• বাংলাকে টুকরো করার রাজনীতি, ডাবল ইঞ্জিন ভাগ না করার নিদান রাজ্য ভাগ নিয়ে দু’মুখো বিজেপি
    বর্তমান | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল বিজেপির দু’মুখো নীতি। ভোটের স্বার্থে কোথাও তারা রাজ্য ভাগের বিরুদ্ধে। একই কারণে অন্য কোথাও পৃথক রাজ্যের জিগির তোলাই তাদের প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশের রাজ্য ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির অবস্থানে এই ‘রাজনৈতিক দ্বিচারিতা’ প্রমাণিত। এমনটাই মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিজেপি-বিরোধী শিবিরের অনেকে। তাদের দাবি, স্রেফ ভোটের জন্য বাংলাকে টুকরো করার রাজনীতি করলেও ‘ডাবল ইঞ্জিন’ বা বিজেপি শাসিত রাজ্যের ক্ষেত্রে ভাগাভাগি চায় না তারা। ভোটবাজারে বিজেপির এমন দু’মুখো নীতি নিয়ে তাই তৃণমূলের কটাক্ষ, ‘ডাবল ইঞ্জিন নয়, ডাবল স্ট্র্যান্ডেড পার্টি হল বিজেপি।’

    ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। সেখানকার আঞ্চলিক দল তিপ্রা মথার প্রধান দাবি পৃথক রাজ্য গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, যে দল পৃথক রাজ্যের দাবি সমর্থন করবে, তাদের স্বাগত জানানো হবে। তবে ত্রিপুরা ভেঙে নতুন রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার কোনও পরিকল্পনা নেই বলে আগরতলায় বসেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা রবিবার একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তিপ্রা মথা গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের যে দাবি তুলছে, তা মানা হবে না। আমরা প্যান্ডোরা বক্স খুলতে চাই না। যদি তা করা হয়, সেক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বের অন্যান্য অংশেও পৃথক রাজ্যের দাবি উঠতে পারে। 

    দেশের উত্তর-পূর্বে হিমন্ত বিশ্বশর্মা বিজেপির অত্যন্ত ‘প্রভাবশালী’ নেতা বলেই পরিচিত। তিনি যখন এই বক্তব্য রাখছেন, প্রায় একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের কার্শিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা আলাদা রাজ্যের দাবি তুলছেন। কোনও রাখঢাক না রেখে তিনি বলছেন, ‘এ কথা বিধানসভার ভিতরেও বলেছি, বাইরেও বলেছি। যতবার জিজ্ঞাসা করা হবে, ততবার বলব।’

    এই আবহে বিজেপির রাজ্যভিত্তিক ‘ভোট-অঙ্ক’ জলের মতো পরিষ্কার বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বাংলার উত্তর প্রান্তকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই চালাচ্ছে বিজেপি। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই তারা এনিয়ে জল ঘোলা করতে তৎপর। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বারলা থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের একাধিক বিজেপি নেতা এই দাবিতে সুর মেলাচ্ছেন। সম্প্রতি আবার জিটিএ চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে এসে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে হইচই শুরু করেছেন জিজেএমের রোশন গিরিরা। এর পিছনেও বিজেপির ‘হাত’ রয়েছে বলে অভিযোগ। দেশের শাসক দলের এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে যথারীতি সরব হয়েছে তৃণমূল। দলের নেত্রী তথা মন্ত্রী শশী পাঁজা সোমবার বলেন, ‘বিজেপি নেতারা পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে এক কথা বলছেন। আর ত্রিপুরা নিয়ে অন্য কথা। ডাবল স্ট্র্যান্ডেড, ডাবল স্পিক। এর থেকে প্রমাণ হয়, রাজ্যকে অশান্ত করতেই বিজেপি প্ররোচনা দিচ্ছে।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)