• সরকারি শৌচাগার প্রকল্পে হাইস্কুলের শিক্ষক থেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা, ৮৬ শতাংশ আবেদনই ভুয়ো উত্তর ২৪ পরগনা
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • বিশ্বজিৎ মাইতি, বারাসত: সরকারি প্রকল্পে শৌচাগারের জন্য অনলাইনে করা আবেদনের ৮৬ শতাংশই ভুয়ো। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই তথ্য চমকে দিয়েছে সরকারি আধিকারিকদেরও। চমক লুকিয়ে আবেনকারীদের পরিচয়ে। হাইস্কুলের শিক্ষক থেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের নাম রয়েছে ভুয়ো আবেদনের তালিকায়। যাঁরা আবেদন করেছেন তাঁদের কেউ দোতলা বা তিনতলা বাড়ির মালিক। এই প্রকল্পে আবেদনকারীদের আর্থিক অবস্থা যাচাই করতে গিয়েছিলেন সরকারি কর্মীরা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে সার্ভের পর ভুয়ো আবেদনের চাঞ্চল্যকর তথ্যটি সামনে এসেছে। ভুয়ো আবেদনগুলি বাতিল হয়েছে। আগামিদিনে শৌচালয়ের আবেদন ব্লক প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।

    জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর উত্তর ২৪ পরগনা জেলাকে উন্মুক্ত শৌচ মুক্ত(ওডিএফ) জেলা হিসেবে ঘোষণা হয়। একইভাবে এই রাজ্যের সমস্ত জেলা উন্মুক্ত শৌচমুক্ত হিসেবে ঘোষিত। তবে অনেকের বক্তব্য, দফায় দফায় শৌচাগার তৈরির কাজ হয়েছে। এরই মধ্যে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে অনলাইনের মাধ্যমে শৌচাগার তৈরির আবেদন করার সুযোগ পেয়েছিল রাজ্যবাসী। নিয়মানুযায়ী, যাঁরা কখনও শৌচাগার তৈরির জন্য টাকা পাননি তাঁরাই শুধুমাত্র আবেদন করতে পারবেন এই প্রকল্পে। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গিয়েছে, সারা রাজ্যে শৌচাগার নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন ১৫ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫৩৬ জন। তার মধ্যে সব থেকে বেশি (৪ লক্ষ ২০ হাজার ৪৮৪) আবেদন জমা পড়েছিল বীরভূমে। এছাড়া মুর্শিদাবাদে ২ লক্ষ ৬৩ হাজার ২১ জন, মালদহে ১ লক্ষ ৮১ হাজার ৯০২, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৭২৮ ও উত্তর ২৪ পরগনায় ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৪৯৪ জন আবেদন করেছিলেন। আবেদনপত্রের সংখ্যা রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের অবাক করে। তারপর প্রত্যেক জেলাকে আবেদনপত্র খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। উত্তর ২৪ পরগনায় আবেদন যাচাইয়ের জন্য জেলাস্তরের টিম গঠন হয়। শুরু হয় সারপ্রাইজ ভিজিট। পরিদর্শণে গিয়ে হাবড়া ২ নম্বর ব্লকে আধিকারিকরা দেখেন, হাইস্কুলের এক শিক্ষক শৌচাগারের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। অথচ তাঁর দোতলা পাকা বাড়ি রয়েছে। আধিকারিকরা তাঁর বাড়িতে শৌচাগার আছে কিনা প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ঘরে পৃথক শৌচাগার রয়েছে। কিন্তু ঘরের বাইরে নেই। তাই আবেদন করেছি। শিক্ষকের যুক্তি শুনে আধিকারিকরা হতবাক হয়ে যান। একইভাবে দেগঙ্গা, মিনাখাঁ ও বাদুড়িয়াতেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, আবেদনকারীদের সিংহভাগ শিক্ষিত ও অর্থবান। প্রত্যেকের বাড়িতেই শৌচাগার রয়েছে। জেলায় জমা পড়া আবেদন খতিয়ে দেখে উত্তর ২৪ পরগনায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৭৫টি বাতিল করা হয়। মোট ২৭ হাজার ৪৩৩টি আবেদন গ্রহণ হয়েছে। এখনও ৪ হাজার ৪৮৬টি আবেদন খতিয়ে দেখার কাজ চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)