একেনের মতো দু’একটা ছবি সাড়া ফেলে, তাতে ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ায় না, দরকার নায়ক: জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
আনন্দবাজার | ০৯ জুন ২০২৫
তিনি কি এখন বাংল ছবির ‘হিট মেকার’! টলিপাড়ার তাবড় পরিচালকরা ধরাশায়ী হয়েছেন বলেই এই গুঞ্জন। যদিও তিনি পরিচালক নাকি অভিনেতা— এখনও এই দ্বন্দ্ব রয়েছে দর্শকদের। বাংলা বাণিজ্যিক ছবির বাজারে সফল ফ্রাঞ্চাইজ়ি ‘দ্য একেন’-এর তিন নম্বর ছবি ‘বেনারসে বিভীষিকা’। মুক্তি পেয়েছিল গরমের ছুটিতে। আর তাতেই বক্স অফিসে তারকাখচিত পরিচালকদের ছবিকে পিছনে ফেলে দিয়ে তৃতীয় সপ্তাহে প্রেক্ষাগৃহ হাউসফুল। তিনি জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, দীর্ঘ কেরিয়ার। পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ বাধ্য ছাত্রের মতো কথা শুনতেন তাঁর। আনন্দবাজার ডট কমের মুখোমুখি পরিচালক।
প্রশ্ন: একেন বাবু কি একাই এই মুহূর্তে বক্স অফিস টানছে?
জয়দীপ: সেটা ঠিকই, নিজের মধ্যে ভাললাগার জায়গা তৈরি হয়েছে। আমরাই বলছিলাম, দর্শকেরা নাকি প্রেক্ষাগৃহে আসেন না আজকাল। একেন আসার পর কিন্তু সেই ভুলটা ভেঙে গিয়েছে। দর্শকদের মনের মতো কোনও গল্প দিতে পারলে তাঁরা হল ভরিয়ে দেন, এটা সত্যি। তার মানে এই নয় যে আমি বলছি একেন-ই সর্বশ্রেষ্ঠ। আসলে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে আসার জন্য প্রস্তুত। আমাদের ঠিকঠাক পণ্যটি হাতে তুলে দিতে হবে।
প্রশ্ন: বাংলা ছবির বাজারে একটা সফল ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি দাঁড় করাতে পেরে খানিক নিশ্চিন্ত লাগছে?
জয়দীপ: না, নিশ্চিন্ত বোধ করার কোনও জায়গায় নেই। যখন কোনও জিনিস দর্শকের ভাল লেগে যায়, তখন দায়িত্বও বেড়ে যায়। মানুষের মনে একটা বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছে, একেন কখনও নিরাশ করে না। সেটা অবশ্যই একটা দায়িত্ব।
প্রশ্ন: এই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির অনেকগুলি সিরিজ় রয়েছে, আবার সিনেমা হয়েছে, দর্শকেরা কি এতে খানিক বিভ্রান্ত হন না?
জয়দীপ: না বিভ্রান্তি নয়, তবে একেন-এর ছবির ঘোষণা হওয়ার পর অনেকেই জানতে চান এটা হইচই-তে কবে দেখতে পাবেন! অনেকেই ফোনের সিরিজ় দেখতে অভ্যস্ত তাই মনে করেন ওটিটি-তেই মনে হয় আগে আসবে। কিন্ত সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর এটা প্রমাণ হয়ে গেল যে, দু’টি মাধ্যমেই এটা দেখতে ভালবাসেন দর্শক।
প্রশ্ন: একেনবাবুর সঙ্গে জটায়ুর অবয়বের এত মিল, সেটা কি ভেবেচিন্তেই করা?
জয়দীপ: একেন যখন শুরু হয়, তখন কিন্তু আমি ছিলাম না। অন্য পরিচালকের হাতে একেন-এর সূচনা। সেখানে যাঁরা কাজ করেছিলেন, অনেকেই এখন আর এই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু একেনের কথা বলার ধরন, ভুল প্রবাদ বলা, কখনও বিশ্রী মজা করা— সে সব পদ্মনাভ দাশগুপ্ত ঠিক করে নিয়েছিলেন। আমি চতুর্থ সিজ়ন থেকে ঢুকেছি। একটা সময়ের পর থেকে একেনকে যেন যাপনে পেয়েছি। তার পর অনির্বাণের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। ওঁর একেনকে নিয়ে নিজস্ব ভাবনা চিন্তা ছিল। এটা বলাই যায় একেনের বর্তমান আকার আসলে আমার, অনির্বাণ আর পদ্মনাভর মস্তিষ্ক থেকেই রূপ পেয়েছে।
প্রশ্ন: গত তিন মাসে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছবিকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে একেন, পরিসংখ্যান তেমন বলছে। এ বার প্রতিযোগিতা জোরদার হবে?
