• হাইমলিখ, সিপিআর নিয়ে বিশেষ জ্ঞান, বাঁকুড়া মেডিক্যালে পড়াচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষক
    প্রতিদিন | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • গৌতম ব্রহ্ম: ছোটদের গুরুমশাই ক্লাস নিচ্ছেন হবু ডাক্তারবাবুদের। ম‌্যানিকুইন বা মানবপুতুলের সাহায্যে কখনও তিনি শেখাচ্ছেন ‘হাইমলিখ টেকনিক’, কখনও আবার ‘কার্ডিয়াক পালমোনারি রিসাসিটেশন’ (সিপিআর)। বিশ্বাস না হলে আবার পড়ুন! বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক‌্যাল কলেজের (Bankura Medical College) ঘটনা। এখানেই সম্প্রতি টানা আড়াই ঘণ্টা শ’দুয়েক হবু ডাক্তারের  ক্লাস নিলেন সৌম‌্য সেনগুপ্ত। রাধানগর বোর্ড প্রাথমিক বিদ‌্যালয়ের শিক্ষক। এমন ঘটনা বাংলা তো বটেই, দেশেও বিরল মনে করছেন রাজ্যের স্বাস্থ‌্যকর্তারা।

    জনস্বাস্থ‌্য নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে দীর্ঘদিন কাজ করছেন সৌম‌্য। গ্রামে গ্রামে ঘুরে সর্পদষ্ট রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়ে ‘রুল অফ হান্ড্রেড’-এর কথা বোঝাচ্ছেন। সেই সঙ্গে শেখাচ্ছেন সিপিআর ও হাইমলিখ প্রকৌশল। উল্লেখ‌্য, সাময়িকভাবে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া হৃদযন্ত্র পুনরায় সচল করতে রোগীকে সিপিআর দেওয়া হয়। মিনিটে ১০০ বার পাম্প করে সচল করা হয় হৃদযন্ত্র। মৃত্যুমুখ থেকে ফিরিয়ে আনার এই জীবনদায়ী কৌশল মানবপুতুলের সাহায্যে এতদিন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের শেখাতেন সৌম‌্য।

    শেখাতেন আরও এক জীবনদায়ী প্রকৌশল। ‘হাইমলিখ ম‌্যানুভার’। শ্বাসনালিতে খাবার আটকে গেলে তা বের করার কৌশল। সৌম‌্যর শেখানো বিদ‌্যা এখনও পর্যন্ত আঠারোটি প্রাণ বাঁচিয়েছে। যেমন দু’দিন আগেই বাঁকুড়া টাউন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা যূথিকা নন্দী বাঁচিয়েছেন নিজের চার বছরের ছেলে ঋতধীর প্রাণ। শ্বাসনালিতে চকোলেট আটকে প্রাণসংশয় হয়েছিল ঋতধীর। সৌম‌্যর থেকে শেখা হাইমলিখ টেকনিক ব‌্যবহার করে ছেলেকে বিপন্মুক্ত করেন যূথিকাদেবী। শ্বাসনালি থেকে বের করেন আটকে যাওয়া চকোলেটের টুকরো। সৌ‌ম‌্য জানালেন, ‘‘শ্বাসনালিতে খাবার আটকে যাওয়াকে আমরা বিষম লাগা বলি। ওই অবস্থায় মানুষ কথা বলতে পারে না। অন‌্যকে নিজের কষ্টের কথা জানাতে পারে না। কেশে বস্তুটি নিজে থেকে বের করা গেলে ঠিক আছে। নইলে বিপদ। নিজেকে বা অন‌্যকে বাঁচানোর জন‌্য সময় মেলে মাত্র মিনিট চারেক। তার মধ্যে হাইমলিখ কৌশল প্রয়োগ করে বস্তুটি বের করা যায়।’’

    সৌম্যর পর্যবেক্ষণ, চার মিনিটের মধ্যে কোনও রোগীকেই হাসপাতালে আনা সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, ডাক্তারবাবুরা এই জাতীয় চিকিৎসার কোনও সুযোগই সেই অর্থে পান না। তাই এই ব‌্যাপারে অভিজ্ঞতা থাকা তাঁর মতো শিক্ষকের ডাক পড়েছে। হবু ডাক্তারবাবুরা ৭ জানুয়ারি শিখলেন, কীভাবে নাভিতে চাপ দিয়ে মধ‌্যচ্ছদায় চাপ বাড়াতে হয়। সৌম‌্য জানালেন, “আগের প্রিন্সিপাল ডা. পার্থপ্রতিম প্রধানের থেকে প্রথম ক্লাস নেওয়ার প্রস্তাব পাই। কিন্তু করোনার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। অবশেষে বর্তমান প্রিন্সিপাল পঞ্চানন কুণ্ডু আমন্ত্রণ জানিয়ে মেল করেন। এই নিয়ে আরও কয়েকটি ক্লাস করানোর প্রস্তাব রয়েছে মেডিক‌্যালে।” 
  • Link to this news (প্রতিদিন)