• ৬ কিমি হেঁটে স্কুল, BCS ক্র্যাক করে অনটনের সংসারে আলো জ্বালালেন পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলে
    এই সময় | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • WBCS Success Story মেধা ও পরিশ্রমের বিকল্প যে কোনও কিছু নেই তা আরও একবার প্রমাণ করলেন মালদার কেশব দাস। বাবা পরিযায়ী শ্রমিক। ছোট থেকেই অভাব আর অর্থকষ্ট নিত্য সঙ্গী। ছয় কিলোমিটার দূরের স্কুল যেতে কোনও গণপরিবহণ নেওয়ার সামর্থ্যটুকুও ছিল না। স্কুলের গণ্ডি পেরলেও জীবন থেকে মোছেনি অভাবের অন্ধকার। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে প্রখর ইচ্ছেশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের জোরে WBCS পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিডিও হতে চলেছেন পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলে বছর আঠাশের কেশব।

    মালদা (Malda) জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-২ নং ব্লকের দৌলতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হরদমনগর গ্রামের বাসিন্দা কেশব। WBCS পরীক্ষায় সাফল্যের খবর এলাকায় জানাজানি হতেই বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের ভিড়। ফুলের তোড়া ও মিষ্টি নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে যাচ্ছেন কেশবের বাড়িতে। এলাকায় খুশির বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। ছেলের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের বাবা মা ও আত্মীয়স্বজনদের বুক গর্বে ভরে উঠেছে।

    কেশব দাস জানান, ২০২০ সালে দ্বিতীয়বার ডবলু বি সি এস (WBCS) পরীক্ষায় বসেন। চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা গিয়েছে যে WBCS এক্সিকিউটিভ 'A' বিভাগে সারা পশ্চিমবঙ্গে ২৭ Rank করেছেন কেশব। পেটে ভাত দুবেলা পরিমাণমতো না জুটলেও মেধার অভাব ছিল না কোনওদিনই। ২০১১ সালে হরদমনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫৭ শতাংশ নাম্বার পেয়ে মাধ্যমিক, ২০১৩ সালে দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭৬ শতাংশ নাম্বার পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। এরপর মালদা কলেজে সংস্কৃত অনার্স নিয়ে ভর্তি হন কেশব। ২০১৬ সালে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতকও পাশ করেন। ২০১৮ সালেই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭৭ শতাংশ নাম্বার পেয়ে মাস্টার ডিগ্রির পাঠ শেষ করেন তিনি।

    মালদায় হস্টেলে থেকে পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতেন। আর্থিক অভাবের কারণে তেমন কোচিং নিতেও পারেননি। তবে নিজে টিউশন পড়িয়ে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতেন। ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল শিক্ষক হওয়ার কিন্তু কঠোর পরিশ্রমে ডবলু বি সি এস এর তাঁকে এনে দিয়েছে সাফল্য। তার সাফল্যে গর্বিত আজ সম্পূর্ণ হরিশ্চন্দ্রপুরবাসী।

    দুই দাদা ও দিদির পর ছোট ভাই কেশব। তাঁর বাবা জ্ঞানবান দাস পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। ছেলের কথা বলতে গিয়ে তাঁর বুকভরা দীর্ঘশ্বাস আর গলায় অপরাধবোধ ধরা পড়ে। তিনি বলেন, লকডাউনে হারিয়েছেন জীবিকা। কোভিডকাল কাটতে সংসার চালাতে দিনমজুর ও জমিতে কাজ ধরেন তিনি। সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া বাবার কাছে তখন ছেলের পড়াশুনার খরচ যোগানো ছিল অগ্রাধিকার। ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ নিতে হয়েছে তাকে এমনকি তার স্ত্রীর কানের সোনার দুল পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে আজ কোনও আফসোস নেই তাঁর। বরং কুরে খাচ্ছে অপরাধবোধ। ছোট থেকে কেশবের কোনও আবদারই রাখতে পারেননি তিনি। জানালেন, মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর ছেলের আবদার ছিল একটি নতুন সাইকেলের তাও তিনি কিনে দিতে পারেননি।প্রতিদিন প্রায় ছয় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ছেলে দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যেত। মালদা হস্টেলে থাকাকালীন ছেলে পড়াশুনার সুবিধেই একটি ল্যাপটপের আবদার করলেও সেটাও দিতে পারেননি বলে আফসোস করেন। তবে এদিন সব অন্ধকার মিটে গিয়েছে কেশবে সাফল্যের আলোয়।
  • Link to this news (এই সময়)