• Explained: পারভেজ মুশারফ পাঁচ বার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন, কেন?
    ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • প্রয়াত হয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন একনায়ক জেনারেল পারভেজ মুশারফ। রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) তিনি দুবাইয়ের হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরিফ। তাঁর নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে কার্যত ছুড়ে ফেলে দিয়েই পারভেজ মুশারফ পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিলেন। নিজেকে পাকিস্তানের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক ও পরে ২০০১ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন ছিলেন মুশারফ।

    এরপর আন্তর্জাতিক চাপের কাছে মাথা নুইয়ে ক্ষমতা থেকে তিনি সরে যেতে বাধ্য হন। পাকিস্তানের শাসক হিসেবে মুশারফ মোট পাঁচ বার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তার মধ্যে দু’বার বৈঠক করেছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে। তিনবার মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে। এই সব বৈঠকের জেরে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় মুশারফের মর্যাদা বাড়লেও ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর সুযোগ তাতে নষ্ট হয়েছিল।

    মুশারফের এই বৈঠকগুলো একবার দেখে নেওয়া যাক:

    আগরা বৈঠক, জুলাই ২০০১-

    আগরায় অটলবিহারী বাজপেয়ী ও পারভেজ মুশারফের বৈঠক। কার্গিল যুদ্ধের পর এটাই ছিল দুই দেশের রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে প্রথম বৈঠক। কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৯৯-এর মে-জুলাই। ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক লাহোর ঘোষণা। তাকে বানচাল করতে কার্গিলের লড়াই ছিল মুশারফের এক বেপরোয়া দুঃসাহসিকতা। শেষ পর্যন্ত আগরা বৈঠক ব্যর্থ হয়। পারস্পরিক দোষারোপের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।

    সার্ক বৈঠক, জানুয়ারি ২০০৪-

    ইসলামাবাদে অটলবিহারী বাজপেয়ী ও পারভেজ মুশারফের বৈঠক। দ্বাদশ সার্ক সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার সাক্ষাৎ হয়। এটাই শেষবারের মতো পাকিস্তান সার্ক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। উরিতে জঙ্গি হামলার পর, ২০১৬ সালে ইসলামাবাদে নির্ধারিত ১৬তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন থেকে ভারত নাম প্রত্যাহার করে নেয়। তারপর থেকে সার্কের কোনও বৈঠক হয়নি। ভারত ও পাকিস্তান ২০০৩ সালে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। এই চুক্তি ২০০৪ সালে বাজপেয়ী এবং মুশারফের মধ্যে বৈঠকের সময় হয়েছিল।

    ফলাফল: এটি সম্ভবত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে গঠনমূলক শীর্ষ সম্মেলন ছিল। পরবর্তীতে জারি করা যৌথ বিবৃতিতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মঞ্চ প্রস্তুত হয়েছিল। কাশ্মীর এবং সন্ত্রাসবাদ-সহ আটটি বিষয়ে আলোচনার বিষয়ে একমত হয়েছিল দুই দেশ। যৌথ বিবৃতিটি পাকিস্তানের একটি অন্তর্নিহিত স্বীকারোক্তি ছিল যে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের বীজ পাকিস্তানের মাটিতেই বপন হয়।

    রাষ্ট্রসংঘ, সেপ্টেম্বর ২০০৪-

    মনমোহন সিং ও পারভেজ মুশারফের মধ্যে নিউ ইয়র্কে বৈঠক হয়েছিল। ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারত ও পাকিস্তানের নেতাদের মধ্যে এটাই ছিল প্রথম বৈঠক। দেশভাগের আগে পাকিস্তানের পঞ্জাবে জন্মগ্রহণকারী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।

    ফলাফল: যৌথ বিবৃতিতে স্বাভাবিকতা ও সহযোগিতা পুনরুদ্ধারের জন্য সংলাপ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনরায় দেওয়া হয়। দুই দেশ সমস্ত ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস তৈরির ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সম্মত হয়। দুই দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির স্বার্থে পাকিস্তান হয়ে ভারতে গ্যাস পাইপলাইনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।

    ক্রিকেট সামিট, এপ্রিল ২০০৫-

    মনমোহন সিং ও মুশারফের মধ্যে এই বৈঠক নয়াদিল্লিতে হয়েছিল। সীমান্তের এপার থেকে ওপার, বাস উদ্বোধনের ১০ দিন পর, যুদ্ধবিরতি এবং গঠনমূলক আলোচনা প্রক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে একটি আমরাও পারি মেজাজে মুশারফ নয়াদিল্লিতে এসেছিলেন। সেই সময়, ইনজামাম-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল তিনটি টেস্ট ম্যাচ এবং ছয়টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য ভারতে ছিল।

    ১৭ এপ্রিল, ফিরোজ শাহ কোটলায় ষষ্ঠ ওয়ানডে দেখেন মুশারফ। উভয় পক্ষই একটি ‘স্থায়ী’ সমাধানসূত্র খুঁজে পেতে ইচ্ছুক বলে জানিয়েছিল। সব সমস্যার সমাধান করতে রাজি ছিল। ফলাফল: সম্পর্কের দৃঢ়তা তৈরি করত একটা উষ্ণ বার্তা ছিল। উভয়পক্ষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ অনুভূতি ছিল। এই সময়ই মনমোহন সিং ও মোশারফ কাশ্মীর সমস্যার একধরনের সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন।

    জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলন, অক্টোবর ২০০৬-

    মনমোহন সিং ও মুশারফ হাভানায় বৈঠক করেছিলেন। ২০০৬ সালের ১১ জুলাই মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে বোমা হামলার ছায়ায় এই শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল। মুম্বইয়ে লোকাল ট্রেন হামলায় ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। জঙ্গি হামলার কারণে ভারত পূর্ণাঙ্গ আলোচনার রাস্তা থেকে সরে এসেছিল। তার আগে পর্যন্ত কথা ছিল যে কাশ্মীর নিয়ে একটি চুক্তি হবে। সিয়াচেনের একটি চুক্তি নিয়ে অবশ্য আপত্তি জানিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী।

    ফলাফল: শীর্ষ বৈঠকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে রাজি হয়েছিল দুই দেশই। পরস্পরের গোয়েন্দা তথ্য ভাগ করে নেওয়ার জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কথা ছিল, এই কমিটি বছরে দু’বার মিলিত হবে। কিন্তু, সেই সিদ্ধান্তের পর মাত্র একবার যৌথ কমিটির বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠক হয়েছিল ২০০৭ সালের মার্চ মাসে ইসলামাবাদে।
  • Link to this news (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)