হামাগুড়ি দিয়ে টেস্ট জয় ভারতের, কিন্তু ৪ বিপজ্জনক প্রশ্ন তুলে দিল বাংলাদেশ
হিন্দুস্তান টাইমস | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২
জেতার কথা ছিল। জিতলও। কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজে ভারতীয় টেস্ট দল নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠে গেল। দ্বিতীয় টেস্টে মীরপুরে ভারত নাকানি-চোবানি খাইয়ে সেই প্রশ্নগুলি তুলে দিয়ে গেল বাংলাদেশ।
মীরপুরের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের ১৪৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খেলতে নেমে একটা সময় ভারতের স্কোর সাত উইকেটে ৭১ রান হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৬২ বলে অপরাজিত ৪২ রান) এবং শ্রেয়স আইয়ার (৪৬ বলে অপরাজিত ২৯ রান) তিন উইকেটে ভারতকে ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের লড়াইয়ে ভারতকে টিকিয়ে রাখলেন। তবে যে প্রশ্নগুলি উঠে গেল, তা দেখে নিন -
১) ভারতের টপ ফোরের ব্যর্থতা: ২০২০ সালের গোড়া থেকে টেস্টে ভারতের প্রথম চার ব্যাটারের গড় হল ৩১.৫৮। যা শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের থেকে ভালো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভারতের টপ অর্ডারের ব্যর্থতা ঢেকে গিয়েছে ঋষভ পন্ত, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিনদের সৌজন্যে। কখনও পন্ত গুরুত্বপূর্ণ শতরান করেছেন। কখনও জাদেজা-অশ্বিন দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন।
কিন্তু সবসময় যে পন্ত (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে তাঁর ৯৩ রানের ইনিংসের সৌজন্যেই চাপ কাটিয়ে বেরোতে পেরেছিল ভারত) রান করবেন এবং টপ ফোর হাতে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, সেভাবেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠবে, সেটা ভাবা অবশ্যই ঠিক নয়। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে ২০২০ সালের শুরু থেকে বিরাট কোহলির গড় ২০-র ঘরে আছে। চেতেশ্বর পূজারার গড় ৩০-র গড়ে। একমাত্র রোহিত শর্মার গড় ৪০-র ঘরে থাকলেও চোটের জন্য অনেক ম্যাচে খেলেননি।
২) সাফল্যের রেসিপি পরিবর্তন ভারতীয় বোলিংয়ের: একটা সময় ভারত যখন টেস্ট ক্রিকেটের উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছিল, তখন যেভাবে সাফল্য পাচ্ছিল ভারতীয় বোলিং লাইন-আপ, এখন সেটা পরিবর্তন হয়েছে। আগে ভারতীয় বোলাররা বিপক্ষের টুঁটি এমনভাবে চেপে ধরত, যে সেখান থেকে বেরোতে পারত না। চাপের মধ্যে প্রতিপক্ষ দল কোনও জুটি গড়ে তুললে সহজে রান আদায় করতে পারত না। ভারতীয়রা ভালো বোলিং করার উপর জোর দেওয়ায় চাপে থাকতেন প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা।
কিন্তু এখন সেটাই আমূল পালটে গিয়েছে। দীর্ঘক্ষণ ধরে ভালো বোলিংয়ের পরিবর্তে কম সময় সাফল্যের দিকে ছুটছেন ভারতীয় বোলাররা। সেই ম্যাজিক বল করতে গিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন। তাতে বিপক্ষের ব্যাটাররা বাউন্ডারি মারার বল পেয়ে যাচ্ছেন। তাতে তাঁদের উপর থেকে চাপ কমে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে যে চাপ তৈরি করছে ভারত, রানরেট নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সেটাই টিম ইন্ডিয়ার উপর এসে চাপছে।
চলতি বছরের শুরুতেই যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২৩৯ রানের পুঁজি রক্ষা করতে পারেনি ভারত। তারপর ২১১ রানের পুঁজি রক্ষা করতে পারেনি। দুটি ম্যাচে ৬০ ওভারের আশপাশে ম্যাচ শেষ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। একইভাবে এজবাস্টনে ৭৬.৪ ওভারে প্রায় ৩৮০ রান তাড়া করে জিতেছিল ইংল্যান্ড। ওভারপিছু প্রায় পাঁচ রান খরচ করেছিলেন ভারতীয় বোলাররা। অথচ ২০২১ সালের অগস্টে ৬০ ওভারের মধ্যে ইংল্যান্ডকে অল-আউট করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ৫২ তম ওভারেই ম্যাচ জিতে গিয়েছিল ভারত।
এবার মীরপুরেও ভারতের বোলিংয়ের ক্ষেত্রে সেই একই রোগ ধরা পড়েছে। প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানের লিডের সুবাদে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে শাকিব আল হাসানদের স্কোর একটা সময় কার্যত ২৬ রানে ছয় উইকেট ছিল। সেখান থেকে ভারতের সামনে ১৪৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা খাড়া করে দেয় বাংলাদেশ। সেটার জন্য বিরাট কোহলি (একাধিক ক্যাচ ফস্কেছেন) দায়ী হলেও ভারতীয় বোলাররাও উলটো-পালটা বল করেছেন। যেমন ফিল্ডিং আছে, সেরকম বল করেননি। বাংলাদেশের যে দুটি জুটি ভারতকে চাপে ফেলে দিয়েছিল, সেই দুটি জুটি তো ওভারপিছু পাঁচের বেশি রান তুলেছিল।
৩) টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব: রোহিত যেভাবে চোট পাচ্ছেন, তাতে তিন ফর্ম্যাটে আদৌও কতটা ভারতকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন, তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে। বিশেষত বিরাটের আমলে ভারতীয় টেস্ট দলকে দেখার পর রোহিত-যুগে অনেক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু চোটের কারণে তিনি নেতৃত্ব দিতে না পারার ফলে কেএল রাহুলকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁর কাছে যে কোন প্ল্যান বি থাকে না, তা একাধিকবার দেখা গিয়েছে।
৪) রাহুল দ্রাবিড়ের কোচিং: দুর্বলতম দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার, রবি শাস্ত্রীর গড়ে যাওয়া ইতিহাসের রাস্তায় নেমে মুখ থুবড়ে, বাংলাদেশেকে হারাতে গিয়ে নাকানিচোবানি - রাহুল দ্রাবিড়ের আমলে ভারতের টেস্ট দলের পারফরম্যান্স যে আহামরি নয়, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অথচ শাস্ত্রীর আমলে কার্যত তৃতীয় সারির দল নিয়ে পূর্ণশক্তির অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাঠে হারিয়ে এসেছিল ভারত। শাস্ত্রীর আমলে ভারতীয়দের মধ্যে যে শারীরিক ভাষা ফুটে উঠত, তা অনেকটা উধাও হয়ে গিয়েছে।