• ডব্লুবিসিএস পরীক্ষায় ২৭ র‌্যাঙ্ক করে তাক লাগিয়ে দিলেন পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলে
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • সংবাদদাতা, মালদহ: শৈশব থেকেই চরম আর্থিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। সেই ইচ্ছাশক্তিকে পাথেয় করে এবার ডব্লুবিসিএস (এগজিকিউটিভ) পরীক্ষায় সফল হলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের তরুণ কেশব দাস। সম্প্রতি প্রকাশিত রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিক নিয়োগের পরীক্ষায় ২৭তম স্থান দখল করেছেন পরিযায়ী শ্রমিকের এই সন্তান। কেশবের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের দৌলতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হরদমনগর গ্রামের সব বাসিন্দাই। 

    শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দনের স্রোতে ভাসতে ভাসতেও কেশব দাস এখনও স্মরণ করছেন কীভাবে তাঁর বাবা জ্ঞানবান দাস এবং মা শকুন্তলা দাস চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও তাঁর পাশে থেকেছেন। জ্ঞানবানবাবু জানান, তিনি এক সময় পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে ভিনরাজ্যে ছুটেছেন রোজগারের লক্ষ্যে। ছেলে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা করেছে নিজের চেষ্টাতেই। বাবা হিসেবে সামান্য সাহায্য করে তিনি ছেলের লড়াইয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অসঙ্গতির কথা মাথায় রেখে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের হাতখরচের ব্যবস্থা করতেন কেশব নিজেই। ২০১১ সালে স্থানীয় হরদমনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ২০১৩ সালে দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন কেশব। এরপরে মালদহ কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়া শেষ করেন তিনি। ২০১৮ সালে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। 

    কেশব জানান, প্রথমে তাঁর স্বপ্ন ছিল শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়া। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিবিধ বিতর্কের কারণে তিনি অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। তবে তাঁর পাখির চোখ ছিল ডব্লুবিসিএস পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসায় তৃপ্ত মালদহের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা এই যুবক। পদস্থ প্রশাসনিক আধিকারিকের দায়িত্ব নিতে যাওয়া কেশব জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই বাবার কঠোর পরিশ্রম এবং উৎসাহ তাঁকে প্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি বলেন, বাবার পরামর্শেই আমি বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে মালদহ কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। 

    ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে কখনও চড়া সুদে টাকাও ধার করতে হয়েছে জ্ঞানবানবাবুকে। এখনও পরিশোধ হয়নি সেই ঋণ। কখনও আবার নিজের সোনার গহনা বিক্রি করেছেন মা। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ছেলের স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য একটা সাইকেলও কিনে দিতে পারেননি তাঁরা। সেই আক্ষেপ আজও রয়ে গিয়েছে মা-বাবার মনে। তবে কেশবের সাফল্য ধুয়ে মুছে দিয়েছে সব আক্ষেপ। কলেজে পড়ার সময় থেকেই টিউশন করে যতটা সম্ভব প্রয়োজনীয় খরচ জোগাড়ের চেষ্টা করতেন কেশব। 

    তবে কঠোর পরিশ্রম, প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং মেধাকে সম্বল করে সব প্রতিবন্ধকতাকেই পরাজিত করেছেন কেশব। তাই তাঁর এই সাফল্যের স্বাদই যেন আলাদা। কেশবের পরিবারে দারিদ্র্যের অন্ধকার মুছে গিয়ে এখন সাফল্যের আলো। সেই আলোতেই হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে শুধু তাঁর এক চিলতে ঘরই নয়, পুরো হরদমনগর। 

    নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)