• সারদাকাণ্ডে নাম জড়াল সিপিএম ও কংগ্রেসের! অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারির পক্ষে সওয়াল তৃণমূলের
    প্রতিদিন | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • স্টাফ রিপোর্টার: সারদাকাণ্ডে ইডি সাড়ে ছয় কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতেই সিপিএম ও কংগ্রেসের অন্দরমহলে তীব্র চাঞ্চল‌্য শুরু হয়েছে। কারণ চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার প্রমাণ হওয়া ওই বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির মালিকদের তালিকায় রয়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা তথা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের স্ত্রী নলিনী এবং প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা প্রাক্তন আইপিএস দেবেন বিশ্বাস।

    সারদা ও রোজভ‌্যালি চিটফান্ডের জন্ম ও বিস্তার শুধু নয়, রমরমা বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই। নয়বছর আগে শুরু হওয়া সিবিআই ও ইডির তদন্তে জানা গিয়েছে, সারদার মতো আর্থিক সংস্থাগুলি প্রভাবশালী বাম নেতাদের প্রত‌্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতেই গ্রামেগঞ্জে দ্রুত বিস্তার লাভ করেছিল। বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর নাম তো সারদা কেলেঙ্কারিতে আগে থেকেই জড়িয়ে, এবার ইডি সাড়ে ছয় কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতেই সিপিএম ও কংগ্রেসও এই কাণ্ডে ফেঁসে গেল। দীর্ঘ নয় বছর ধরে সিপিএম ও কংগ্রেস নেতা-নেত্রীরা সারদা কেলেঙ্কারি ইস্যুতে বড় বড় কথা বলতেন, কিন্তু ইডির টুইটে ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়তেই সবার মুখে কুলুপ। নলিনী চিদম্বরম ও দেবেন বিশ্বাসের নাম প্রকাশের পর শনিবার বেলা বাড়তেই কংগ্রেস ও সিপিএমে আরও নতুন নেতা-নেত্রীদের নাম জড়িয়ে যাওয়ার আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যে সমস্ত বাম নেতা সারদা-রোজভ‌্যালিকে ‘এজেন্ট সুরক্ষা’র নামে ‘কমিশন সুরক্ষার পথ ধরে’ ঘুরপথে চিটফান্ডের আমানতকেই সুরক্ষা করেছেন তাঁরা অনেকেই এবার গ্রেপ্তারের ভয়ে কাঁটা।

    নলিনী চিদম্বরমের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়া নিয়ে কংগ্রেসের যুক্তি, উনি আইনজীবী হিসাবে ‘ফি’ নিয়েছেন সারদার থেকে। সেই অর্থ ফেরত নিয়েছে ইডি। কিন্তু তৃণমূলের সূত্রে পালটা যুক্তি, তা হলে সাংবাদিক হিসাবে সারদা থেকে পাওয়া বেতন ফেরত দেওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ কালিমালিপ্ত হন তবে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশীদার হিসাবে কংগ্রেস নেতার স্ত্রী নলিনী চিদম্বরম কেন জেলের বাইরে থাকবেন? সারদার অর্থ নেওয়ার দায়ে ইডি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করলে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক দেবেন বিশ্বাস কেন গ্রেপ্তার হবেন না? প্রশ্ন উঠেছে, সারদার ইউনিয়নের সভাপতি হওয়ার জন‌্য যদি মদন মিত্র গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন জেলে থাকেন তবে কেন বাইরে থাকবেন ইউনিয়নের বাম নেতারা? কারণ, রোজভ‌্যালি ও সারদার এজেন্ট ইউনিয়নের নেতা ছিলেন প্রয়াত সিটু নেতা শ‌্যামল চক্রবর্তীর।

    তিনি প্রতিটি সভায় গিয়ে ‘এজেন্ট সুরক্ষা’র সওয়াল করতেন। ইউনিয়নের অধিকাংশ নেতাই ছিলেন বাম। প্রশ্ন হল, এই এজেন্ট সুরক্ষা মানে তো চিটফান্ডের কমিশনের সুরক্ষা, আর এজেন্টদের এই কমিশনের সুরক্ষা দেওয়ায় সারদা-রোজভ‌্যালির কোটি কোটি টাকার আমানত উঠে এসেছে। তা হলে কেন, ওই সমস্ত বাম নেতা কেন সিবিআই বা ইডির হাতে গ্রেপ্তার হবেন না? এদিন এমনই প্রশ্ন তুলেছেন সারদা-রোজভ‌্যালির আমানতকারীরাই।

    সারদা নিয়ে মালদহ দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান ওরফে ডালু চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে প্রথমে খারাপ ও পরে ভাল বলেছিলেন কোন রহস্যের? এর আগে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িত অভিযোগে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক রবীন দেবকে জেরা করেছে সিবিআই। প্রধান বিচারপতিকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে সুজন চক্রবর্তীর নাম রয়েছে। কিন্তু এবার নলিনী চিদম্বরম ও প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক দেবেন বিশ্বাসের সম্পত্তি ইডি বাজেয়াপ্ত করার পর স্পষ্টই প্রমাণ হয়ে গেল, সারদার অর্থ পেয়েছেন কংগ্রেস ও বাম নেতারাও। আমানতকারীদের প্রশ্ন, পারিশ্রমিক হিসাবে সারদা থেকে পাওয়া সাংবাদিকের অর্থ যদি অনৈতিক হয় তবে আইনজীবী হিসাবে নলিনী চিদম্বরমের ক্ষেত্রেও কেন একই পদক্ষেপ নেবে না সিবিআই বা ইডি? এখন দেখার, আগামিদিনে কী কঠোর ব‌্যবস্থা নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি।
  • Link to this news (প্রতিদিন)