কৌশিক রায়: হ্যাপি নিউ ইয়ার থেকে হ্যাপি বার্থডে, কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া–সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যোগাযোগটাই বন্দী ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপে।
আর এই ডিজিটাল যুগে তরুণ প্রজন্মকে নতুন করে হাতের লেখায় মন দিতে বলছে সুলেখা কালি। কলকাতা বইমেলায় প্রথমবার স্টল দিয়েছে সুলেখা। আর অভিষেকেই একেবারে লক্ষ্মী লাভ। নতুন প্রজন্মের ঝর্ণা কলমের প্রতি আকর্ষণ দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছেন খোদ দোকানের কর্মীরাই। কলকাতা বইমেলার ৬ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে কিছুটা এগোলেই চোখে পড়বে একটা জটলা। সেটাই সুলেখার ভিড়। দোকানের বাইরে শো কেসে সাজানো রয়েছে দুষ্প্রাপ্য কালির সম্ভার। ১৯৩০ সালের ফিরিঙ্গি কালি থেকে শুরু করে নানা প্রকারের ঝর্ণা কলম– কী নেই সেখানে। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাতাও। তবে বিক্রি বেশি হচ্ছে কালি আর পেনের। সংস্থার অন্যতম কর্ণধার অম্বর লাহিড়ি জানালেন, ‘আমরা প্রথম বার স্টল দিয়েছি। বেশ ভাল সাড়া পাচ্ছি। বর্তমান প্রজন্মের যে পেন, কালির প্রতি উৎসাহ রয়েছে সেটাই আমার কাছে অনেক।’ বইমেলা উপলক্ষ্যে এবার আট রকমের নতুন কালির সম্ভার এনেছে সুলেখা। লম্বা ক্যাটালগ ঘাঁটলে দেখা যাবে স্বাধীন, স্বরাজ, সমর্পণ, স্বদেশী বিভিন্ন ভাগ। স্বরাজ বিভাগে নতুন আট রকমের কালি এবার উদ্বোধন হয়েছে বইমেলায়। অম্বরবাবুর কথায়, ‘হলুদ, স্যাফরণ, ডার্ক ফ্যান্টাসি, ভায়োলেট অফ ভাইটালিটি বিভিন্ন ধরনের কালি এসেছে এবার। যাঁরা ফাউন্টেন আর্ট করতে উৎসাহী তাঁদের কাজে লাগবে।’ বইমেলায় সুলেখা স্টল দেখেই ঢুকে পড়েছিলেন মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা অঙ্কিতা সাহা। ঘেঁটে দেখছিলেন বিভিন্ন পেন। তার সঙ্গেই খাতায় চলছিল আঁকিবুকি। বললেন, ‘ছোটবেলায় মা–বাবাকে দেখেছি এইসব পেন দিয়ে লিখতে। একটা পেন কিনলাম। এখন তো এসবের চল নেই খুব একটা।’ ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে সুলেখায় পেন পছন্দ করছিলেন বাগুইআটির স্বপ্না চক্রবর্তী। বললেন, ‘আমাদের সময় স্কুলে হাতের লেখা আলাদা বিষয় ছিল। এখন তো সেসব উঠেই গেছে। তাও ছেলেকে কিনে দিলাম।’ মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি নিয়েও কালি রয়েছে সুলেখায়। কালি রয়েছে ভাষা দিবসকে উৎসর্গ করেও। সাজানো রয়েছে ৬৬ বছরের পুরনো ফাউন্টেন পেন। ১৯৫৭ সালে সুলেখার কারখানা থেকে হারিয়ে গিয়েছিল ৩ রকমের ফাউন্টেন পেন। অম্বর বাবুর কথায়, ‘মজার বিষয় জানেন তো, সেই পেন আবার খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এবারে বইমেলায় আমরা সেগুলো বিক্রিও করছি।’ বইয়ের সম্ভারের পাশাপাশি পেন, কালির প্রতি বাঙালির প্রেমও অনেক পুরনো। সেই ভালবাসাকেই আরও একবার ফিরিয়ে আনতে তৎপর সুলেখা কালি। একই সঙ্গে হয়তো ফিরবে নীল কাগজে মুক্তোর অক্ষরে লেখা প্রেমপত্র।