নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের ২১৫টি পঞ্চায়েতের প্রধান বা উপপ্রধান বিগত পাঁচ বছরে কী কাজ করেছেন, তা রাজ্য নেতৃত্বের হাতের তালুতে রয়েছে। পাঁচ বছরে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের জনসংযোগ কেমন ছিল, সেই তথ্যও তারা জেনে গিয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা এই কয়েক বছরে কতটা বিতর্কে জড়িয়েছেন, রাজ্য নেতৃত্বের কাছে রয়েছে সেই তথ্যও। পঞ্চায়েত ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ার আগেই এই সমস্ত তথ্য নিদির্ষ্ট একটি সংস্থার মাধ্যমে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব জোগাড় করেছে। দলীয় সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। ‘নতুন’ তৃণমূলে বিতর্কিত বা দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের ঠাঁই নেই বলে রাজ্য নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে। ‘দাদা-দিদি’ ধরে এবার আর কাজ হবে না। সেই কারণেই বহু বিতর্কিত জনপ্রতিনিধি টিকিট পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।
তৃণমূল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, প্রায় দেড় মাস আগে নির্দিষ্ট একটি সংস্থার কর্মীরা ময়দানে নেমেছিলেন। তাঁরা প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া নিজেরা এলাকায় গিয়ে তথ্য জোগাড় করেছেন। ফোনের মাধ্যমেও তাঁরা জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তথ্য হাতে থাকার জন্যই বিতর্কিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে জেলা সফরে গিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলার জনপ্রতিনিধিদের ‘ডিটেলস’ও শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে রয়েছে।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানে বহু জনপ্রতিনিধি এই কয়েক বছরে বিতর্কে জড়িয়েছেন। গলসির দু’টি ব্লকে কয়েকজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে জমি কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আউশগ্রামের দু’টি ব্লকের কয়েকজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে বালির ঘাটে দাদাগিরি ও সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগ মঙ্গলকোট, জামালপুর, কেতুগ্রাম, খণ্ডঘোষ ও রায়নায় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে রয়েছে। জেলা পরিষদের কয়েকজন সদস্যর বিরুদ্ধে এলাকায় না যাওয়ার অভিযোগ আছে। এই সমস্ত অভিযোগগুলি নির্দিষ্ট ওই সংস্থার কর্মীদের কানেও আসে। পরে সেই তথ্য তারা যাচাই করে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে, তাঁদের নামে রিপোর্ট করা হয়েছে। সমস্ত ব্লকেই বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন মুখ তুলে আনা হতে পারে। তবে এই জেলার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি রাজ্য নেতৃত্বের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
মেমারি-২ ব্লকের এক পঞ্চায়েত প্রধান পরিচারিকার কাজ করেন। পদে বসলেও তিনি পেশা বদলাননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুরের সভায় ওই প্রধানের প্রশংসা করেন। এরকমই জনপ্রতিনিধি চান বলে তিনি জানিয়েছিলেন। তৃণমূলের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, দল সবার উপরেই নজর রেখেছেন। যাঁরা ভালো কাজ করেছেন, দল নিশ্চয়ই তাঁদের কথা ভাববে। যাঁরা দুনীর্তি করে দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করেছেন, তাঁদের জায়গা হবে না। অসৎ ব্যক্তিরা আগামী দিনে দলে ঠাঁই পাবে না।