• ডালহৌসির অফিসে হঠাৎ বিষাক্ত গ্যাস, অসুস্থ ১৪ তরুণী
    বর্তমান | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কাঁটায় কাঁটায় সকাল ১০টা। ব্যস্ত ডালহৌসির আর এন মুখার্জি রোড। কর্মীরা হন্তদন্ত হয়ে অফিসে ঢুকতে শুরু করেছেন। একই দৃশ্য ১৯ নং ঠিকানার প্রাইভেট ইনসিওরেন্স অফিসেও। আসলে ওই বিমা কোম্পানির একটি আউটসোর্সিং সংস্থার কলসেন্টার এটি। মর্নিং শিফট শুরু ১০টায়।

    ঢুকতে না ঢুকতেই কটু গন্ধ নাকে আসে কর্মীদের। ধীরে ধীরে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াই তখন কঠিন। প্রথমে কাশতে শুরু করলেন, তারপর নাকে রুমাল চাপা দিয়ে কোনওক্রমে ওই ঝাঁঝালো গন্ধ থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করলেন কর্মীরা। ভিতরে তখন কমপক্ষে ৩০-৩৫ কর্মী। অধিকাংশই তরুণী। বয়স ২০-৩০ বছরের মধ্যে। শেষে আর থাকতে না পেরে কাশতে কাশতে তাঁরা বেরিয়ে আসতে শুরু করলেন। 

    ১১টা-সাড়ে ১১টার মধ্যে ভিড় বাড়তে শুরু করল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সিতে। তীব্র শ্বাসকষ্টের জন্য‌ ওই অফিসের সবশুদ্ধ ১৪ জন তরুণীকে আনা হল মেডিক্যালে। তাঁদের মধ্যে প্রিয়াঙ্কা কোলে (২১), পল্লবী ঘোষ (২৬) ও অসীমা অধিকারীকে (২৩) ভর্তি করা হয় হাসপাতালের এমসিএইচ বাড়ির তিনতলার ফিমেল ওয়ার্ডে। ইমার্জেন্সি অবজারভেশনে রেখে বাকিদের শুরু হয় চিকিৎসা। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি তিনজন বাড়ি যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করায় রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ ‘লামা’ (লিভ এগেইনস্ট মেডিক্যাল অ্যাডভাইস) করে ছুটি দেওয়া হয় তাঁদের।

    কিন্তু কীভাবে এই কাণ্ড হল? কী গ্যাস ছিল সেটি? অফিসের এক কর্মী শীর্ষেন্দু মণ্ডল মেডিক্যাল কলেজের অবজারভেশনে থাকা সহকর্মীদের খোঁজ নিতে নিতে বলছিলেন, ‘সোমবার রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পেস্ট কন্ট্রোল করা হয়েছিল অফিসের সর্বত্র। সকালে সাফাইকর্মীরা অফিসঘর, বাথরুম ইত্যাদি পরিষ্কার করার জন্য অ্যাসিড ও অন্য কোনও রাসায়নিক দিয়েছিলেন বোধহয়। তারপর আমরা অফিসে আসার পর এসি চালু হতেই বাজে, দমবন্ধ করা গ্যাসে অফিস ভরে যায়। সবাই একে একে অসুস্থ হতে শুরু করেন’। 

    পুলিস জানিয়েছে, অফিসে প্রচুর আরশোলা হওয়ায় সোমবার রাতে পেস্ট কন্ট্রোলের কর্মীরা কাজ শুরু করেন। সকালের দিকে মর্নিং শিফটের আগে সাফাইকর্মীরা অ্যাসিড ইত্যাদি ঘর পরিষ্কার করেছিলেন। কর্মীরা আসার পর এসি চালাতেই বিপত্তি। দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় গ্যাস অফিসময় ছড়িয়ে পড়ে। অসুস্থ হয়ে পড়েন কর্মীরা।

    চিকিৎসকরা বলেন, ‘অসুস্থদের গুরুতর কিছু হয়নি। মশা মারার তেলে পাইরিথ্রিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক থাকে। তার উপর অ্যাসিড পড়লে এক ধরনের ঝাঁঝালো গ্যাস উৎপন্ন হয়। দুই মিলেমিশে কোনও বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হতে পারে। ওঁদের ইনহেলেশন ইনজুরি হয়েছিল। এখন সকলেই ভালো আছেন’।
  • Link to this news (বর্তমান)