রাজ্যে কমন রেজিস্ট্রির কাজ শেষ মার্চেই পরিষেবা নিশ্চিত প্রত্যেকের
বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
প্রীতেশ বসু, কলকাতা: কারও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে, কিন্তু খাদ্যসাথী নেই। কারও আবার এই দু’টি আছে, অন্য সব শর্ত পূরণ করেছেন, তা সত্ত্বেও লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের খাতায় নাম ওঠেনি। কেউ কেউ আবার বয়স্ক নাগরিকের পেনশনের অপেক্ষায়। সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত এহেন যাবতীয় সমস্যার সমাধানে এবার উদ্যোগী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে কোনও যোগ্য উপভোক্তা যাতে সরকারি পরিষেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত না থাকেন, তা সুনিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে এক বড় পদক্ষেপ— কমন হাউসহোল্ড রেজিস্ট্রি বা সোশ্যাল রেজিস্ট্রি। সোজা কথায়, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথীর মতো সমস্ত সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের উপভোক্তাদের তথ্য একত্র করা। আগামী মার্চ মাসেই সেই কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। কিন্তু তাতে কী সুবিধা হবে? এখানেই লুকিয়ে আসল চমক। নয়া এই ব্যবস্থায় প্রতিটি পরিবারের তথ্য যাচাই করা হবে। দেখে নেওয়া হবে যে, তাদের সদস্যরা ঠিক কোন কোন প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য। আর সেক্ষেত্রে কেউ যদি কোনও পরিষেবার তালিকা থেকে বাদ পড়ে থাকেন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে রাজ্য সরকার। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হবে তাঁর নাম। অর্থাৎ, ন্যায্য প্রাপ্য থেকে রাজ্যের একজন ব্যক্তিও বঞ্চিত হবেন না। আর সবথেকে বড় কথা, এর জন্য চক্করও কাটতে হবে না বিভিন্ন দপ্তরের।
এপ্রসঙ্গে রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, ‘দুয়ারে সরকার কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যের অধিকাংশ গরিব ও সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের আওতায় আনা গিয়েছে। কিন্তু আমরা চাই একজনও যাতে বাদ না পড়েন। সেই কারণেই এই নয়া ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। আগামী দু’মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ ইতিমধ্যে রাজ্যের সাড়ে ন’কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসাথীর অধীনে আনা হয়েছে। খাদ্যদপ্তরের অধীন চলা খাদ্যসাথীর সুবিধা পাচ্ছেন ন’কোটির বেশি বাসিন্দা। নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তরের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে উপভোক্তার সংখ্যাও এখন প্রায় দু’কোটি। এই দপ্তরেরই কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে প্রায় এক কোটি স্কুলছাত্রীকে। আবার বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে জয় বাংলা প্রকল্পের পেনশন পান রাজ্যের বয়স্ক নাগরিকরা। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যর উপভোক্তাদের তথ্যভাণ্ডার কোনও একজায়গায় নেই। পৃথক পৃথকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির কাছে ছড়িয়ে রয়েছে। এবার এই সমস্ত তথ্য এক ছাতার তলায় আনছে নবান্ন। নোডাল দপ্তর হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি দপ্তরকে। সূত্রের খবর, সম্প্রতি নবান্নে এই ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।
প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, দুয়ারে সরকারের পরবর্তী ধাপ হিসেবে ধরা যেতে পারে রাজ্যের এই উদ্যোগকে। আধার সংযুক্তিকরণের মতোই গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগ। কারণ, সমস্ত তথ্য একজায়গায় এলে বাদ পড়বে অযোগ্য উপভোক্তাদের নাম। রাজ্যের কোষাগারের টাকা জলে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে।