• সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্যের সাইট থেকে গাড়ি কিনে ডাকাতি! তদন্তে নেমে হিমশিম খাচ্ছেন তদন্তকারীরা
    বর্তমান | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: অনলাইনে সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্যের বেচাকেনা বেড়ে গিয়েছে। বহু সংস্থা রয়েছে, যারা বিভিন্ন সাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা বা বিক্রেতা জোগাড় করে। তারপর তাঁদের থেকেই সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য কিনে তুলনায় কম দামে বেচে দেয় অন্য কোনও ক্রেতাকে। এই ধরনের সংস্থাগুলি গাড়ি, বাইকও কেনাবেচা করে। যার ‘সুফল’ ভোগ করছে ডাকাতরা। কারণ এই ধরনের সাইট থেকে গাড়ি কিনে তা নিয়ে ডাকাতি করতে যাচ্ছে তারা। কোনওভাবে গাড়ির নম্বর পুলিস চিহ্নিত করতে পারলেও ধরতে পারে না প্রকৃত মালিককে। ডাকাতদের এই নয়া প্রবণতা ভাবাচ্ছে রাজ্য পুলিসের গোয়েন্দাদের। ওইসব সংস্থা যাতে দুষ্কৃতীদের গাড়ি বিক্রি করতে না পারে, তার কৌশল তৈরিতে ব্যস্ত পুলিস।

    রাজ্য পুলিস সূত্রে খবর, গত নভেম্বরে মধ্যপ্রদেশের কাটনিতে একটি স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থার অফিসে ডাকাতি হয়। খোয়া গিয়েছিল ৮ কোটি টাকা ও ১৮ কেজি সোনা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ডাকাতরা যে গাড়ি চড়ে ডাকাতি করতে গিয়েছিল, সেই একই ধরনের গাড়ি নিয়ে ডাকাতরা এসেছিল পশ্চিম বর্ধমানের একটি স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থায় ডাকাতি করতে। তদন্তকারীদের বক্তব্য, নির্দিষ্ট কিছু গাড়ি ব্যবহার করছে ডাকাতরা এবং সবকটি ঘটনার পিছনেই রয়েছে বিহারের কুখ্যাত দুষ্কৃতী সুবোধ সিং। সুবোধ বর্তমানে জেলে। তার নির্দেশেই ডাকাতির জন্য সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি জোগাড় করা হচ্ছে। সবটাই করছে দুর্গাপুরের বাসিন্দা পঙ্কজ সাউ। যাকে কয়েকদিন আগে বিহারের বেগুসরাই থেকে আটক করা হলেও পুলিসের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায়।

    বর্ধমানের ঘটনায় যে গাড়িটি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটি কসবার এক ব্যক্তির কাছ থেকে দালাল মারফত কিনেছিল সুবোধ সিং। সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য কেনাবেচার সাইটে বিজ্ঞাপন দিয়েই কেনা হয়েছিল গাড়িটি। মধ্যপ্রদেশে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়িটিও কেনা হয়েছিল একইভাবে। অন্যান্য ডাকাতির ক্ষেত্রেও যে সব গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলিও একইভাবে কেনা হয়েছিল। তদন্তকারীদের ধারণা, সুবোধ সিং এভাবেই গাড়ি কিনে সেগুলি ডাকাতির কাজে লাগাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ডজন খানেক এমন গাড়ির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। 

    তদন্তে জানা গিয়েছে, এই ডাকাতদল যে রাজ্যে ডাকাতির পরিকল্পনা করে, আগে সেই রাজ্যের নম্বর প্লেট সহ গাড়ি জোগাড় করে। গাড়ি কেনাবেচার জন্য এই গ্যাংয়ের আলাদা টিম রয়েছে। অন্যের নথি দিয়ে খোলা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মেটানো হয় গাড়ির টাকা।

    গাড়ি কেনা হলেও নাম পরিবর্তন করে না তারা। যে কারণে গাড়ি আগের মালিকের নামেই থেকে যাচ্ছে। তাই অপরাধের পর গাড়ির তথ্য ঘাঁটতে গিয়ে পুরনো মালিকের নাম উঠে আসছে। শুধু তাই নয়, গাড়ি কেনার সময় যে নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছিল, সেটিও বদলে ফেলা হচ্ছে রাতারাতি। ফলে গাড়ির বর্তমান মালিকের খোঁজ মিলছে না। অ্যাকাউন্টে লেনদেনের নথি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, সেটি অন্যের নাম ও ঠিকানা দিয়ে খোলা। ফলে এখানেও থমকে যেতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। গাড়ির সূত্র ধরে ডাকাতদের সন্ধান পেতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। তাই প্রতিটি অপারেশনের আগে সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য কেনাবেচার সংস্থা থেকে গাড়ি কেনার কৌশল নিয়েছে তারা।
  • Link to this news (বর্তমান)