• Joka Taratala Metro : স্টেশনের বাইরেই গোটা রাত! জোকাতেও প্রথম যাত্রী প্রভাত
    এই সময় | ০৩ জানুয়ারি ২০২৩
  • এই সময়: 'প্রথম যাত্রী আমিই। শিয়ালদহ-ফুলবাগান মেট্রোয় প্রথম চড়েছি। জোকা-তারাতলার মেট্রোতেও আমিই প্রথম চড়ব!' সোমবার সকালে তখনও গেট খোলেনি জোকা মেট্রো স্টেশনের। ডি গেটের কাছে কেউ উঁকি-ঝুঁকি দিলেই তিনি এগিয়ে গিয়ে নিজের সম্পর্কে এই কথাগুলো জানিয়ে দিচ্ছিলেন দরাজ গলায়। তিনি, পেশায় শিক্ষক, বছর একচল্লিশের প্রভাতকুমার চট্টোপাধ্যায়। প্রথম যাত্রীর খেতাব যাতে হাতছাড়া না-হয়, তার জন্য বেলঘড়িয়ার নন্দননগরের বাড়ি থেকে রবিবারেই রাত ৮টার মধ্যে জোকায় পৌঁছে যান। তারপরে জোকার মেট্রো গেটের সামনেই ঠাণ্ডায় সারারাত কাটান! সোমবার সকাল সাড়ে ন'টা নাগাদ জোকা মেট্রো স্টেশনে ঢুকে প্রথম টোকেন কেনেন প্রভাত। উপস্থিত মেট্রো কর্তারা টিকিট কাউন্টারের সামনেই তাঁর হাতে উপহার এবং গোলাপ তুলে দেন। প্রভাতের কথায়, 'শিয়ালদহ-ফুলবাগান রুটে প্রথম যাত্রী হতে পেরে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। তারপরেই জোকা-তারাতলা মেট্রোতেও প্রথম যাত্রীর আসন পাকা করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।'

    দ্বিতীয় যাত্রী হিসেবে মেট্রো গেটে সকাল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে হাজির হয়ে যান বছর বাহাত্তরের অমরেন্দ্র গোস্বামী। তিনি জোকা দুই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন। তাঁর কথায়, 'লোকে বলছে বারো বছর। এই পরিকল্পনা ১৯৮৪ সালের। যাদবপুরের সাংসদ হওয়ার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের বলেছিলেন জোকায় মেট্রো লাইন হবে। আমরা গ্রামবাসীরা ওঁর কাছে সেই সময়ে আবদার করেছিলাম টালিগঞ্জ থেকে একটি মেট্রোর লাইন এখানে নিয়ে আসার জন্য। বেঁচে থাকতেই সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে পারলাম। তাই আজ খুব ভালো লাগছে।' আর এক যাত্রী, জোকার নবপল্লির বাসিন্দা সরশুনা কলেজের পড়ুয়া বছর একুশের সায়ক রায় বলেন, 'মেট্রো অনেক চড়েছি। তবে নিজের ঘরের সামনে থেকেই মেট্রোতে চাপা, আবার প্রথম যাত্রার সাক্ষী, এর অনুভূতিই আলাদা।'

    ভোর পাঁচটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে, তারপরে যাত্রা বিভ্রাটের জন্য প্রথম দিনের প্রথম যাত্রায় যাত্রী হিসেবে যে প্রথম তিনজনের মধ্যে থাকা হবে না তা রাস্তাতেই টের পেয়েছিলেন বাগবাজারের বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের উষ্ণীব দত্ত। জোকায় পৌঁছাতে-পৌঁছাতে তাঁর পৌনে ৮টা বেজে যায়। একই সময়ে এসে পৌঁছান বাঘাযতীনের ডি ব্লকের বাসিন্দা সব্যসাচী দেব, অতনু সাহা। এরপরে উষ্ণীবের সঙ্গে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে তাঁদের বচসা বাধে। কে চতুর্থ স্থানে দাঁড়াবেন তা নিয়ে বচসা বেধে যায় মোট্রো স্টেশনের প্রবেশ দ্বারের সিঁড়িতে। শেষমেষ মেট্রো কর্তাদের হস্তক্ষেপে সমস্যার সামধান হয়। উষ্ণীব দাঁড়াতে পারেন পাঁচজন যাত্রীর পরে। তাঁর কথায়,'আক্ষেপ নেই। প্রথম যাত্রার সাক্ষী তো হতে পারব, সেটাই আমার কাছে অনেক।'

    অতিথি যাত্রী হিসেবে ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং সঙ্গীত শিল্পী রূপঙ্কর বাগচী। শিবপ্রসাদের কথায়, 'কলকাতার প্রথম মেট্রো চলাচলের দিনটি আমাদের স্মৃতিতে আবছা হয়ে গিয়েছে। সেই হিসেবে আমরা একটি ইতিহাসের সাক্ষী রইলাম।' তবে প্রথম দিনেই খুচরো বিভ্রাটে পড়েন যাত্রীরা। জোকা স্টেশন থেকে বেরোনোর সময়ে স্বয়ংক্রিয় গেটে আটকে যায় এক যাত্রীর টোকেন। পিছনে দাঁড়িয়ে পড়েন বেশ কিছু যাত্রী। শৌর্য বসু নামে এক যাত্রী জানান, একটি টোকেন আটকে গিয়ে বিভ্রাট হয়েছিল। কিন্তু কর্তব্যরত মেট্রো কর্মীরা দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেন। এদিন ঠাকুরপুকুর, রায়পুর, বাখরাহাট, নোদাখালি থেকে বহু বাবা-মা তাঁদের সন্তান এবং দাদু- ঠাকুমা তাঁদের নাতি-নাতনিদের জোকা স্টেশনে নিয়ে আসেন। তাঁদেরই একজন ক্লাস ফোরের পড়ুয়া তমোঘ্ন পাল। তাঁর কথায়, 'বাড়ির বারান্দা থেকে ট্রায়াল রান দেখেছি। আজ সেই ট্রেন চড়ব ভেবেই মজা লাগছে।'
  • Link to this news (এই সময়)