় রফা হয়। গভীর রাতে সেই গাড়িতেই ত্রিপলে মুড়ে অয়নের লাশ পাচারের বন্দোবস্ত হয়। কবরডাঙা, নেপালগঞ্জ হয়ে তারা যায় মগরাহাটের দিকে। এরপর মাগুরপুকুর-ঝিঙ্কিরহাট রোডের ধারে একটি পরিত্যক্ত জমিতে ফেলে দেওয়া হয় তাঁর দেহ। পুলিসের দাবি, নেপালগঞ্জে অয়নের ফোনের শেষ লোকেশন পাওয়া গিয়েছিল।

    দীপক, সুজিত ও প্রীতির ভাইয়ের দুই বন্ধুকে এদিন গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। সকালে প্রীতির ভাই ও মালবাহী গাড়ির চালককে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণে যায় হরিদেবপুর থানা পুলিস। মগরাহাট থানা এলাকায় দেহ উদ্ধারের জায়গাটি খতিয়ে দেখা হয়। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা দু’টি পাথর পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিস সূত্রে খবর। মালবাহী গাড়িটিরও ফরেন্সিক পরীক্ষা হচ্ছে।

    অন্যদিকে, কলকাতা পুলিসের বক্তব্যে খুনের ঘটনার অন্য আঙ্গিকও উঠে এসেছে। ডেপুটি কমিশনার (সাউথ ওয়েস্ট ডিভিশন) সৌম্য রায় জানিয়েছেন, দশমীর রাতে মত্ত অবস্থায় বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় অয়ন। তখন প্রীতি বাড়িতে ছিলেন না। খানিক বাদে তিনি ফিরে এলে ঝামেলা শুরু করে অয়ন। রীতিমতো ধস্তাধস্তি বেধে যায় দু’জনের। পুলিসের দাবি, প্রীতির মা বাধা দিলে তাঁকেও মারধর করেন অয়ন। ঠিক সেই সময় বাড়ি ফেরে নাবালক ভাই। পুলিসের দাবি, ওই দৃশ্য দেখে রাগের মাথায় অয়নকে পিটিয়ে খুন করে সে। 

    এদিন ধৃতদের আলিপুর আদালতে তোলা হয়। মুখ্য সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল আদালতে বলেন, ঘটনার পুনর্নির্মাণ ও খুনের উদ্দেশ্য জানার জন্য ধৃতদের হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাবকে কেন্দ্র করে তুমুল বাগবিতণ্ডা হয় এজলাসে। শেষপর্যন্ত ধৃতদের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। তদন্তকারী অফিসারকে কেস ডায়েরি আদালতে পেশ করতেও বলা হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)