ভোটার তালিকায় নাম তোলার নতুন নিয়মে ‘ঘাপলা’ দেখছেন মমতা! প্রশ্ন: নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কি এনআরসির জন্য?
আনন্দবাজার | ২৬ জুন ২০২৫
সামনেই বিহারের বিধানসভা ভোট। তার আগেই নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার সার্বিক সংশোধনের কথা জানিয়েছে। একগুচ্ছ নির্দেশিকাও জারি করেছে। কমিশনের এই পদক্ষেপ নিয়ে আপত্তি তুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, বিহার বাহানা, কমিশনের আসল নিশানা বাংলা।
কমিশন জানিয়েছে, নাগরিকত্বের সুনির্দিষ্ট পরিচয়পত্র ছাড়া ভোটার তালিকায় নাম তোলা যাবে না। এ ছাড়াও ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল না, তাঁদের জন্মস্থানের প্রামাণ্য নথি জমা করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, সকলকে ভারতীয় নাগরিকত্বের ‘সেল্ফ অ্যাটেস্টেড ডিক্লারেশন’ জমা দিতে হবে বলেও জানায় কমিশন। পাশাপাশি, কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছেন, সেই ভোটারদের জন্মতারিখ এবং জন্মস্থানের প্রমাণ্য নথি দাখিল করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে ভোটারেরা জন্ম শংসাপত্র, পাসপোর্টের মতো নথি প্রমাণ হিসাবে জমা দিতে পারবেন। ১৯৮৭ সালে ১ জুলাইয়ের পরে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের নিজের পরিচয়ের প্রমাণ্য নথির সঙ্গে বাবা-মায়েরও নথি জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বরের পরে জন্মগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।
কমিশনের এই নিয়ম নিয়ে আপত্তি তুললেন মমতা। তাঁর দাবি, বিহারের নাম করে কমিশন বাংলাকে নিশানা করতে চাইছে। কারণ বিহারে সরকারে বিজেপি। সেখানে কিছু করবে না। ওরা আসলে বাংলা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের নিশানা করছে। বিজেপি যা বলছে, কমিশন তা-ই করছে। ওরা আসলে ভয় পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কথা না-বলে নির্বাচন কমিশন কখনওই এটা করতে পারে না। আমাদের গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক দল বা নির্বাচিত সরকার কখনওই ক্রীতদাস নয়।’’ নাম না-করে কমিশনকে বিজেপির প্রচারক বলেও কটাক্ষ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
দলীয় বুথ স্তরের এজেন্টদের তথ্য চেয়ে কমিশনের চিঠি নিয়েও আপত্তি তোলেন মমতা। তৃণমূলের সর্বময়নেত্রীর প্রশ্ন, ‘‘কেন আমি আমার দলের বুথ স্তরের এজেন্টদের তথ্য দেব? আমি কেন তাঁর গোপনীয়তা জানাব?’’ একই সঙ্গে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে আহ্বান করেছেন একজোট হয়ে এই বিষয়ে আপত্তি জানাতে। মমতার কথায়, ‘‘এটা মারাত্মক।’’ তাঁর দাবি, ‘‘১৯৮৭ সালের আগে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁরা ভারতীয় নাগরিক নয়! ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়েছে। কেন ১৯৮৭ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যেকার সময়কে নিশানা করা হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।’’
মমতার প্রশ্ন, ‘‘তরুণ প্রজন্ম যাতে ভোট দিতে না পারে, সেই কারণেই কি এই নিয়ম? গরিবেরা কী ভাবে বাবা-মায়ের শংসাপত্র পাবেন? এটা কি এনআরসি? এ ভাবেই এনআরসি চালু করার চেষ্টা হচ্ছে কি? কী উদ্দেশ্য তাদের, তা পরিষ্কার করে জানাক। এটা কী হচ্ছে দেশে। আমি কমিশনকে অনুরোধ করব নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে ভোটার তালিকা সংশোধক করুক, যাতে কোনও ভোটারের নাম বাদ না পড়ে। আমাদের তাতে আপত্তি নেই।’’ মমতার অভিযোগ, রাজ্যের বাইরে লোক দিয়ে ভোটার তালিকা ভর্তি করার চেষ্টা চলছে! কমিশন কখনও বলতেই পারে না, আবার নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরি করবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে মমতার বলেন, ‘‘এতে অনেক ঘাপলা আছে, দুর্নীতি রয়েছে।’’ তৃণমূল দলীয় ভাবে কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অবস্থান জানাবে বলে জানান মমতা। একই সঙ্গে এই নিয়ে ভবিষ্যতে তৃণমূল আন্দোলনের পথেও হাঁটতে পারে বলে জানিয়ে রাখলেন তিনি।