• ৫ বছরে ৬০ লক্ষ কোটির করফাঁকির
    বর্তমান | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: ইনকাম ট্যাক্স আদায়ে নাকি জোর দিচ্ছে মোদি সরকার! আয়কর ফাঁকির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ বা কর্পোরেট সংস্থা যাতে কোনও সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্য হরেক চেষ্টাও চলছে। তারপরও নাকি আইনের ফাঁকফোঁকর গলে বেরনোর রাস্তা খুঁজে বের করে ফেলছেন করদাতারা। আর তাই প্রতি বছর বাড়ছে করফাঁকির পরিমাণ। এই দাবি খোদ আয়কর দপ্তরের। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তারা জানাচ্ছে, বিগত পাঁচটি অর্থবর্ষে কর নিষ্পত্তির যে মামলা ঝুলে আছে, তাতে করফাঁকির অভিযোগের অঙ্ক ৫৮ লক্ষ ২৮ হাজার কোটি টাকা! এখানেই শেষ নয়, দপ্তরের কর্তারা বলছেন, অঙ্কটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। সত্যিই কি তাই? বাৎসরিক আদায় যা, প্রায় সেই অঙ্কের আয়কর ফাঁকির মামলা হওয়াও কি সম্ভব? নাকি সবটাই পাবলিককে হেনস্তার ফন্দিফিকির? নিয়ম কী বলছে? 

    সাধারণ মানুষ হোক, বা বাণিজ্যিক সংস্থা—যাঁরা আয়কর দেন, তাঁদের এক শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে ‘রিটার্ন’ স্ক্রুটিনি বা পরীক্ষা করে দেখে আয়কর দপ্তর। দপ্তর সূত্রে খবর, এই স্ক্রুটিনির হার ০.২৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৪০০ জন আয়কর রিটার্ন জমা করলে, তার মধ্যে একটি রিটার্ন খতিয়ে দেখে দপ্তর। তা পর্যালোচনার পর যদি অফিসারদের মনে হয় কম অঙ্কের আয়কর দেওয়া হয়েছে, তাহলে বকেয়া কর দাবি করে নোটিস পাঠানো হয়। তারপর করদাতা সেই টাকা মিটিয়ে দেন, অথবা তিনি ‘আপিল’ করেন বিচার চেয়ে। সেখানে আয়কর দপ্তর ওই আবেদনকারীর বিরুদ্ধে করফাঁকির অভিযোগ আনে। এর সঙ্গে যোগ হয় আয়কর হানা থেকে উঠে আসা বকেয়া করের অঙ্কও। গত পাঁচ বছরের সেই পরিসংখ্যানই সরকার লোকসভায় পেশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে গত কয়েকটি অর্থবর্ষে দেশজুড়ে ৫ থেকে ২৪ লক্ষ কোটি টাকার করফাঁকির অভিযোগের বিরুদ্ধে ‘আপিল’ জমা পড়েছে। অর্থাৎ, আয়কর দপ্তর স্ক্রুটিনি করে দেখেছে, এত পরিমাণ টাকা আম জনতা বা কর্পোরেট সংস্থা জমা করেনি। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। 

    সরকার প্রতি বছরই আয়কর আদায়ের পরিমাণ লিখিতভাবে দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করে। সংসদে সে নিয়ে বাজেটের সময় চর্চাও হয়। সেই পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে প্রায় ১২.০৬ লক্ষ কোটি টাকা আয়কর আদায় হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে সেই অঙ্কটা ছিল ১৩.৯৫ লক্ষ কোটি এবং চলতি অর্থবর্ষের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আদায়ের পরিমাণ প্রায় ১৪.৭১ লক্ষ কোটি টাকা। অথচ ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ২৪.৫২ লক্ষ কোটি এবং তার পরের বছর ১৪.১৯ লক্ষ কোটি করফাঁকির দাবির বিরুদ্ধে ‘আপিল’ হয়েছে! সোজা কথায়, স্ক্রুটিনির আওতায় থাকা মাত্র ০.২৫ শতাংশ করদাতা যে পরিমাণ টাকা দেয়নি বলে দপ্তরের দাবি, তা দেশের বাৎসরিক কর আদায়ের সমান। এও কি সম্ভব? ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, সবটাই আয়কর দপ্তরের টার্গেট পূরণের দাবি। বহু ক্ষেত্রেই বিপুল অঙ্ক চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্ক্রুটিনির নামে। সেই দাবির চাপে হেনস্তা হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ বা ব্যবসায়ীদের। নাকি গোড়াতেই গলদ? গোটা আয়কর ব্যবস্থায় কি বড় কোনও খামতি থেকে যাচ্ছে, যার দাম চোকাতে হচ্ছে দেশকে?     
  • Link to this news (বর্তমান)