• Pervez Musharraf: ৬৫-র যুদ্ধে রণাঙ্গন থেকে ‘চম্পট’, জীবনে কোনও যুদ্ধ জেতেননি জেনারেল মোশারফ
    এই সময় | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • জীবনে জেতেননি কোনও যুদ্ধ। শুধু তাই নয়, নিন্দুকদের দাবি, রণাঙ্গন ছেড়ে চম্পট দিয়েছিলেন তিনি। তার পরও সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন পাক সেনাপ্রধান পারভেজ মোশারফ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে সব ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে পাকিস্তান শাসন করেন প্রায় আট বছর। পরবর্তীকালে অবশ্য দেশে ছেড়ে লন্ডন পালিয়ে যান তিনি। সেখান থেকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে আশ্রয় নেন মোশারফ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দুবাইতেই ছিলেন তিনি। পাক ফৌজের ইতিহাসে বারবরই পরাজিত সেনা অফিসার হিসেবে থেকে গিয়েছে তাঁর নাম। প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে মোট চারবার যুদ্ধে জড়ায় পাকিস্তান। এর মধ্যে তিনবারই যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন মোশারফ। আর প্রতিবারই হারের মুখ দেখতে হয়েছিল তাঁকে।

    রণাঙ্গন থেকে চম্পট

    ১৯৬৪-তে পাক গোলন্দাজ বাহিনীতে অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মোশারফ। এক বছরের মাথায় ১৯৬৫-তে ভারত-পাক যুদ্ধ শুরু হলে রণাঙ্গনে যেতে হয় তাঁকে। পঞ্জাবের খেমকরনের যুদ্ধে ভারতীয় ট্যাঙ্ক রেজিমেন্টের মুখোমুখি হতে হয় মোশারফকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ছিল ট্যাঙ্কের সবচেয়ে বড় লড়াই। ওই সময় বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট পদে ছিলেন মোশারফ। ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হওয়া দু’দিন ব্যাপী সেই যুদ্ধে পাকিস্তানের ৯৭টি ট্য়াঙ্ক উড়িয়ে দেয় ভারতীয় ফৌজ। চোখের সামনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা একের পর এক অতি শক্তিশালী ‘প্যাটন’ ট্যাঙ্ককে নষ্ট হয়ে যেতে দেখে এক সময় পাক সেনার মনে আতঙ্ক ধরে যায়। তিনদিন লড়াই চালানোর পর রণাঙ্গন ছেড়ে চম্পট দেয় তাঁরা। নিন্দুকদের দাবি, পালিয়ে যাওয়া সেনা জওয়ান ও অফিসারদের মধ্যে ছিলেন মোশারফও।

    ১৯৭১-এ হার

    ১৯৬৫-র যুদ্ধের ছ’বছরের মাথায় ফের ভারত আক্রমণ করে পাকিস্তান। শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ। ওই সময় মেজর পদে ছিলেন মোশারফ। পাক সেনার এলিট কমান্ডো বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন তিনি। লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে গিয়ে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনার ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া। সেই মতো জলপথে চট্টগ্রাম যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন মোশারফ। কিন্তু রওনা হওয়ার আগেই ভারতীয় নৌসেনার হামলায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায় করাচি বন্দর। ফলে, ভেস্তে যায় মোশারফের পরিকল্পনা।

    সিয়াচেন-কার্গিলে পরাজয়

    ১৯৮৪-তে সিয়াচেন হিমবাহ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনা। ওই সময় মেজর জেনারেল পদে ছিলেন মোশারফ। ভারতীয় ফৌজের থেকে সিয়াচেনকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য অন্তত দু’বার কমান্ডো অপারেশন চালান মোশারফ। প্রতিবারই ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যুত্তরের মুখে পড়ে পিছু হটতে হয় তাঁকে। ১৯৯৯-র কার্গিল যুদ্ধও ছিল তাঁর মস্তিষ্ক প্রসূত। ওই সময় মোশারফ ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান। কার্গিল-দ্রাস দখলের মাধ্যমে সিয়াচেন ছিনিয়ে পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। দু’মাস ধরে চলা সেই লড়াইতেও শেষ পর্যন্ত হারের মুখ দেখতে হয়েছিল প্রাক্তন পাক সেনাশাসক মোশারফকে।
  • Link to this news (এই সময়)