এসএসকেএম হাসপাতালের মূল গেট দিয়ে ঢুকেই বাঁ হাতে মর্গের রাস্তায় পরপর দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুল্যান্স। এর পরে মেন বিল্ডিং ও নার্সিং কলেজের মাঝের চত্বরেও অ্যাম্বুল্যান্সের সারি। যার একটিও সরকারি নয়। এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে নাবালিকাকে ধর্ষণে ধৃত অমিত মল্লিক আদতে দালাল চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলেই তদন্তে জেনেছে পুলিশ। আর, হাসপাতালে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সের আড়ালেই দালাল চক্রের রমারমা চলে বলে অভিযোগ শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের।
শুধু এসএসকেএমই নয়। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে চত্বরে ঢুঁ মারলেই চোখে পড়ে নির্দিষ্ট এক-দুটি জায়গায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। সেগুলির সব ক’টিতে চালক বসে থাকেন, তেমনটাও নয়। এক-দুটিতে চালক থাকেন। তাঁরাই রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তা চালান।
মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এই অ্যাম্বুল্যান্সকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আগেই ছিল। এ বার জানা যাচ্ছে, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে বছরের পর বছর ধরে যে দালাল চক্রের অভিযোগ রয়েছে, তার বেশির ভাগটাই নিয়ন্ত্রিত হয় অ্যাম্বুল্যান্সের আড়াল থেকেই।
শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, সিসি ক্যামেরার নজরদারি বেড়ে যাওয়ায়, হাসপাতালের ভিতরে রোগীর আত্মীয় সেজে দালালদের ঘোরাঘুরি কমেছে। বদলে শয্যা পাওয়া কিংবা অস্ত্রোপচারের তারিখ পাওয়ার জন্য রোগীর পরিজন ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের শরণাপন্ন হন। সেখান থেকে হাসপাতালের বাইরের কোনও দোকান বা গাছতলায় থাকা দালালের কাছে পৌঁছে যান। এর পরে দর কষাকষি করে রফা হওয়ার পরে দালালের ফোন পৌঁছে যায় হাসপাতালেই কর্মরত এক শ্রেণির অস্থায়ী কর্মীর কাছে। রোগীর পরিজনকে ওই কর্মীর সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়। রোগী যাওয়ার পরে তাঁকে পরিচিত বা আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ওই কর্মী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে ভর্তির জন্য তদ্বির করেন। ভর্তি বা অস্ত্রোপচারের তারিখ মিলতেই খবর পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট দালালের কাছে। সূত্রের খবর, দালালেরা এখন হাসপাতালের ভিতর টাকার লেনদেন করে না। বদলে হাসপাতালের বাইরে নির্দিষ্ট জায়গায় রোগীর পরিজনের থেকে অনলাইনে টাকা নেওয়া হয়।
শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুল্যান্স যাতে দাঁড়িয়ে না থাকে, সে ব্যাপারে নজর রাখার জন্য বারবার পুলিশকে বলা হয়। কিন্তু তাতে কাজ হয় না। এসএসকেএম সূত্রের খবর, হাসপাতালের মেন বিল্ডিংয়ের পাশের চত্বরে দু’টি করে অ্যাম্বুল্যান্স রাখা যাবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ অধিকাংশ সময়েই মানা হয় না। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, “পুলিশকে আবারও কড়া ভাবে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।”
অন্য দিকে তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গত ২২ অক্টোবর নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত অমিতের সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অমিত ওই দিন এসএসকেএমে গিয়েছিল। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “দালালির পরিকল্পনা করেই মাঝেমধ্যে এসএসকেএমে আসত আমিত। ওই দিনও সেই কারণেই এসেছিল। কিন্তু নাবালিকাকে ধর্ষণের নেপথ্যে কোনও পূর্ব পরিকল্পনা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” চলতি সপ্তাহেই অমিতকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নিমাণের পরিকল্পনারয়েছে পুলিশের।