জয়দীপ: (খানিক হেসে) এই প্রতিযোগিতাটা থাকা ভাল। আমার ছবি ভাল, না কি অন্যের ছবি বেশি ভাল, এই সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা দরকার।
প্রশ্ন: বক্স অফিসে রেষারেষির তো উত্তাপ আছে সেটা টের পাচ্ছেন?
জয়দীপ: সেটা নিয়ে ভাবি না। আর কী করলে ছবিটা আরও ভাল হত, সেটা ভাবি। আর ভাবি, কী দিতে পারলাম না। আমাদের খুব কম সময়ে কাজ করতে হয়। তাই ছবি মুক্তির পর বার কয়েক দেখার পর মনে হয় আর একটু রিসোর্স পেলে ছবিটা হয়তো আর একটু ভাল হত।
প্রশ্ন: একেন চরিত্রে কি অনির্বাণ চক্রবর্তীর বিকল্পহীন?
জয়দীপ: অনির্বাণ ছাড়া অন্য কাউকে একেন ভাবা সম্ভব নয়। আমি যখন এই ছবি করতে শুরু করি, তখন একেনের দুই বন্ধু বাপি আর প্রমথ বদল হয়েছে। কিন্তু একেনকে বদলানোর কথা ভাবনাতীত।
প্রশ্ন: আপনার করা সিরিজ় ওটিটিতে সফল, সিনেমা বক্স অফিসে সফল। তবু পরিচালক হিসেবে সেই মাতামাতি দেখা যায় না?
জয়দীপ: একটা ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি হিট করা মানেই যে নিজেকে বিরাট কিছু ভাবতে হবে, এমনটা নয়। কে কোন তকমা দেবে, সেটা নিয়েও ভাবি না। প্রত্যেকেই নিজের কাজটা করি। কখনও সেই কাজের ফল পাওয়া যায়। আবার কখনও ফল মেলে না, এটুকুই। আমি কোনও প্রতিযোগিতায় যেমন নেই কেউ আমার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামুন, সেটাও চাই না। আমার মনে হয়, বাংলা ছবি দর্শক দেখুক। ছবির মেধা অনুযায়ী তার ভাল খারাপ বিচার হোক।
প্রশ্ন: ছবির প্রচার বেশি হলে সুবিধে, নাকি কম প্রচারেরও হিট করানো যায়?
জয়দীপ: অবশ্যই ছবির যত প্রচার হবে সেটা নিশ্চই ভাল। আমি খুব বেশি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি না, জনসংযোগ ভাল নয়। তাই ছবির প্রচার কী ভাবে করতে হয় সেটা খুব একটা শিখে উঠতে পারিনি। এটা আমারই ব্যর্থতা।
প্রশ্ন: যাঁরা প্রচারে সিদ্ধহস্ত সেই সব পরিচালকদের থেকে কখনও কোনও টিপস্ নিয়েছেন?
জয়দীপ: না, তেমন কোনও টিপস্ নিইনি কখনও। নিলে আগেই নিতে পারতাম, এখন আর টিপ্স নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।
প্রশ্ন: একেন-কে সকলেই চেনেন, কিন্তু নেপথ্যে মানুষ পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের জায়গা দর্শক আপনাকে অভিনেতা হিসেবেই বেশি চেনেন!
জয়দীপ: আসলে দর্শক আমাকে অভিনেতা হিসেবে বেশি দেখেন বলেন। আমি সেই অর্থে ২০১৭ সালে মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি করেছি, শাবিক খানকে নিয়ে সেগুলো বাংলাদেশে হিট্। কলকাতায় ততটা প্রচার পেলে আজকে অন্য রকম হতো গল্পটা। পরে ‘এফআইআর’ ছবিটা যখন করলাম তখন অতিমারি চলছে। পরে অনেকেই বলেছেন ছবিটা ভাল। কিন্তু যখন সময় ছিল তখন তা চলেনি। কিন্তু আমি আমার কাজ করে গিয়েছে। তবে হ্যাঁ যতটা পরিচিতি পাওয়ার কথা ছিল ততটা হয়নি।
প্রশ্ন: আক্ষেপ হয় না?
