• ভাঙনের গ্রাসে দুই গ্রাম যাননি বিজেপি সাংসদ ভোটের পর দেখা না মেলায় ক্ষোভ
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ‘ঋতুচক্রে সময় পাক খায়, পদ্মার ভাঙন ধরা তীরে মাটি ধ্বংসিতে থাকে...।’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসের মাঝিদের মতোই দুর্দশা নদীয়ার রানাঘাট ১ নং ব্লকের তারাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝাউমহল ও সুরেশনগর গ্রামের কয়েকশো পরিবারের। ওঁরা আশঙ্কায় রয়েছেন, এই বুঝি আগামী বর্ষায় ভিটে জমি সব তলিয়ে যাবে ভাগীরথীর গর্ভে। লোকসভা নির্বাচন পেরিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন বছর। কিন্তু বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারকে কখনওই নিজেদের এলাকায় দেখেননি এলাকাবাসী। নদী ভাঙন রোধে কেন্দ্রকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতের তরফে সাংসদের কাছে বহুবার দরবার করা সত্ত্বেও মেলেনি সদুত্তর।

    গত বছরের আগস্ট মাসে তারাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে নদীয়া সেচদপ্তরে নদী ভাঙনের সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সেই চিঠিতে সই করেছিলেন কয়েকশো গ্রামবাসী। গ্রামবাসীরা বলেন, গত বর্ষায় জেলা সেচদপ্তরের তরফে ভাঙন রোধে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছিল। ইঞ্জিনিয়াররাও এসেছিলেন। কিন্তু চাষের জমি বাঁচাতে পারিনি আমরা।

    প্রসঙ্গত, নদী ভাঙন রোধে রাজ্যকে সাহায্য করার জন্য একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের গড়িমসি নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন তিনি। যেহেতু কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়, তাই অস্থায়ীভাবে বাঁধ দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।

    আর কিছু না হোক, অন্তত ঝাউমহল ও সুরেশ নগর এই দুই গ্রামের বাসিন্দাদের স্বার্থে একটা কিছু ব্যবস্থা করুন। এভাবেই বিজেপি সাংসদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন তারাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান স্মরজিৎ বিশ্বাস। অভিযোগ, কথা রাখেননি সাংসদ। পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতের সবথেকে বড় সমস্যা নদী ভাঙন। ঝাউমহল ও সুরেশ নগরের অবস্থা সবথেকে খারাপ। জানি না সামনের বর্ষায় কী হবে। তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। মাঝে শুধু একবার দলীয় কর্মসূচি ছাড়া বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারকে এলাকায় দেখা যায়নি। মাস তিনেক আগে তাঁর কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম যাতে তিনি এই বিষয়টি কেন্দ্রের নজরে আনেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও উত্তর পাইনি আমরা। বিজেপি নেতৃত্বও উদাসীন। ভোটের সময় ছাড়া তাঁদের দেখা যায় না গ্রামে।

    জানা গিয়েছে, ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত এই দুই গ্রামের গ্রামবাসীদের মূল জীবিকা চাষবাস। ফি বছর বর্ষায় বহু চাষি নিজেদের জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হন। বাধ্য হয়ে গ্রাম ছাড়তে হয়েছে অনেককে। চাষবাস ছেড়ে তাঁরা বেছে নিয়েছেন অন্য জীবিকা। শেষ সম্বল চাষের জমিটুকু এখনও আগলে রাখতে পেরেছেন যাঁরা, তাঁরা এখন থেকেই কাটাচ্ছেন বিনিদ্র রজনী। আগামী কয়েকটা মাস যেন আশঙ্কায় প্রহর গুনবেন তারা। ভাগীরথীর পাড় ঘেঁষে কোনওক্রমে দাঁড়িয়ে রয়েছে গ্রামের একটি কালীমন্দির। মন্দিরের দাওয়ায় বসেছিলেন স্থানীয় চাষি সনাতন রায়। অশীতিপর চাষির কপালে চিন্তার ভাঁজ। তিনি বলেন, আমার কয়েক বিঘে চাষের জমি ভাগীরথী গিলে খেয়েছে। যেটুকু আছে, সেখানেই চাষ করছি এখন। হয়তো এই বছর সেটাও হারিয়ে যাবে। শুনেছি সাংসদ নাকি চাইলে কিছু একটা করতে পারে। কই তাকে তো কখনও দেখলাম না গ্রামে।

    এই প্রসঙ্গে সাংসদ জগন্নাথ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গঙ্গার ভাঙন নিয়ে এর আগেও আমি কেন্দ্রকে জানিয়েছি। যদিও গঙ্গা ন্যাশনাল রিভার, তবুও ভাঙন রোধে রাজ্যকে একটা মার্জিন তৈরি করে দিতে হয়। সাংবিধানিক নিয়মের বাইরেও আমি চেষ্টা করব যাতে কিছু একটা বিকল্প ব্যবস্থা করা যায়। এই বিষয়টি নিয়ে পার্লামেন্টে প্রস্তাব পেশ করব আমি।

    ‘ঈশ্বর থাকেন ওই গ্রামে, ভদ্রপল্লিতে। এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’, পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসের গ্রামবাসীদের মতোই ভাগীরথী পাড়ের গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বিজেপি সাংসদ তো দিল্লি ছেড়ে এই গ্রামগুলোতে আসেন না। আমাদের দুর্দশার কথা শোনার মত সময় মাননীয় সংসদের আছে কি আদৌ?
  • Link to this news (বর্তমান)