• বিপর্যস্ত সিরিয়া-তুরস্কে ফের কম্পন, মৃত্যু ছাড়াল ৭ হাজার
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • আদানা (তুরস্ক): ধ্বংসস্তূপ হাতড়ালেই মিলছে মৃতদেহ। স্বজনহারাদের বুকফাটা কান্নায় কান পাতা যাচ্ছে না। মৃতের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিধ্বংসী  ভূমিকম্পে কার্যত মৃত্যুপুরী পূর্ব তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। মঙ্গলবার সকালেও অনুভূত হয়েছে কম্পন। রিখটার স্কেলে ধরা পড়েছে তার মাত্রা—৫.৮। তবে উদ্ধারকাজ থামেনি। ভাঙা ঘরবাড়ির নীচে এখনও চাপা পড়ে রয়েছেন প্রচুর মানুষ। ধ্বংসস্তূপ থেকে সাড়া আসছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অসহায় প্রতীক্ষা ছাড়া কিছু করার নেই। তুরস্কের হাতায় প্রদেশের আন্তাকায়া শহরের ভেঙে পড়া বাড়ির নীচে আটকে রয়েছেন নুরগুল আতায়ের মা। বুকের ভিতর ধাক্কা দিচ্ছে তাঁর আর্তনাদ। নুরগুল বারবার ছুটে গিয়েছেন। কিন্তু অস্থিরভাবে খানিক চেষ্টা করেই ক্ষান্তি দিতে হচ্ছে। কারণ, হাতের কাছে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কোনও যন্ত্রপাতি নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)জানিয়েছে, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দুর্গতের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ২ কোটি ৩০ লক্ষে। তাদের মধ্যে ১৪ লক্ষই শিশু।

    ভূমিকম্প বিধ্বস্ত ১০ প্রদেশে তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ এরদোয়ান। ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকটে জানিয়েছেন, দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আহত অন্তত ২০ হাজার ৫৩৪। সিরিয়ায় সরকারি দখলভুক্ত এলাকায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৮১২ বলে দাবি সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের। দেশের বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকায় কম করে ৭৯০ জন মারা গিয়েছে বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারী দল। আহতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়েছে। সবমিলিয়ে ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত দুই দেশ মিলিয়ে ৭ হাজার ২০০ জন মারা যাওয়ার খবর মিলেছে।  

    তুরস্কের বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা জানিয়েছে, ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে ২৪ হাজার আপৎকালীন কর্মী  নিয়োগ করা হয়েছে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। কিন্তু একদিকে তীব্র ঠান্ডা ও প্রবল বৃষ্টি এবং অন্যদিকে একের পর এক আফটার শকের কারণে উদ্ধারের কাজটা একেবারেই সহজ হচ্ছে না। তুষারঝড়ে ঢেকে গিয়েছে প্রধান সড়কগুলি। তিনটি বড় ঩বিমানবন্দর অচল। এই প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও ১০ টি প্রদেশ থেকে ৭ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি আটককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কাউকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারলেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছে লোকজন। উল্লেখ্য, সোমবার ভোর ৪টে ১৭ মিনিটে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল দু’দেশের ঘরবাড়ি-বহুতল। তারপর আরও দু’বার বড়মাপের কম্পন অনুভূত হয়েছে। মৃদু আফটার শকের সংখ্যা দুশোর কাছাকাছি। উৎসস্থলের প্রায় ২০০ কিমি ব্যাসার্ধের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় এক ডজন শহর বিপর্যয়ের কবলে।

    যুদ্ধ, আইএস জঙ্গিদের উপদ্রব, শরণার্থী সমস্যা ও সম্প্রতি কলেরার প্রাদুর্ভাবের জর্জরিত তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তের এই বিস্তীর্ণ অংশ। সোমবারের ভূমিকম্প এই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন স্টেডিয়াম, শপিং মল,  মসজিদ ও অনুষ্ঠান হলগুলিতে। প্রবল শীতেও খোলা আকাশের নীচে কম্বল মাথায় ঢাকা দিয়ে রাত কাটাচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার নিজেদের গাড়িতেই মাথা গুঁজেছেন সপরিবারে। বিভিন্ন জায়গায় উদ্ধারকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছেন স্থানীয়রা।
  • Link to this news (বর্তমান)