• টিভি শোতে পুরস্কার জেতার টোপ দেড় কোটির লোভে খোয়ালেন ৮৫ লক্ষ
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ খেলায় দেড় কোটি টাকা জেতার টোপ গিলে ৮৫ লক্ষ টাকা খোয়ালেন এক যুবক। ময়না থানার কলাগেছিয়া গ্রামের ওই যুবকের নাম মনোজ মণ্ডল। মনোজ ভূগোলে এমএ এবং বিএড। এ পর্যন্ত এটাই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সর্বাধিক অঙ্কের প্রতারণা বল জেলা পুলিস জানিয়েছে। দু’সপ্তাহ আগে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিস ওই যুবককে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিতে পেরেছে। প্রতারণা চক্রের খপ্পরে পড়ে দু’বিঘার বেশি জমি বিক্রি করে দিয়েছেন মনোজ। ধার করেছেন আরও ২০ লক্ষ টাকা। পাওনাদাররা এখন প্রায়ই টাকার জন্য মনোজের বাড়িতে আসছেন। সাইবার ক্রাইম থানার পুলিস ধাপে ধাপে টাকা ফিরিয়ে দেবে বলে পাওনাদারদের কোনওরকমে ঠেকিয়ে রেখেছেন ওই যুবক।

    ঘটনার সূত্রপাত ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। হঠাৎই একদিন মনোজের হোয়াটস অ্যাপে একটি মেসেজ আসে। সেখানে বলা হয়, মনোজ কৌন বনেগা ক্রোড়পতিতে সেরা দর্শক হিসেবে দেড় কোটি টাকা জিতেছেন। ফোনে চোখ রেখে সবার আগে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান মনোজ। রাতারাতি বিত্তশালী হওয়ার আনন্দে সারারাত দু’ চোখের পাতা এক করতে পারেননি মনোজ। একদিন বাদে ফোন পান মনোজ। তাঁকে বলা হয়, ওই পুরস্কারের অর্থ পাওয়ার জন্য বেশকিছু নিয়মাবলী মানতে হবে। সব শর্তে একবাক্যে রাজি হয়ে যান ওই যুবক। জিএসটি, সেন্ট্রাল ও স্টেট ট্যাক্স সহ নানা শর্তের কথা স্মরণ করিয়ে টাকা চাওয়া হয়। টাকা দেওয়ার সেই শুরু। প্রথমে ব্যাঙ্কে জমানো নগদ অর্থ দিতে থাকেন মনোজ। তারপর প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে টাকা পাঠাতে থাকেন। একটা সময়ে নিজেদের বাস্তু এবং জলাজমির সবটাই বিক্রি করে দেন। শুধুমাত্র বসত বাড়িটি বিক্রি করতে বাকি ছিল। এখন নিজেদের বলতে শুধু ওইটুকুই রয়েছে।

    তমলুক সাইবার ক্রাইম পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ১১০ বার পেমেন্ট করেছেন মনোজ মণ্ডল। ধারাবাহিকভাবে টাকা দিয়েছেন। একটা সময়ে এসে তাঁর উপলব্ধি হয়, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর ময়না থানায় ছুটে যান। সব শুনে পুলিসের চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা। থানার পুলিস অফিসাররা তাঁকে সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন। সেইমতো তমলুক সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ করেন। পুলিস বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট নম্বর ফ্রিজ করে। ন’টি অ্যাকাউন্টে সাড়ে চার লক্ষ টাকা ছিল। পাঁচটি ব্যাঙ্ক থেকে এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা যুবকের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। মাত্র ১৫ দিন আগে ওই টাকা পেয়েছেন মনোজ। আরও চারটি ব্যাঙ্ক থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা শীঘ্রই ফেরত পাবেন। 

    মনোজ বলেন, আমার বাবা চাষবাস করেন। আমি ভূগোল নিয়ে এমএ পাশ করেছি। তারপর বিএড করেছি। চাকরির চেষ্টা করছি। একটা এসএমএস আমাকে ফতুর করে দিয়েছে। এখন বসত বাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। বাজারে ২০ লক্ষ টাকা দেনা। রাতে ঘুম আসে না। নিজে ৮৫ লক্ষ টাকা জলে দিয়েছি। এটা ভাবলে নিজেকেই ধিক্কার দিতে ইচ্ছা করে। তমলুক সাইবার ক্রাইম থানার তদন্তকারী অফিসার সৌরভ মিত্র বলেন, ৮৫ লক্ষ টাকার সাইবার প্রতারণা সম্ভবত জেলায় সবচেয়ে বেশি অঙ্কের প্রতারণা। এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ফেরানো হয়েছে। আরও ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা শীঘ্রই প্রতারিত যুবক ফেরত পাবেন।
  • Link to this news (বর্তমান)