জয়দীপ: নাহ্, আক্ষেপ করে লাভ নেই। যখন যেটা হওয়ার সেটা হবে। জীবনে আমি কোনও বিষয়ে বিরক্ত নই। আমি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভাবতে পারি। আমি মনে করি সাফল্য কারও তাড়াতাড়ি আসে, কারও দেরি হয়। আমি সেই দলের মধ্যে পড়ি, যাঁরা কাজ করে কিন্তু প্রচার নিয়ে মাথাব্যথা নেই। একেন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কিন্তু পরিচালককে নিয়ে কথা হয়নি।
প্রশ্ন: বলা হয় সিনেমা সবসময় পরিচালকের মাধ্যম, সৃজিত মুখোপাধ্যায় কিংবা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি বলেই প্রচারিত হয় সেই জায়গা থেকে কি খানিক পিছিয়ে আপনি?
জয়দীপ: এখন আমরা বলি তরুণ মজুমদার কিংবা তপন সিন্হার ছবি। কিন্তু সেই সময়ও পরিচালকের ছবি চলেনি। তবু, তাঁরা তাঁদের কাজ করে গিয়েছেন। এক সময় হয়তো লোকে বলবেন জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ছবি। আমি সেই অপেক্ষাটা করতে রাজি।
প্রশ্ন: দীর্ঘ কেরিয়ারে বিজ্ঞাপন থেকে থিয়েটার, টেলিভিশনে থেকে সিনেমা সবই রয়েছে, এত বছরে কী বদল দেখলেন?
জয়দীপ: ২০০০ সাল থেকে টেলিভিশনে কাজ করছি। ফাল্গুনী স্যান্যাল, দেবাংশু সেনগুপ্ত, সব্যসাচী চক্রবর্তী পরবর্তী কালে প্রভাত রায় কৌশিক গাঙ্গুলির সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। সেই সময় পরিচালকেরা আমাদের ভরসা করতেন। এখন যাঁরা ধারাবাহিক কিংবা সিনেমায় কাজ করছেন তাঁদের সেই ইচ্ছেটা নেই পরিচালক হওয়ার। তাঁরা কোনও দিন পরিচালক হবেও বলে আমার মনে হয় না। আমি সহকারী পরিচালক থেকে চিফ এডি। কৌশিক গাঙ্গুলিরর সঙ্গে অ্যাসোসিয়েট পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। উনি সময় ফ্লোরে থাকলেও আমি সামলেছি। কৌশিকদার ‘ব্রেক ফেল’ ছবিটার পুরো সিন কোরিওগ্রাফি আমার করা। দাদা শুধু মনিটারে বসে থাকতেন। তত দিনে কৌশিকদার সেই ভরসাটা এসে গিয়েছে যে জয়দীপ ভুল করবে না।
প্রশ্ন: নতুন প্রজন্মের বদল কি করোনা পরবর্তী সময় লক্ষ্য করছেন?
জয়দীপ: হ্যাঁ অতিমারির পর তো সকলেই একটা ধোঁয়াশায় ছিলাম। সিনেমা কিংবা ধারাবাহিক কত দিন চলবে তা নিয়ে ধন্দ ছিল। মানুষ ওটিটিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ কি না জানি না। অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা বলে শিল্প চেতনা তো বন্ধ হয়ে যেতে পারে না।
প্রশ্ন: এমনিতেই বলা বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে নায়ক নেই, তবে কি পরিচালকদের ভাঁড়ারেও টান পড়বে?
জয়দীপ: হ্যাঁ নায়কের তো অভাব রয়েছে। তবে পরিচালকদের ভাঁড়ারে টান সেটা বলার জায়গা আসেনি কারণ আমি নতুন প্রজন্মের পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়, সৌরভ পালোধিদের নিয়ে আশাবাদী।
প্রশ্ন: আপনারা যেই সময় টেলিভিশনে ধারাবাহিক করেছেন তখন আর এখন বিস্তর ফারাক! শহরে নাকি কেউ ধারাবাহিক দেখেন না?
জয়দীপ: এটা সবাইকে আগে বুঝতে হবে টিভি হোক কিংবা সিনেমা এটা পরিচালকের মাধ্যম। তাই জন্য তাঁকে ‘ক্যাপ্টেন অফ দ্য শিপ’ বলা হয়। এখানে গল্পের খুব বড় ভূমিকা আছে, আর ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে সেটারই অভাব। গতানুগতিক গল্প দেখিয়ে যাচ্ছে। সব থেকে বড় অস্বস্তির জায়গা টেলিভিশনের কর্তাব্যক্তিরা পরিচালকের ঘাড়ের উপর উঠে নানা পরামর্শ দিতে থাকেন। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: তা হলে এখন কী পরিচালকের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে?
