• আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল আত্মঘাতী নাবালিকা উত্তাল মেদিনীপুর, বিক্ষোভ, ধৃত যুবক
    বর্তমান | ০৩ জানুয়ারি ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: নাবালিকাকে ভুল বুঝিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও রেকর্ড করে রেখেছিল যুবক। সেই ছবি দেখিয়েই দিনের পর দিন নাবালিকাকে ব্ল্যাকমেল করত। সেই মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল মেদিনীপুর শহরের বছর সতেরোর এক নাবালিকা। ওই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানোর পরেও পুলিস কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন নাবালিকার পরিজনরা। রবিবার রাতে সুমিত খান নামে অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করেছে মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার পুলিস। ওই যুবক প্রথম বর্ষের ছাত্র। 

    পুলিস সুত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ শহরের মির্জাবাজারে বাড়িতেই ওই নাবালিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের সদস্যদের দাবি, কয়েকমাস ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিল সে। বাড়িতে মন খারাপ করে বসে থাকত। খুব একটা কথা বলত না। স্কুল বা টিউশনি থেকে ফিরে মাঝেমধ্যেই কান্নাকাটি করত। তবে কেন কাঁদছে, তা নিয়ে কাউকেই কিছু বলত না। গত ২৬ ডিসেম্বর সকালে টিউশনি পড়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয় ওই নাবালিকা। দুপুর হয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে পরিবার। এরপর বিকেলের দিকে হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফেরে নাবালিকা। কিন্তু বাড়ির কারও সঙ্গে কথা বলেনি। পরের দিন বিকেল ৪টের দিকে নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় সে। বাড়ির লোক অনেক ডাকাডাকি করার পরেও কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ভাঙেন। দরজা ভাঙতেই দেখেন, গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলছে নাবালিকা। বিছানার উপর রাখা ছিল নাবালিকার ফোন। তা খুলতেই আত্মহত্যার কারণ স্পষ্ট হয়ে যায় পরিবারের কাছে। 

    নাবালিকার বন্ধুবান্ধব ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নাবালিকার সঙ্গে যুবকের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই যুবক মাঝেমধ্যেই নাবালিকার উপর শারীরিক অত্যাচার করত। এমনকী প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানিও করেছে বলে অভিযোগ। সেই কারণেই নাবালিকা সবসময় মনমরা হয়ে থাকত। নাবালিকার বাবার অভিযোগ, গত ২৬ ডিসেম্বর সকালে মেয়েকে ভুল বুঝিয়ে বেড়াতে নিয়ে যায় ওই যুবক। সেখানেই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও রেকর্ড করে। তারপর সেই ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করতে থাকে। মানসম্মানের কথা ভেবে নাবালিকা ভয়ে বাড়িতেও কিছু বলতে পারেনি। মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। 

    গত ২৯ ডিসেম্বর যুবকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে নাবালিকার পরিবার। কিন্তু অভিযোগ পেয়ে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় থানা পর্যন্ত মোমবাতি নিয়ে মৌন মিছিল করেন এলাকার বাসিন্দারা। মিছিল থানার সামনে পৌঁছতেই পুলিসের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। অভিযুক্তের গ্রেপ্তারির দাবিতে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে বিক্ষোভ। পুলিস যুবককে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে। ওই রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে সোমবার আদালতে তোলা হয়। বিচারক ধৃতের পাঁচদিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)