• অনুব্রতের মেডিক্যাল রিপোর্টে ‘অবৈধ ভাবে’ সই করেছেন বিএমওএইচ? বিতর্কে সরকারি চিকিৎসক হিটলার চৌধুরী
    আনন্দবাজার | ০২ জুন ২০২৫
  • ‘অসুস্থতা’র কারণে রবিবার পুলিশের দ্বিতীয় তলবেও সাড়া দেননি বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট। চিকিৎসক তাঁকে পাঁচ দিন সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেছেন, এই মর্মে একটি মেডিক্যাল রিপোর্টও পুলিশের কাছে জমা দিয়েছিলেন অনুব্রতের আইনজীবী। কিন্তু সেই মেডিক্যাল রিপোর্টে যে চিকিৎসকের সই রয়েছে, তাঁকে নিয়েই এ বার দানা বাঁধল বিতর্ক।

    পুলিশ সূত্রে খবর, অনুব্রতের যে মেডিক্যাল রিপোর্ট তদন্তকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, সেটি শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজের। ওই মেডিক্যাল রিপোর্টে সই রয়েছে হিটলার চৌধুরী নামে এক চিকিৎসকের। ঘটনাচক্রে, রামপুরহাট ১-এর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের (বিএমওএইচ) নামও হিটলার চৌধুরী। বিতর্ক তা নিয়েই। প্রশ্ন উঠেছে, বিএমওএইচ পদে থাকা সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখছেন এবং মেডিক্যাল রিপোর্টও তৈরি করে দিচ্ছেন? তা হলে অনুব্রতের মেডিক্যাল রিপোর্ট কি ‘অবৈধ’? তবে অনুব্রতের মেডিক্যাল রিপোর্টে সই থাকা চিকিৎসক এবং রামপুরহাট ১-এর বিএমওএইচ একই ব্যক্তি কি না, সে বিষয়ে পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি।

    বিএমওএইচ হিটলারের বাড়ি মল্লারপুরে। সূত্রের খবর, চিনের একটি কলেজ থেকে মেডিক্যাল পাশ করেছিলেন তিনি। সই নিয়ে বিতর্কের পর তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। যদিও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজের কর্ণধার মলয় পিট বলেন, ‘‘বাইরে আছি। কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ এই মলয় আবার অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বলেই জেলায় পরিচিত।

    তবে বীরভূমের মুখ্য জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শোভন দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘কে কোথায় সই করেছে, আমি জানি না। আমার কাছে রিপোর্টও নেই। তবে সরকারি পদে থাকা কোনও ডাক্তারই এ ভাবে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখতে পারেন না। ভবিষ্যতে যদি আমার কাছে রিপোর্ট জমা পড়ে, আমি বিষয়টি দেখব।’’

    এ বিষয়ে অনুব্রতের আইনজীবী বিপদতারণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘উনি (অনুব্রত) অসুস্থ। আমরা তদন্তকারীদের সব রকম ভাবে সাহায্য করছি। ভবিষ্যতেও করব। পুলিশের উপর আমাদের আস্থা আছে। আস্থা আছে প্রশাসন এবং আদালতের উপরেও।’’

    অনুব্রত এবং বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারের কথোপকথনের একটি ‘অডিয়ো ক্লিপ’ বৃহস্পতিবার ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। সেখানে আইসি-কে গালিগালাজ ও কুকথা বলার অভিযোগ উঠেছিল কেষ্টর বিরুদ্ধে। পরে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ও চান কেষ্ট। একই সঙ্গে ‘চক্রান্তে’র অভিযোগও তোলেন তিনি। পুলিশও মামলা দায়ের করে তাঁকে শনিবার এসডিপিও-র (বোলপুর) দফতরে হাজিরার নোটিস পাঠায়। সেই দিন না-যাওয়ায় তাঁকে দ্বিতীয় নোটিস পাঠিয়ে রবিবার বেলা ১১টায় ফের ওই দফতরেই ডাকা হয়। কিন্তু রবিবারও হাজিরা দেননি অনুব্রত। পরিবর্তে তাঁর আইনজীবী বিপদতারণ ভট্টাচার্য, পলাশ দাস ও অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা তথা ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি’র রাজ্য সভাপতি দেবব্রত ওরফে গগন সরকার এসডিপিও-র দফতরে যান। অনুব্রত শারীরিক ভাবে ‘অসুস্থ’ ও তাঁকে পাঁচ দিন সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেছেন চিকিৎসক, এমন মেডিক্যাল রিপোর্ট অনুব্রতের আইনজীবী তদন্তকারী অফিসারকে জমা দিয়েছেন বলে জানা যায়।

    পরে জেলা পুলিশ সূ্ত্রে জানা যায়, যেহেতু অনুব্রত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাই পুলিশ এই মুহূর্তে আর কোনও নোটিস পাঠাচ্ছে না। যদি অনুব্রতের মেডিক্যাল রিপোর্টই অবৈধ প্রমাণিত হয়, তা হলে কি তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে? আপাতত সে দিকেই নজর জেলার বিভিন্ন মহলের।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)