• কুলিক পক্ষীনিবাস ও সংলগ্ন জঙ্গলে পিকনিক নিষিদ্ধ, খুশি প্রকৃতিপ্রেমীরা
    বর্তমান | ০৩ জানুয়ারি ২০২৩
  • সংবাদদাতা, রায়গঞ্জ: বনদপ্তরের নির্দেশে উত্তর দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় কুলিক পিকনিক স্পটে এখন পিকনিক করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ হওয়ায় খুশি পরিবেশপ্রেমীরা। করোনার সময় থেকেই এশীয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই পক্ষীনিবাসের সংরক্ষিত এলাকা ও সংলগ্ন এরিয়াতে পিকনিক করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে বনদপ্তর। গত বছরও কুলিক ফরেস্ট  সংলগ্ন শিয়ালমনি জঙ্গলে কিছু পিকনিক পার্টির আনাগোনা দেখা গেলেও এবার প্রশাসনের নির্দেশে তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এব্যাপারে ইতিমধ্যেই বনদপ্তরের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত পোস্টার টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

    এনিয়ে বনভোজনে উৎসাহী মানুষদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিলেও  প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে খুশি জেলার পশু ও পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি। তাদের বক্তব্য, পরিবেশ রক্ষার্থে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। বিগত দিনে পিকনিক করতে আসা লোকজন পরিবেশের বিন্দুমাত্র খেয়াল করেননি।  প্লাস্টিকের প্যাকেট, থার্মোকলের থালা, বাটি, গ্লাস পিকনিক স্পটেই যত্রতত্র ফেলে দিয়ে চলে যেতেন। এর ফলে দূষণ বাড়ত পক্ষী নিবাসে। তার উপর ছিল উচ্চস্বরে ডিজে বাজানোর হিড়িক। এসব কারণে পুলিস,  পরিবেশপ্রেমী ও বনদপ্তর কর্মীদের সঙ্গে গণ্ডগোল লেগেই থাকত পিকনিক পার্টির সদস্যদের। 

    উত্তর দিনাজপুরের জেলা সদর রায়গঞ্জ শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ৩০০ একর জমি জুড়ে রয়েছে কুলিক পক্ষী নিবাস। প্রতি বছর জুন মাস থেকে এখানে প্রচুর সংখ্যক পরিযায়ী পাখি এসে ভিড় জমায়।  যাদের দেখতে বহু দূরদূরান্তের মানুষ আসে। অন্যদিকে, ইংরেজি বছরের শেষ দিকে শীত জাঁকিয়ে পড়তেই বনভোজনে উৎসাহী মানুষদের ভিড় বাড়তে থাকে। কিন্তু এবার পিকনিক স্পট হিসেবে কুলিক ফরেস্টকে আর বেছে নিতে পারছেন না বনভোজনে উৎসাহীরা। অথচ কয়েক বছর আগেও কুলিক ফরেস্টের মনিপাড়া এলাকায় বনদপ্তরের পক্ষ থেকে তৈরি করে দেওয়া পিকনিক স্পটে মানুষের ঢল লক্ষ্য করা যেত। কিন্তু এখন ওই  পিকনিক স্পটে তৈরি করা কংক্রিটের চাতাল, বসার জায়গা, শৌচাগার সহ  অন্যান্য নির্মাণ দীর্ঘ অব্যবহারের ফলে নষ্ট হতে বসেছে। অন্যদিকে, পিকনিক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মন খারাপ স্থানীয় মনিপাড়া এলাকার বাসিন্দাদেরও। তাঁরা বলেন, পিকনিক পার্টিরা এখানে এলে তাদের কাজকর্ম করে দেওয়া ছাড়াও অস্থায়ী সাইকেল স্ট্যান্ড, চা - পানের দোকান করেও ভালো আয় করা যেত। যা এখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। 

    এব্যাপারে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মনু মণ্ডল বলেন, বন কমিটি তৈরি করে এখানে পিকনিকের আয়োজন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বনদপ্তরের পক্ষ থেকে। স্থানীয় মানুষদের এর ফলে কিছু আয় হতো। যদিও  এব্যাপারে রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক দাওয়া সাংমা শেরপা বলেন, ফরেস্টের সংরক্ষিত এলাকা ও তার আশেপাশের এলাকায় পিকনিক করা পুরোপুরি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সকলের স্বার্থে পক্ষী নিবাসকে বাঁচিয়ে রেখে একটু দুরের কোনও এলাকাকে চিহ্নিত করে পিকনিক স্পট গড়ে তোলা যায় কিনা, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

     নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)