• মুকুলের নাম তুলে নয়া দাবি শুভেন্দুর,
    এই সময় | ০৩ জানুয়ারি ২০২৩
  • এই সময়: বহুদিন বাদে বঙ্গ-রাজনীতিতে ভেসে উঠলেন (Mukul Roy)। তা-ও আবার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর () একটি অভিযোগের সূত্রে। সোমবার শুভেন্দুর অভিযোগ, মুকুলকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা করার জন্য তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের (Jagdeep Dhankhar) কাছে দরবার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এ জন্য ধনখড়কে নাকি দিল্লির বিজেপি (BJP) নেতৃত্বের সঙ্গে কথাও বলতে বলেন মমতা। মুকুল অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আর শুভেন্দুকে কড়া জবাব দিয়েছে তৃণমূল। শুভেন্দুকে 'বদ্ধ পাগল' বলেছেন কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। বিজেপি-সাংসদ দিলীপ ঘোষও প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়েছেন। সোমবার উলুবেড়িয়ায় (Uluberia) একটি সভার পরে সাংবাদিকদের শুভেন্দু জানান, তিনি একটি অকথিত তথ্য বলবেন। তারপর বলেন, 'উনি (মুখ্যমন্ত্রী) তৎকালীন রাজ্যপাল মহোদয়, বর্তমানে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়কে বলেছিলেন যে আপনি দিল্লিকে বোঝান। মুকুল রায়কে বিরোধী দলনেতা করতে বলুন।' ২০২১-এর ৫ মে শপথ নেন মমতা। শুভেন্দুর দাবি, ৩ মে তিনি রাজভবনে গিয়ে ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানেই ধনখড়কে মমতা এ কথা বলেন। বিরোধী দলনেতার দাবি, 'তিনি বেরিয়ে আসার পরে আমি এবং তৎকালীন এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন, যিনি এখন আমাদের দলে নেই, তাঁকে সঙ্গে নিয়ে রাজভবনে যাই। রাজ্যপাল বললেন, অনেক কথার মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা অনুরোধ করে গিয়েছেন - যাতে মুকুল রায়কে বিরোধী দলনেতা করা হয়। সেটাও বিজেপি করেনি। তাই ওঁর (মমতা) অব্যক্ত ব্যথা, বেদনা এবং চুরি আটকে যাওয়ার মানসিক অবসাদের প্রকাশ করেছেন নজরুল মঞ্চ থেকে।'

    এই দাবি ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। শুভেন্দু তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নাম করেননি। তবে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, যিনি বর্তমানে বিজেপিতে নেই, সেই তালিকায় আছেন । বাবুল সোমবার বলেন, ' ঠাকুমার ঝুলি সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন। প্রতিদিন সেখান থেকে একটা করে নতুন গল্প বলছেন। ওঁর কথাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি না। তবে অপেক্ষায় আছি, শুভেন্দু ওঁর নিজের গল্পগুলি কবে বলবেন।' শুভেন্দু ও মুকুল দু'জনেই তৃণমূলে এক সময়ের সতীর্থ। তারপর মুকুল প্রথমে বিজেপিতে যোগ দেন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপিতে যান শুভেন্দুও। বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে ও কৃষ্ণনগর থেকে জেতেন মুকুল। শুভেন্দুকে বিরোধী দলনেতা করে বিজেপি। এর কিছুদিন পর জোড়াফুলে ফেরেন মুকুল। দলত্যাগ-বিরোধী আইনের মারপ্যাঁচে মুকুলের বিধায়ক পদ বাতিল করতে তৎপর হন শুভেন্দু। তারপরে সোমবার এমন দাবি তাঁর।

    এ দিন মুকুল মুখ খুলতে না চাইলেও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ' একটা বদ্ধ পাগল। একটা করে পাগলের মতো ডেট দিয়েছে, আর ফ্লপ হয়েছে। রাস্তায় হাঁটার সময়ে দেখবেন, ফুটপাথের ধারে এমন পাগল থাকে। প্রথমে যেটা ভেবে রেখেছিল, কুচি কুচি করে ছিঁড়ে আবার নতুন করে কিছু লিখছে। সেই রকমই ফুটপাথের ধারে বসা পাগলের অবস্থা হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর।'শুভেন্দুর নতুন দাবি নিয়ে জল্পনা জোরালো হয়েছে গেরুয়া শিবিরেও। বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি ছিলেন দিলীপ ঘোষ। বর্তমানে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তিনি। দিলীপ বলেন, 'এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৎকালীন রাজ্যপালের সম্পর্ক তিক্ত বলেই জানতাম। তা ছাড়া তাঁদের মধ্যে একান্তে কোনও কথা হয়ে থাকলে আমার পক্ষে জানা সম্ভব না।'

    এর আগে এ দিন ভগবানপুরের সভা থেকে ফের 'বড় ডাকাত' ধরার প্রসঙ্গ তোলেন শুভেন্দু। তৃণমূলের 'গেঁড়ু'(গোড়া থেকে) উপড়ে ফেলার হুঁশিয়ারিও দেন। তিনি বলেন, 'মকর সংক্রান্তির আগে পৌষ মাস। মল মাস চলে যাওয়ার পর শুভ কাজে নামব। তোলামূল পার্টিকে পরিষ্কার করব।' এর আগে ডিসেম্বরের 'ডেডলাইন' বেঁধে দিয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু তিনটি তারিখই না মেলার ব্যখ্যা দিয়ে ভগবানপুরের সভায় শুভেন্দু বলেন, 'বড় চোর-ডাকাতদের ডিসেম্বরের মধ্যে সাফাই করতে পারিনি। তবে এর মধ্যে করব। বড় ডাকাতদের আমরা তুলব। ছোট ডাকাতদের আপনারা তুলুন। গ্রাম থেকে সব চোরেদের তাড়াতে হবে।' উলুবেড়িয়ার সভাতেও তারিখ-তত্ত্ব উস্কে দেন। জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা বুথ আগলাতে পারবেন তো? এই কাজে বিজেপিকে সব সময়ে পাশে পাবেন।' যদিও এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসকদল।
  • Link to this news (এই সময়)