• সাহায্যপ্রার্থী ক্যানসার রোগীকে নামাল বিমান ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৩১
    আনন্দবাজার | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • বিমানে উঠেই বিমানকর্মীদের জানিয়েছিলেন তিনি অসুস্থ। সদ্য অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। হাতের ব্যাগটি উপরের কেবিনে রাখার জন্য সাহায্য চেয়েছিলেন। পরিবর্তে দিল্লি থেকে নিউ ইয়র্ক-গামী আমেরিকান এয়ারলাইনসের ওই বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাঙালিনি ক্যানসার-রোগীকে। গত ৩০ জানুয়ারির ঘটনা। সম্প্রতি দিল্লি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন মীনাক্ষী সেনগুপ্ত। বিষয়টি জানাজানি হয়েছে তার পরেই। আমেরিকান এয়ারলাইনসের কাছে ঘটনার জবাব চেয়ে পাঠিয়েছেন ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন বা ডিজিসিএ।

    মীনাক্ষী জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের জন্য তাঁর শরীর খুবই দুর্বল। গায়ে বিশেষ ব্রেস পরা ছিল, যা সবাই দেখতে পাচ্ছিলেন। তাঁকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে, তিনি অসুস্থ। মীনাক্ষীর কথায়, ‘‘আমার একেবারে ওজন তোলার ক্ষমতা নেই। দু’হাতে সেই জোরই নেই। বেশি হাঁটাচলা করাও বারণ।’’ এ জন্য তিনি বিমানের আসন পর্যন্ত যেতে হুইলচেয়ার চেয়েছিলেন। মীনাক্ষী জানিয়েছেন, দিল্লি বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড স্টাফ খুবই ভাল ছিলেন। বিমানে উঠতে সাহায্য করেন তাঁকে। আসনের পাশে তাঁর হাতের ব্যাগটি রেখে দেন ওই কর্মীই। কিন্তু ঝামেলা শুরু হয় এর পরে।

    মীনাক্ষী জানান, তিনি বিমানে উঠে তাঁর অসুস্থতা সম্পর্কে এক বিমানসেবিকাকে জানান। তখন কেউ তাঁকে বলেনি যে তাঁর কাছে থাকা হাতের ব্যাগটি আসনের পাশে রাখা যাবে না। বিমান ওড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে, আলো ততক্ষণে হালকা করে দেওয়া হয়েছে, এ সময়ে এক বিমানসেবিকা এসে জানান ব্যাগটি উপরের কেবিনে ঢুকিয়ে রাখতে হবে। তিনি তখন তাঁকে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেন। মীনাক্ষীর অভিযোগ, বিমানসেবিকা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সেটি তাঁর কাজ নয়। তিনি বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁর কথা শোনা হয়নি। বরং ওই বিমানসেবিকা তাঁকে রূঢ় ভাবে জানিয়ে দেন, তিনি এ কাজ করতে পারবেন না, মীনাক্ষীকে নিজেকেই করতে হবে।

    অভিযোগপত্রে মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘অসম্ভব রূঢ় ব্যবহার। খুব খারাপ ভাষায় কথা বলতে থাকেন বিমানসেবিকা।’’ এ সময়ে বিমানের অন্য কর্মীরাও কেউ সাহায্য করেননি মীনাক্ষীকে। বরং জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা এ বিষয়ে কিছু করতে পারবেন না। বিমানকর্মীদের সকলেই সে সময়ে বলতে থাকেন, ওঁর অসুবিধা হলে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হোক। মীনাক্ষী বলেন, ‘‘সকলে সমবেত ভাবে সিদ্ধান্ত নেন। এবং আমাকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।’’

    ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়েছে সোশাল মিডিয়াতেও। এর পরেই এক প্রকার হইচই পড়ে গিয়েছে। নড়ে বসেছে কেন্দ্রও। ফেসবুক, টুইটারে অনেকেই বিমান মন্ত্রকের কাছে এই ঘটনার বিচার চেয়েছেন। দিল্লির মহিলা কমিশন (ডিসিডব্লিউ)-কেও ট্যাগ করেছেন অনেকে। এক জন যেমন টুইটারে লিখেছেন, ‘‘এক জন ক্যানসার রোগীর প্রতি আমেরিকানএয়ার-এর কর্মীদের এই ব্যবহার বিরক্তিকর। ব্যাগ তুলে রাখতে সাহায্য করবেন না ওঁরা। আর তার জন্য বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। লজ্জাজনক!’’

    ডিজিসিএ তদন্ত শুরু করেছেন। আমেরিকান এয়ারলাইনসের কাছে জবাব চেয়ে পাঠানো হয়েছে। উড়ান সংস্থাটি তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, সংস্থার জনপরিষেবা দল ওই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাঁর ব্যবহার না-করা টিকিটের অংশের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। তবে বিবৃতিটি এ রকম: ‘‘গত ৩০ জানুয়ারি, আমেরিকান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ২৯৩ দিল্লি থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার ঠিক আগে, এক যাত্রী বিঘ্ন ঘটান। তিনি বিমানকর্মীদের নির্দেশ মানেননি। তাই তাঁকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের জনপরিষেবা দল ওই যাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাঁর টিকিটের অব্যবহৃত অংশের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।’’ এর সঙ্গেই তারা জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)