• উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই বর্ধিত বেতন বহু প্রাথমিক শিক্ষককে নন্দীগ্রামের মামলায় উঠে এল তথ্য
    বর্তমান | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেই। অথচ, বর্ধিত বেতন পেয়ে চলেছেন বহু প্রাথমিক শিক্ষক। নন্দীগ্রামের এক স্কুলশিক্ষিকার মামলার জেরে প্রকাশ্যে এসেছে বিষয়টি। নড়েচড়ে বসেছে শিক্ষাদপ্তরও। কীভাবে এই শিক্ষকরা বর্ধিত বেতন পাচ্ছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। দপ্তরের তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

    ২০১৭ সালে নন্দীগ্রামের বনশ্রী গৌরী স্পেশাল প্রাইমারি স্কুলে সহ-শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দেন রীতা করণ। তিনি ‘পে ব্যান্ড-২’ হিসেবে বেতন পেতে শুরু করেন। তবে, তিনি দেখেন, তাঁরই এক সহকর্মী সমান শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে স্কেল-এ হারে বেতন পাচ্ছেন। তখন তিনি কলকাতা হাইকোর্টে বর্ধিত বেতনের দাবিতে মামলা করেন। তারপরেই বিষয়টি শিক্ষাদপ্তরের গোচরে আসে। কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থা এনসিটিই’র স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে, বিএড বা স্পেশাল বিএড করে কেউ যদি প্রাথমিক শিক্ষকতার চাকরি পান, তাহলে তাঁকে প্রশিক্ষিত হিসেবে গণ্য করা হবে না। কারণ, প্রাথমিক শিক্ষকতার চাকরির ক্ষেত্রে গণ্য করা হয় ডিএলএড বা সমতুল ডিগ্রি। যাঁরা বিএড বা স্পেশাল বিএড করবেন, তাঁদের চাকরি পাওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি ছ’মাসের ব্রিজ কোর্স করতে হবে। তাহলেই তিনি প্রশিক্ষিত হিসেবে গণ্য হবেন এবং সেই হারে বেতন পাবেন। নাহলে তাঁর বেতন একটি স্কেল কম থাকবে।

    দপ্তরের তরফে এই যুক্তি দেওয়া হলেও আদালতে রীতাদেবী এরকম একাধিক উদাহরণ তুলে ধরেন। আদালত তখন বিষয়টি ফয়সালার জন্য দপ্তরকে নির্দেশ দেয়। দপ্তর ও জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের নির্দেশে পূর্ব মেদিনীপুরের ডিআই (প্রাথমিক) একটি তালিকা তৈরি করেন। তাতে দেখা যায়, ওই জেলাতেই অন্তত ১৮ জন ব্রিজ কোর্স ছাড়া বর্ধিত বেতন পাচ্ছেন। এই হিসেবে চক্ষু ছানাবড়া দপ্তরের। অন্যান্য জেলাতেও খোঁজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি একটি শুনানিতে রীতাদেবীকে জানানো হয়, ব্রিজ কোর্স করলেই তিনি বর্ধিত বেতন পাবেন। বরং, যাঁরা ব্রিজ কোর্স না করে বর্ধিত বেতন পেয়ে আসছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্ধিত বেতন বন্ধ করা তো বটেই, অন্যায্যভাবে পেয়ে আসা অর্থ ফেরতও চাওয়া হতে পারে।

    এখানেই প্রশ্ন ওঠে, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়া কীভাবে বর্ধিত বেতন পেয়ে যাচ্ছিলেন ওই শিক্ষকরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিশেষ এক রাজনৈতিক প্রভাবশালীর হাতও এর পিছনে থাকতে পারে। তবে, গোটা রাজ্যেই চলবে এ ধরনের শিক্ষকের খোঁজ। কারণ, এ নিয়ে কোনও জনস্বার্থ মামলা হলে সরকারকে বিপাকে পড়তে হতে পারে। দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া মানে কাউকে বঞ্চিত করা নয়। বরং, যাঁরা কষ্ট করে ব্রিজ কোর্স করে নিজের বেতন নিশ্চিত করেছেন, তাঁদের প্রতি সুবিচার করা।
  • Link to this news (বর্তমান)