জয়দীপ: খানিকটা তো তাই। পরিচালককে সেই পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। আমাদের সময় চ্যানেল ছিল বড় বড় সব কার্যনির্বাহী প্রযোজকরা ছিলেন, কিন্তু পরিচালকের স্বাধীনতা ছিল। তাঁর উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়া হত না। চারটে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্য আলাদা হবে। কিন্তু সেটা কোথাও গিয়ে তো এক ছাতার তলায় আসতে হবে নয়তো যে জগাখিচুড়ি হওয়ার কথা সেটাই হচ্ছে।
প্রশ্ন: বাংলা সিনেমা কী সত্যি নায়ক-নায়িকা শূন্য?
জয়দীপ: যদি বাণিজ্যিক ছবি তৈরি না হয় তা হলে কিন্তু চিন্তার বিষয়। আজ একেন বড় ব্যবসা দিচ্ছে। কিন্তু সেই অর্থে এটা তো বাণিজ্যিক ছবি নয়। এ রকম দু’একটা ছবি ক্লিক করে যায়। কিন্তু সারাক্ষণ এই ধরনের ছবি বানিয়ে গেলে তো চলবে না। সব দে়ড় ২ কোটি টাকার ছবি সেগুলোও চলছে না। আসলে বড় বাজেটের ছবি দরকার ইন্ডাস্ট্রিতে। যে ভাবে দক্ষিণ ভারত কাজ করে। তাঁর জন্য প্রয়োজন নায়ক। দেব, জিৎ এখন এরা কয়েক বছর টানতে পারবেন। এ ছাড়াও আবীর চট্টপাধ্যায়ের অন্য ধরনের ছবি করা উচিত। বিক্রমের উচিত বড় ক্যানভাসের ছবি করার। এদের নিয়ে নতুন করে ভাবনা চিন্তা করা দরকার। আসলে একটা সাড়ে তিন কোটির বাজেটের ছবি যখন দশ কোটি এনে দেয় সেখান থেকে একটা ছোট ছবি হয়ে যায়।
প্রশ্ন: দক্ষিণে যেমন ১০০ কোটির ছবি জলভাত, টলিউডের এতটা সাহস হতে আর কত দেরি?
জয়দীপ: দক্ষিণের দর্শক যে ভাবে তাঁদের ছবিকে যাপন করে, আমরা বাঙালিরা সেটা করি না। বাঙালিদের নিজের ভাষার প্রতি দরদটা দক্ষিণ ভারতীয়দের মতো নয়। এখানে ‘কেজিএফ’ এর বাংলা ডাবিং দারুণ চলেছে। ওখানকার দর্শক প্রেক্ষাগৃহে বাংলা ছবি মোটেও দেখবে না। ওদের ছবি দেখার ধরনটা আমাদের থেকে একদম আলাদা। তাই বলিউডকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এমনিতেই বাঙালিরা বাংলা ভাষা ভুলতে শুরু করেছে। তাঁরা ইংরাজী, হিন্দিতে স্বচ্ছন্দ্য। নিজের ভাষার প্রতি আবেগ না থাকলে সেই ভাষার ছবি চালানোও বেশ চাপের।
প্রশ্ন: আপনার জীবনের একটা অংশ জুড়ে রয়েছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ, কী শিখেছেন?
জয়দীপ: ওর থেকে যেটা শিক্ষনীয় কী করে সেটকে জীবন্ত করতে হয়। মানে একটা সেটকে বাড়ি তৈরি করে দিতে পারত। আর হচ্ছে রূপটান। কতটা কাজল দিলে একজন মহিলার চোখ সুন্দর লাগতে পারে সেটা ঋতুদার থেকে শেখা।
প্রশ্ন: আলাপটা কী ভাবে আপনাদের?
