• Bird Flu : দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বার্ড ফ্লু-র টিকা মিলবে অচিরেই
    এই সময় | ০৩ জানুয়ারি ২০২৩
  • অনির্বাণ ঘোষ

    কালিংয়ের ছবি কি তা হলে অতীত হতে চলেছে! এ বার দেশীয় টিকায় রাশ টানা যাবে বার্ড ফ্লু-তে! বাঁচবে লক্ষ লক্ষ হাঁস-মুরগি। শুরু হয়ে গেল তার প্রাথমিক প্রস্তুতি। বার্ড ফ্লু বা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার দাপটে প্রতি বছরই দেশে লক্ষ লক্ষ হাঁস-মুরগি-টার্কিকে কালিংয়ের বলি হতে হয়। এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয় পোলট্রি বাজারের। মূলত কোপ পড়ে মুরগির সরবরাহে। পাশাপাশি থাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাও। সেই সমস্যার নিরসনে এ বার কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রক হাঁটতে চায় টিকাকরণের পথে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কৃষি গবেষণা সংস্থার উদ্যোগে তৈরি একটি টিকার প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হয়েছে বেসরকারি চারটি সংস্থাকে। তারাও মিলিত ভাবে তৈরি করবে ওই টিকা। ফলে, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম বার্ড ফ্লু-র ভ্যাকসিন অচিরেই আসতে চলেছে বাজারে।

    কিছু দিন আগে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগরিকালচারাল রিসার্চের (আইসিএআর) অধীন কেন্দ্রীয় সংস্থা ভোপালের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হাই সিকিউরিটি অ্যানিম্যাল ডিজ়িজ় (নিসাদ) বার্ড ফ্লু-র একটি টিকা তৈরি করেছে। ইনফ্লুয়েঞ্জার নিষ্ক্রিয় এইচ-নাইন এন-টু স্ট্রেন দিয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় পন্থায় তৈরি হয়েছে টিকাটি। সম্প্রতি একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের উপস্থিতিতে সেই টিকা তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হয়েছে সেকেন্দরাবাদের গ্লোবিওন, পুনের ভেঙ্কটেশ্বরা হেলথকেয়ার, গুরুগ্রামের ইন্ডোভ্যাক্স এবং আমেদাবাদের হেস্টার বায়োসায়েন্স নামে চারটি বেসরকারি সংস্থাকে। দিল্লির অ্যাগ্রিনোভেট নামে একটি সংস্থার সহায়তায় ওই চারটি সংস্থা মিলে বাজারজাত করবে বার্ড ফ্লু-র টিকা।

    নয়া এই টিকা যে সংস্থার বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন, সেই কেন্দ্রীয় সংস্থা নিসাদ-এর অধিকর্তা অনিকেত সান্যাল জানান, টিকাটি বাজারজাত হয়ে গেলে তা দেশীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানির জন্য বিদেশেও পাঠানো হবে এবং এতে আখেরে লাভ বাড়বে পোলট্রি মালিকদের। তিনি বলেন, 'বার্ড ফ্লুর- হাই প্যাথোজেনিক স্ট্রেনগুলির দাপট এ দেশে বড় একটা দেখা যায় না। সেই জন্যই মানুষ অনেক বেশি সুরক্ষিত। কিন্তু লো প্যাথোজেনিক স্ট্রেন এইচ-নাইন এন-টু-তে সংক্রামিত হয়ে প্রচুর মুরগিকে হয় সরাসরি মরতে হয়, না-হয় কালিং করা হয়। এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয় পোলট্রি মালিকের।' অনিকেতের বক্তব্য, 'এবার সবাই সেই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে। কেন্দ্রীয় সরকার ব্রুসেলার মতোই বার্ড ফ্লু টিকাকরণ শুরু করবে অচিরে।'

    ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানাচ্ছেন, এইচ-নাইন এন-টু ইন-অ্যাক্টিভেটেড লো প্যাথোজেনিক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হলে 'ক্রস প্রোটেকশান'-এর মাধ্যমে বার্ড ফ্লু-র বাকি স্ট্রেনগুলি থেকেও সুরক্ষা মিলবে। তাঁর কথায়, 'এইচ-নাইন এন-টু স্ট্রেনের টিকা প্রয়োগ করা হলে মুরগির শরীরে কেবল এই স্ট্রেনের বিরুদ্ধেই অ্যান্টিজেন তৈরি হবে না, পাশাপাশি তৈরি হয়ে যাবে টি এবং বি-লিম্ফোসাইটের মতো স্মৃতিকোষও। ফ্লু-র অন্য স্ট্রেন ভবিষ্যতে হামলা চালালেও স্মৃতিকোষগুলি সক্রিয় হয়ে উঠে রুখে দেবে সংক্রমণ।' তাঁর মতে, টিকাটি বাজারে এলে বদলে যাবে পোলট্রি ব্যবসার চালচিত্রটাই, দূর হবে কালিংয়ের কোপে পড়ে যে বিপুল লোকসান হয় পোলট্রি ব্যবসায়, সেই আশঙ্কাও।

    স্বভাবতই কেন্দ্রীয় এই উদ্যোগে খুশি পোলট্রি মালিক এবং হাঁস-মুরগি প্রতিপালন ও সরবরাহের সঙ্গে যুক্তরা। পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতি বলেন, 'বার্ড ফ্লু-র একটা টিকা আমাদের বহু দিনের দাবি। প্রায় পাঁচ বছর ধরে দফায় দফায় কেন্দ্রীয় সরকারকে একটা টিকার জন্য আবেদন জানিয়ে এসেছি। আমরা অত্যন্ত খুশি যে, সেই টিকাটি এ বার খুব তাড়াতাড়ি আমরা পেয়ে যাব।' সরকারি এই প্রয়াসকে স্বাগত জানাচ্ছে ন্যাশনাল এগ কো-অর্ডিনেশন কমিটি, প্যান ইন্ডিয়া ব্রয়লার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির মতো সর্বভারতীয় সংগঠনগুলি। কেন্দ্রীয় সূত্র মারফত তাদের কাছে খবর আছে, টিকাটি সম্ভবত মাস দুয়েকের মধ্যেই বাজারে এসে যাবে।
  • Link to this news (এই সময়)