• সন্ধ্যা হতেই সাড়ে চার লাখের ভিড় ছুঁল বইমেলা
    বর্তমান | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: সন্ধ্যা নেমেছে সবে। উজ্জ্বল আলোর নীচে ঝলমল করছিল এবারের বইমেলা প্রাঙ্গণ। মেলার মাঠে ঢোকার মূল তোরণগুলি দিয়ে মানুষ বেরচ্ছিলেন হাতে গোনা। অথচ কাতারে কাতারে লোক মাঠমুখী হচ্ছিলেন তখনও। শনিবারের ছুটি বা ‘হাফ’ ছুটির অবকাশটুকু হাতছাড়া করতে চাননি কেউই। হোক না মাত্র কয়েক ঘণ্টার ফুরসত। শেষ শীতের হাওয়ায় মাখা উৎসবের এইটুকু উষ্ণতার জন্য‌ই তো গোটা একটা বছরের অপেক্ষা। আর রবিবার জনস্রোতের প্রহর গুনবে বইমেলা। শনিবার যেন তারই ড্রেস রিহার্সাল হয়ে গেল বইয়ের আঙিনাজুড়ে।

    কত ভিড় হল এদিন? বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের তথ্য, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে তিনি জানালেন, বইমেলার আন্তর্জাতিকতার নতুন দিগন্ত খুলেছে ইন্টারনেট। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিও পোস্ট হচ্ছে, তার ‘ভিউ’ চার লাখ ছুঁতে বেশি সময় লাগছে না। বিশ্বের নানা প্রান্তে বসে যাঁরা কলকাতা বইমেলায় না আসতে পারার বেদনা জড়ো করছিলেন, ফেসবুকে তাঁদের দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছে বইমেলা। সেটুকু চেখে দেখার উন্মাদনাও ছিল অপার। 

     লাখো মানুষ যখন বইমেলার মাঠে হাঁটছিলেন, তাঁদের বেশিরভাগের হাতেই ছিল বইয়ের ঝোলা। তাদের গায়ে ছিল হরেক বাংলা প্রকাশনা সংস্থার নাম। নামজাদা বইওয়ালাদের পাশাপাশি ছিল অনেক অনামী প্রকাশনাও। ইন্টারনেট আর পাইরেটেড ডিজিটাল বইয়ের রমরমা বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু দুই মলাটের মধ্যে থাকা বইয়ের জগতে যে এখনও ঘুণ ধরেনি, বরং তা আরও সতেজ হয়েছে, তার প্রমাণ দিচ্ছিল মেলা। শুধু নতুন বই নয়, বাংলাদেশ মণ্ডপের কাছে পুরনো বইয়ে আশ্রয় খুঁজছিলেন অনেকে। বহু প্রবীণ মানুষ এসেছিলেন মেলায়। কেউ হুইল চেয়ারে, কেউ বা অপরের কাঁধে ভর দিয়ে। কিন্তু দমলেন না এতটুকু। বই দেখার ফাঁকে ফাঁকে তাঁদের কেউ ক্যুইজে অংশ নিলেন, কেউ বা নতুন প্রজন্মের গানের কলিতে গলা মিলিয়ে তাল ঠুকলেন। প্রবীণ-নবীনে গাঢ় হল বন্ধুত্ব।   

    মেলার ভিড় আর রোদ্দুর কষ্ট বাড়াচ্ছিল বহু মানুষের। তাই বইয়ের সঙ্গেই যতটা বিক্রি হল ফিশফ্রাই, তারচেয়ে অনেক বেশি বিকোলো আইসক্রিম, লস্যি, কোল্ড ড্রিঙ্ক, ফ্রুট জুস। সেসবেই শান্তি খুঁজলেন বহু মানুষ। নতুন উদ্যমে ফের নামলেন মাঠে। তাঁদেরই কারও টি-শার্টে লেখা ছিল, ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’ কারও বা ‘আসছে বছর আবার হবে।’ বইয়ের স্টলে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন, বাস ধরতে নাকানিচোবানি খাওয়া, খাবারের স্টলে অপেক্ষা, পার্কিং সমস্যা আর বইমেলার মাঠজুড়ে বাহারি পোশাকে সেজেগুজে থাকা মানুষের হাসিমুখ মনে করিয়ে দিচ্ছিল এ উৎসব চিরন্তন।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)