• Haridevpur Case : পরিবারের অভিযোগ পেয়েও কেন গাফিলতি, সন্ধানে পুলিশ
    এই সময় | ০৯ অক্টোবর ২০২২
  • এই সময়: বাগুইআটির দুই কিশোরকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় থানা ও বিধাননগর কমিশনারেটের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ করা হয়। বাগুইআটির মতো প্রায় একই অভিযোগ উঠেছে হরিদেবপুর থানার বিরুদ্ধে। বছর একুশের অয়ন মণ্ডল নিখোঁজ হওয়ার পর বাড়ির লোকের অভিযোগকে গোড়ায় গুরুত্ব না-দেওয়া, কয়েক কিলোমিটার দূরে মগরাহাটে অজ্ঞাতপরিচয় হিসাবে অয়নের দেহ উদ্ধার হলেও তার অনেক পরে দেহ শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করার মতো অভিযোগ থানার বিরুদ্ধে।

    ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এই ঘটনাতেও অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে কি না। ডিসি (এসডব্লিউডি) সৌম্য রায় গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ছিলেন হরিদেবপুর থানায়। শনিবার পর্যন্ত কোনও পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না-হলেও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। এক মহিলা পুলিশকর্মীর নাম করেই অয়নের পরিজন অভিযোগ করেছেন। তাঁর ভূমিকাও আতসকাচের তলায়। পাশাপাশি রিজেন্ট পার্ক থানায় প্রথমে অয়নের পরিবার গেলেও সেখানে অভিযোগ না-নিয়ে হরিদেবপুর থানায় যেতে বলা হয় বলেও দাবি পরিবারের।

    অয়নের পরিজনের দাবি, বৃহস্পতিবার তাঁরা প্রথমে রিজেন্ট পার্ক থানার দ্বারস্থ হন। তারা টাওয়ার লোকেশন খতিয়ে দেখে জানায়, ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডের উদয়াচল এলাকায় টাওয়ার লোকেশন ছিল ঘটনার দিন। ওই এলাকাতেই বাড়ি প্রীতির। যেহেতু হরিদেবপুর এলাকা থেকে অয়ন নিখোঁজ হন, সেখানকার থানায় চলে যেতে বলা হয় অয়নের পরিবারকে। অয়নের জেঠু প্রশান্ত মণ্ডলের অভিযোগ, "হরিদেবপুর থানায় গেলে এক মহিলা অফিসার বলেন, আগে নিজেরা খুঁজে দেখুন কোথায় গিয়েছে। অনেকেই ঝিলপাড়ে চলে যান। সেখানে যান।" তাঁর অভিযোগ, তখন একজন পুলিশকর্মীকে তাঁদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাতে আমল দেননি কেউ। বৃহস্পতিবার রাতে জেনারেল ডায়েরি (GD) নেওয়া হয়।

    থানার গড়িমসি দেখে অয়নের পরিবার তাঁদের পরিচিত হরিদেবপুরেরই বাসিন্দা কলকাতা পুলিশের অন্য একটি থানার ওসির কাছে যান। তিনি হরিদেবপুর থানার এক অফিসারকে ফোন করেন। এর পর কিছুটা হলেও তৎপরতা বাড়ে পুলিশের। পরিচিত ওই ওসির পরামর্শে শুক্রবার দুপুর ২টো নাগাদ অয়নের পরিবার লালবাজারের মিসিং পার্সনস স্কোয়াডে যান। সেখানে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। হরিদেবপুরের ওই মহিলা অফিসারকে সরাসরি ফোন করে বিষয়টি দ্রুত দেখতে বলা হয়। লালবাজারের চার সদস্যের একটি দলও তৈরি করা হয়। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে থানা থেকে লালবাজারের ওই দলের কাছে একটি ছবি আসে। তাতে বলা হয়, আনুমানিক ২০-২২ বছরের একটি ছেলের দেহ উদ্ধার হয়েছে মগরাহাটের মাগুরপুকুর এলাকায়। সঙ্গে সঙ্গে অয়নের বাবাকে ছবিটি দেখানো হয়। তিনি শনাক্ত করেন। বৃহস্পতিবারই ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ দেহ উদ্ধার করে সব থানাকে ছবি পাঠালেও কেন দেহটি শনাক্তকরণে প্রায় ২৪ ঘণ্টা গড়িয়ে গেল, প্রশ্ন সেখানেও। পরিবারের দাবি, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদেরকেও ডেকে আনতে বলে হরিদেবপুর থানা। প্রীতি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ডেকে আনা হয়। এর পরে অয়নের পরিবারকে বসিয়ে রাখা হয় থানায়।

    Youth Missing Case: দশমীর রাতে বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে নিখোঁজ যুবক, দেহ মিলল দ্বাদশীতে

    যদিও শুক্রবার রাতে সৌম্য বলেন, "মিসিং ডায়েরি হলে পুলিশ যেমন জিজ্ঞাসাবাদ করে, কোথায় যেতে পারে, সেইরকম জিজ্ঞেস করেছিল বাড়ির লোকজনকে। তাঁদের বলা হয়নি খুঁজে দেখতে। তাঁদের সঙ্গে ছেলেটির কয়েকজন বন্ধু এসেছিলেন। তাঁরাও বলছিলেন নিখোঁজ যুবক কোথায় গিয়ে থাকতে পারেন। পরিবারকে বলা হয়েছিল, তাঁরাও চাইলে সেখানে গিয়ে দেখতে পারেন। পুলিশই গিয়েছিল খোঁজ করতে। লাস্ট লোকেশন ট্র্যাক করে নেপালগঞ্জ এলাকার খোঁজ পায় পুলিশ।" তিনি আরও যুক্তি দেন, "লালবাজারে গিয়ে ওঁরা জানতে পারেন, এমন কোনও ব্যাপার নয়। লালবাজার-থানা সবাই কোঅর্ডিনেট করেই কাজ করে। পুলিশ তার কাজ করেছে। তার পরেও যদি পুলিশের বিরুদ্ধে ওঁদের কোনও অভিযোগ থাকে, নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" অয়নের পরিবারের অভিযোগ, তাঁর হাতের দু'টি সোনার আংটি, গলার চেন এবং মোবাইল এখনও মিসিং। ছেলেকে শুধু খুনই করা হয়নি, লুটও করা হয়েছে। মানিব্যাগে থাকা আড়াই হাজার টাকাও নেই।
  • Link to this news (এই সময়)