• Kolkata Regal Cinema Hall : বন্ধ হচ্ছে ধর্মতলার আইকনিক রিগাল সিনেমা হল? মুখ খুললেন মালিক
    এই সময় | ০৩ জানুয়ারি ২০২৩
  • শুরুটা হয়েছিল সেই চ্যাপলিন থেকে। তারপর একের পর এক টাইগার, লাইটহাউস, প্যারাডাউস, এলিট, মেট্রো, হিন্দ, লোটাস, জ্যোতি, ক্রাউন, নিউ সিনেমা, ওপেরা শো হাউস, ম্যাজেস্টিক। আর্থিক সংকটে জেরবার হয়ে তালা পড়েছে কলকাতার একের পর এক সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমাহলে। এবার জল্পনা শুরু হয়েছিল ধর্মতলার বহু পুরনো এবং বিখ্যাত রিগাল সিনেমাহলকে ঘিরে। তবে কি এবার ঝাঁপ বন্ধ হবে এই আইকনিক সিঙ্গল স্ক্রিনেরও। তবে অনিশ্চয়তার এই গুঞ্জনের মাঝেই আশার আলো দেখালেন সিনেমাহলের মালিক।

    বন্ধ হচ্ছে না রিগাল সিনেমাহল

    আর পাঁচটা সিঙ্গল স্ক্রিনের মতো পরিণতি হবে না ধর্মতলার রিগাল সিনেমাহলের। সিনেপ্রেমীদের স্বস্তি দিয়ে রিগাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সংস্কার করা হচ্ছে সিনেমাহলটির। আগামী ইদেই নতুন করে আত্মপ্রকাশ ঘটবে রিগালের। টাইম অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন এই সিঙ্গল স্ক্রিনের মালিক। মেট্রো সিনেমাহলের ন্যয় এই সিঙ্গল স্ক্রিন শপিং মলে পরিণত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছিলেন শহরের পুরনো ফিল্মবাফরা।

    রিগাল সিনেমাহলের ইতিহাস

    ১৯৩২ সালের পথ চলা শুরু করেছিলেন কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত এই সিঙ্গল স্ক্রিন হল। ১৯ শতকে এই সিনেমাহল পরিচিত ছিল ইলেকট্রিক থিয়েটার নামে। পরবর্তীতে নাম হয় অ্যালবিয়ন। ১৯১৫ সালে এই থিয়েটারের ক্ষমতার হস্তান্তর হয় মদনদের কাছে। লেখক কালিপ্রসন্ন সিংঘের ছেলে বিজয়ের নাম অনুযায়ী এই হলের নামকরণ হয় বিজু থিয়েটার। ১৯৩২ সালে নাম বদলে হয় রিগাল। ১৯৬২ সালে বাগারিয়া পরিবার এই সিনেমাহলের দায়িত্ব গ্রহণ করে। সে সময় আসন ছিল ৫৭৫টি। ১৯৬৮ সালে 'শিখর' নামে সুপারহিট ছবিটি আসে এই হলে। ৭৫ সপ্তাহ রমরমিয়ে চলেছিল এই ছবির শো। এরপর রিগালে আসে একে একে 'হাতি মেরে সাথি' (১৯৭১), 'জয় সন্তোষি মা' (১৯৭৫)।

    একই এলাকায় বহু সিনেমাহল থাকায়, বরাবরই প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে রিগালের মালিকদের। আর সে কারণেই তাঁরা একটি বিশেষ স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করে। রিগালে একটানা দেখানো হত মাইথোলজিক্যাল সিনেমা। সঙ্গে চলত দ্বিতীয়বারের জন্য হলে আসা পুরনো হিন্দি সিনেমাগুলি। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত 'অ্যাডাল্ট ছবি' দেখানো হত রিগালে। তবে এই সিদ্ধান্ত রিগালের জনপ্রিয়তা খর্ব করে। রিগালের মতো ঐতিহ্যপূর্ণ হলকে 'খারাপ সিনেমা' কিংবা 'প্রাপ্তবয়স্ক ছবি'-র হল হিসেবে তকমা দেওয়া শুরু হয়। ২০০৪ সাল থেকে রিগালে বাংলা ছবি দেখানো শুরু হল।

    সাক্ষাৎকারে রিগালের মালিক রাজেন্দ্র বাগারিয়া বলেন, "কোভিডের আগে আমরা বাংলা ছবি দেখানো শুরু করি। হিন্দি সিনেমাও এক থেকে দু'সপ্তাহ পর্যন্ত চলত। ছবি মুক্তির বেশ কিছুদিন পরেই হলে আসত সিনেমাগুলি। কিন্তু, মহামারীর জেরে হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। এটি অত্যন্ত পুরনো একটি সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমা হল। এর সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। ছাদ ফুটো হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টির সময় ছাদ থেকে জল পড়ে।" সংস্কার হলেও যদিও ভোল পালটাতে নারাজ রাজেন্দ্র বাগারিয়া। তিনি বলেন, "খুব অল্প সংখ্যক মানুষই রয়েছেন, যারা পরিকাঠামো এক রেখে সংস্কার করতে পারবেন। এমনই একজনকে দিয়ে এই সংস্কারের কাজ করানো হচ্ছে। রিগালের ঐতিহ্য বজায় রেখেই কিছুটা বদল আনা হবে।"

    ইদে নয়া লুক পাবে রিগাল

    সংস্কার হলেও সিঙ্গল থেকে ডবল স্ক্রিনে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই রিগালের মালিকের। তিনি চাইছেন আমূল সংস্কার হলেও ঐতিহ্য বজায় থাকুক এই সিঙ্গল স্ক্রিন হলটির। আগামী ইদেই এই হল পুনরায় দর্শকদের জন্য উদ্বোধন করা হবে। বাংলার পাশাপাশি প্যান ইন্ডিয়ান ছবিও দেখানো হতে পারে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটতে চলা রিগালে। এখন থেকেই উচ্ছ্বসিত শহরের আদি ফিল্মবাফরা।
  • Link to this news (এই সময়)