বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে বন্দুক-গুলি ঢুকছে মালদহে! ৬ মাসে অস্ত্র আইনে গ্রেফতার ৭৫, উদ্ধার ৭১টি আগ্নেয়াস্ত্র
আনন্দবাজার | ১৫ জুলাই ২০২৫
আর কয়েক মাস পরে রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে নানা জায়গায় রাজনৈতিক নেতাদের আক্রান্ত হওয়া এমনকি, খুনের ঘটনা ঘটছে। এমতাবস্থায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে বেআইনি অস্ত্র কারবারিরাও। মালদহ জেলাতে ‘অস্ত্র ভান্ডার’ও তৈরি হয়েছে বলে ইঙ্গিত। এ নিয়ে চিন্তিত জেলার পুলিশমহল। আরও সজাগ এবং সক্রিয় হচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ছ’মাসে শুধু মালদহে অস্ত্র আইনের মামলা রুজু হয়েছে ৪১টি। তার ভিত্তিতে ৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ৭১টি আগ্নেয়াস্ত্র, যার মধ্যে অত্যাধুনিক এবং স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে। এ ছাড়া বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১৬টি ম্যাগাজিন।
পুলিশি হানায় একের পর এক বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে সরগরম মালদহের রাজনীতি। শাসক ও বিরোধী, পরস্পরের বিরুদ্ধে দুষ্কৃতী কার্যকলাপ এবং সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ তুলেছে। প্রশ্নের মুখে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। তবে মালদহ জেলার পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানাচ্ছেন, তাঁরা সজাগ এবং সক্রিয়। এলাকায় এলাকায় পুলিশের অভিযান এবং টহলদারি আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। সাফল্যও মিলেছে। তিনি বেআইনি অস্ত্র কারবারিদের গ্রেফতারির উদাহরণ টেনেছেন। জানিয়েছেন, অস্ত্র উদ্ধারেও সফল পুলিশ।
কিন্তু বিধানসভা ভোটের আগে চিন্তা বাড়াচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র পাচারচক্র। পুলিশ সূত্রেই জানা যাচ্ছে, মালদহে উদ্ধার বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের বেশির ভাগই ঢুকেছে বিহার এবং ঝাড়খণ্ড থেকে। বস্তুত, মালদহের এক দিকে বিহারের সীমানা এলাকা অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানা। তা ছাড়াও জেলায় বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত। অবস্থানগত এই ‘সুবিধা’কে কাজে লাগিয়ে বেআইনি অস্ত্র কারবারের ঘাঁটি হয়ে উঠছে মালদহ।
জেলা পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরেই মালদহে উদ্ধার হয়েছে ৭০টির বেশি বেআইনি অস্ত্র। এ ছাড়াও গুলি এবং ম্যাগাজিন তো রয়েইছে। বিবৃতি যা-ই দেওয়া হোক, বেআইনি অস্ত্রের এই রমরমা ভাবাচ্ছে জেলা পুলিশকে। আতঙ্কে জেলার ব্যবসায়ীরাও।
চলতি বছরের ২ জানুয়ারি মালদহের ইংরেজবাজারে প্রকাশ্যে গুলিতে ঝাঁঝরা হন তৃণমূলের তৎকালীন জেলা সহ-সভাপতি তথা কাউন্সিলর দুলালচন্দ্র সরকার। ওই খুনে জড়িতদের সঙ্গে বিহার-যোগ স্পষ্ট হয়েছে। জানা গিয়েছে, ভিন্রাজ্য থেকে অস্ত্র আমদানির বিষয়টিও। তার পরেও বেশ কয়েকটি অপরাধে ব্যবহার হয়েছে নানা বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র।
পুলিশের একটি সূত্রে খবর, মালদহে সবচেয়ে বেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে বৈষ্ণবনগর, কালিয়াচক, মানিকচক এবং ইংরেজবাজারে। অস্ত্র উদ্ধারে ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, বেশির ভাগ অস্ত্রের ‘আমদানিস্থল’ বিহারের মুঙ্গের। ঝাড়খণ্ডও আছে। ‘মিডলম্যান’ ও ‘ক্যারিয়ার’-এর মাধ্যমে বাংলায় ঢুকছে নাইন এমএম, সেভেন এমএম পিস্তল। এক একটি আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। সামনে ভোট। তার আগে এই কারবারি এবং দুষ্কৃতীদের ধরাই চ্যালেঞ্জ মালদহ জেলা পুলিশের।