• বইমেলায় জীর্ণ মলাট, শিথিল পাতার ভিতরে অনেকে খুঁজছে হারানো স্মৃতি
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • সায়নদীপ ঘোষ, কলকাতা: বইমেলা মানেই শুধু ঝকঝকে ছাপা নতুন বইয়ের গন্ধ নয়, বইমেলা মানে হারানো বইয়ের খোঁজে ডুবুরির মতো সন্ধানও। জীর্ণ মলাট, শিথিল পাতার মধ্য থেকেও অনেকে খুঁজে নিচ্ছেন বহু দুষ্প্রাপ্য ভালোলাগার বই। নেড়েচেড়ে দেখছেন। পছন্দের বই নিয়ে চলছে বিক্রেতার সঙ্গে দরাদরিও। 

    বইমেলা প্রাঙ্গণের ন’নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে ডানদিকে গেলেই চোখে পড়বে ‘সবুজপত্র’-র স্টল। এখানে মিলছে সব ধরনের পুরনো ও দুষ্প্রাপ্য বই, পুস্তিকা, সিনেমার বুকলেট সহ বিভিন্ন জিনিস। 

    এখনও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বর্ণযুগের সিনেমার বুকলেট সংগ্রহ করার ইচ্ছা প্রবল। বান্ডিল বান্ডিল পুরনো বইয়ের মাঝে রয়েছে গত শতাব্দীর একাধিক সিনেমার বুকলেট। সবথেকে বেশি চাহিদা সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার বুকলেটের। ‘চারুলতা’, ‘দেবী’-র পাশাপাশি দিব্যি চাহিদা রয়েছে ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেনের সিনেমার বুকলেটেরও। এই সিনেমার বুকলেট ছিল সেই সময়কার অসামান্য সৃষ্টি। লম্বা কাগজে বিভিন্ন রংয়ের ব্লক প্রিন্টে থাকত মুক্তি পাওয়া সিনেমা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য। ছবির কলাকুশলীর নামের পাশাপাশি থাকত গানের কথা, কাহিনির সারসংক্ষেপ সহ বহু তথ্য। তখন প্রেক্ষাগৃহে ঢোকা প্রায় প্রত্যেক মানুষের হাতেই দেখা যেত বুকলেট।  বিগত ৪০ বছর ধরে এসব বহুমূল্য বস্তু সংগ্রহ করেছেন সংস্থার কর্ণধার শুভাশিস ভট্টাচার্য।

    পুরনো বইয়ের পাশাপাশি বুকলেট ঘাঁটতে ব্যস্ত একদল মানুষ। এরই মধ্যে তিন চারটে রঙিন বুকলেট হাতে এগিয়ে এলেন এক ব্যক্তি। ‘সাত পাকে বাঁধা’র সঙ্গে সেখানে রয়েছে প্রবোধকুমার সান্যালের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি চলচ্চিত্র ‘মহাপ্রস্থানের পথে’। ভদ্রলোকের মুখে উজ্জ্বল হাসি। বিলিং কাউন্টারে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘এগুলো কত পড়বে?’ শুভাশিসবাবু কিছু বলার আগেই তিনি ফের বলে উঠলেন, ‘আমার পরিবার সংক্রান্ত এমন মূল্যবান জিনিস যে আপনার কাছে পাব ভাবতে পারিনি। প্রবোধকুমার সান্যাল ছিলেন আমার ছোট ঠাকুরদা।’ কথাটা শুনেই কিছুটা থমকে গেলেন শুভাশিসবাবু। জিনিসটা যে যোগ্য ব্যক্তির কাছে যাচ্ছে, সেটা দেখে তিনিও যেন সমানভাবে আনন্দিত। বুকলেটগুলি ভালোভাবে দেখে উত্তর দিলেন, ‘আপনি ৮০০ টাকা দিন।’ আনন্দের সঙ্গে টাকা মিটিয়ে দিলেন প্রবোধকুমার সান্যালের নাতি সম্রাট সান্যাল। পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী হলেও ছোট ঠাকুরদাকে নিয়ে একটি ছোট সংগ্রহশালা তৈরি করছেন পাইকপাড়ার বাসিন্দা সম্রাট। বইমেলা থেকে সংগ্রহ করা এই বুকলেট তার শোভা আরও বৃদ্ধি করবে। সম্রাটের কথায়, ‘আমি এখানে শুধু পুরনো বই আর বুকলেট দেখতে এসেছিলাম। এতো বুকলেটের মধ্যে যে ছোট ঠাকুরদার লেখা কাহিনি অবলম্বনে তৈরি সিনেমার বুকলেট পাব, তা ভাবতেই পারিনি। বিষয়টি ভেবেই খুব রোমাঞ্চিত বোধ করছি।’ 

    সবাই যে কিনছেন, তা নয়। কিন্তু অনেক বয়স্ক মানুষই পুরনো বই নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে হারিয়ে যাচ্ছেন সোনালি স্মৃতির জগতে।
  • Link to this news (বর্তমান)