• জবরদখলে বেহাত রাস্তা এবং ফুটপাথ, নিরাপদে চলাচল কী ভাবে, প্রশ্ন নাগরিকদের
    আনন্দবাজার | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • জ়েব্রা ক্রসিং ধরে পারাপার করুন, হেলমেট পরুন, সিগন্যাল মেনে চলুন।

    পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের প্রথম দিনে কলকাতা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এমনই প্রচার চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। ঘটনাচক্রে, সেই কলকাতা পুলিশেরই অধীন ঠাকুরপুকুরে সোমবার সাতসকালে দু’টি বাসের রেষারেষির বলি হয়েছেন এক স্কুটার আরোহী মহিলা। যে ঘটনার পরে ওই এলাকার স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, পথআইন মেনে চলার দায়িত্ব যেমন নাগরিকদের রয়েছে, তেমনই পথকে সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ করে তোলার দায়িত্ব প্রশাসনেরও বটে।

    ঠাকুরপুকুর মোড়ে এ দিন সকালে দুর্ঘটনায় মৃত মহিলার নাম রূপা মণ্ডল। পুলিশ জানায়, ছেলের সঙ্গে স্কুটারে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন রূপা। দু’টি বাস রেষারেষি করছিল। একটি বাসের ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়ে অন্য বাসটির চাকায় পিষ্ট হন তিনি। বেলার দিকে ঠাকুরপুকুর মোড়ে গিয়ে দেখা গেল, সেখানকার পথ-নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই বিশৃঙ্খল যে, পথচারীদের প্রতি মুহূর্তেই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

    ঠাকুরপুকুর মোড়ের দু’ধারের রাস্তা এবং ফুটপাত দখল হয়ে গিয়েছে। রাস্তার দু’ধারে অটো, বাস, মোটরবাইক যত্রতত্র দাঁড় করানো। তার জেরে ডায়মন্ড হারবার রোডই সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। যে কারণে পথচারীরা বাধ্য হন রাস্তা দিয়েই হাঁটাচলা করতে। এমনকি, যেখানে এ দিন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার অদূরেই দেখা গেল, রাস্তার প্রায় মাঝখানে এসে দাঁড়াচ্ছে বাস। সেখান দিয়েই বাসে ওঠানামা করতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। কর্তব্যরত এক সিভিক ভলান্টিয়ার মাঝেমধ্যে এসে যান নিয়ন্ত্রণ করে অন্যত্র গিয়ে বসে পড়ছেন।

    স্থানীয় মানুষ জানান, ঠাকুরপুকুর মোড়ের যে দিকে এ দিন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার ঠিক উল্টো দিকের রাস্তায় পুজোর আগে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল কলকাতা পুলিশেরই এক আধিকারিকের। তার পরে ওই মোড়ে সিগন্যাল বসেছে বলে জানান স্থানীয়েরাই। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক মদতে রাস্তায় যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে অটোস্ট্যান্ড। ফুটপাত দখল হয়ে গিয়েছে। এলাকার একটি মাত্র সরকারি বাসস্ট্যান্ড সারা দিন খাঁ খাঁ করে। সেই বাসস্ট্যান্ডের সামনেও অটো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে এ দিন। ঠাকুরপুকুর থানার সামনের অংশ এবং থানার উল্টো দিকের রাস্তাও একই ভাবে মোটরবাইক এবং বাস পার্কিংয়ের দখলে চলে গিয়েছে। এ দিন থানার সামনেই এক সাইকেল আরোহী উল্টো দিক দিয়ে যেতে গিয়ে ধাক্কা মারলেন এক মহিলাকে।

    এ দিন ইএসআই হাসপাতালের কর্মী রূপার মৃত্যুর পরে ওই হাসপাতালের কর্মী সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি বিশ্বজিৎ চৌধুরী তোপ দেগেছেন পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘প্রায়ই ওই রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তা, ফুটপাত দখল হয়ে গিয়েছে। লোকজন বিপদ মাথায় নিয়ে চলাফেরা করেন। আমরা বার বার পুলিশকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।’’

    ঠাকুরপুকুর মোড়ে ওই দুর্ঘটনার পরে ডায়মন্ড হারবার রোডের এমন পরিস্থিতির কথা জানানো হয় কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারকে। তিনি অবশ্য জানান, রাস্তা দখলমুক্ত রাখতে তাঁরা আরও সতর্ক হবেন। তিনি বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে, সব সময়ে পথচারীদের দোষে দুর্ঘটনা ঘটে না। দুর্ঘটনা ঘটার পরিস্থিতিও তৈরি হয়ে থাকে। আমি স্থানীয় পুর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলব। এ নিয়ে আরও সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।’’

    কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল এ দিন জানান, পথচারীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে অতিরিক্ত জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনার ৪৫ শতাংশেরই শিকার হন পথচারীরা। তিনি আরও বলেন, ‘‘রাস্তা পারাপারের সময়ে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে বুম ব্যারিয়ার বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাইকচালকদের হেলমেট পরায় বাধ্য করতে জোর দেওয়া হচ্ছে। কারণ, দুর্ঘটনায় ২৫ শতাংশ মৃত্যু ঘটে বাইকচালকদেরও।’’

    কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক পদস্থ আধিকারিকের দাবি, রাস্তায় বেআইনি ভাবে গাড়ি রাখা হলে জরিমানা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে গাড়ি আটকও করা হয়।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)