জয়দীপ: ‘গানের ওপারে’ ধারাবাহিকের সময় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বললেন ঋতুদা আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। তত দিনে ঋতুদার ধারাবাহিকের ২৪-২৫টা পর্ব লেখা শেষ। ঋতুদার মাথায় পাগড়ি, পরনে কালো পোশাক— আমাকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন চিত্রনাট্য কেমন লাগল? আমি শুনেছিলাম সবাইকে নাকি বকাবকি করেন ঠিক ঠিক উত্তর না পেলে। কিন্তু আমার যে হেতু হারানোর ভয় ছিল না তাই বলেছিলাম, এটা কেমন ‘শুভ মহুরত’ ও ‘উৎসব’ মেশানো একটা জিনিস। একবাক্য বলেন, ‘‘একদম ঠিক বলেছিস।’’ আমরা পরিকল্পনা জানতে চাইলে বলেছিলাম, তোমার লেখা দৃশ্যগুলো বড়। আর একটু ছোট হলে ভাল হয়। কারণ টেলিভিশনের দর্শকের ধরনটা আলদা। যদিও ঋতুদা বলে দিলেন, দৃশ্য ছোট করতে পারবেন না। কিন্তু ধারাবাহিক শুরু হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে টিআরপি এল ১.৯। এতটাই কম যে আবার মিটিংয়ে বসা হল। তার পর থেকে ঋতুদা ভোর ৫টায় আমাকে ফোন করতেন। আমাকে বলেছিলেন, ‘‘রোজ এই সময় ফোন করে তোকে সিন নম্বর বলব। আমি ক’পাতা লিখব তুই আমাকে বলে দিবি।’’ প্রথম ২৫টা ছাড়া বাকি সব ক’টা চিত্রনাট্য আমি যে ক’টা পাতা বলতাম ততটাই লিখতেন। পুরো ছাত্রের মতো কথা শুনতেন।
প্রশ্ন: মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন?
জয়দীপ: ভীষণ রকম সংবেদনশীল। উনি আসলে চাইতেন সকলে ওর ভিতরের মানুষটাকে বুঝুক। একদম ছেলেমানুষ ছিলেন। সেটার জন্যই নানা কিছু ভাবতে পারতেন। মারাত্মক বাংলা ভাষা ভালবাসতেন। ঋতুদার পর কৌশিকদা পর্যন্ত বাংলা ভাষাটা নিয়ে পরিচালকরা ভাবতেন। তার পর থেকে সব যেন ঘেঁটে গেল।
প্রশ্ন: ফেডারশনের সঙ্গে পরিচালকদের যে সংঘাত গত বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, তা আগে দেখা যায়নি। ফেডারশনের বাংলার সিনেমার জন্য কতটা অপরিহার্য বলে মনে করেন?
জয়দীপ: ফেডারেশন এমন একটা জায়গা যেখানে টেকিনিশিয়নদের দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলা যায়। একটা ছাতার মতো। টেকনিশিয়নদের স্বাস্থ্য থেকে তাঁদের সম্মানের দায়িত্ব নিয়েছে ফেডারশন। তাই ফেডারেশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমাদের সঙ্গে সংঘাত হয়েছে একজন পরিচালকের ছবি নিয়ে। আমাদের একটাই দাবি ছিল, কাজ বন্ধ হওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন: ফেডারেশনকে সমঝে চলাটাই কি বুদ্ধিমানের কাজ?
জয়দীপ: অনেকেরই মনে হতে পারে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে— তবে আমরা বিষয়টা দেখছি একটা সংসারে থাকলে মনোমালিন্য হয়েই থাকে। এই বিষয়টি সে ভাবে দেখাই ভাল। কাজ করতে গেলে ভুল বোঝাবুঝি হয়। পরে নিজেদের মধ্যে কথা বলে মিটিয়ে নেওয়া হয়। এ ভাবেই চলছে।
প্রশ্ন: বাংলা ছবির হিট করতে গেলে সব থেকে সহজ পথ গোয়েন্দা গল্প?
জয়দীপ: হ্যাঁ এই সময় দাঁড়িয়ে সেটা বলাই যায়। ঠিক ভাবে যদি গল্পটা বানানো যায় তা হলে গোয়েন্দা গল্পের মার নেই। কারণ বাঙালি ভালবাসে গোয়েন্দা গল্প দেখতে। লোকে গালমন্দ করতে পারে। কিন্তু বার বার কি গোয়েন্দা গল্প করে হল ভরবে?
প্রশ্ন: রাজস্থান, বেনারস তো ঘোরা হল এ বার একেনের গন্তব্য কোথায়?
জয়দীপ: আমরা পরিচালকরা তো গল্প নিয়ে যেতে পারি প্রযোজকদের কাছে। তার পর থাকে বাজেটের ব্যাপার। তবে ইচ্ছে আছে সব ঠিক থাকলে একেন রাশিয়া যেতে পারে।