• Stephen Constantine: প্লে অফের যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে আইএসএল অভিযান শুরু করবেন কনস্ট্যানটাইন 
    আজকাল | ০২ অক্টোবর ২০২২
  • সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: ইমামি ইস্টবেঙ্গল-কেরল ব্লাস্টার্স ম্যাচ দিয়ে আইএসএলের ঢাকে কাঠি পড়বে।

    দশমীর দিন দল নিয়ে কেরল পাড়ি দেবেন স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন। তার আগে ষষ্ঠীর দুপুরে শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ইস্টবেঙ্গল কোচ। আইএসএল অভিযান শুরু করার আগে ফুরফুরে মেজাজে পাওয়া গেল কনস্ট্যানটাইনকে। জাতীয় দলের কোচ থাকাকালীন কঠোর মনোভাবের জন্য পরিচিত ছিলেন। বরাবরই প্রচারমাধ্যমের সঙ্গে বিশেষ সক্ষতা রাখতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এদিন একেবারে ভিন্ন মেজাজে ধরা দিলেন। ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল প্রস্তুতি থেকে জাতীয় দল, নির্দ্বিধায় যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন। ডুরান্ড কাপের পর বেশ কয়েকটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে লাল হলুদ। কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচকে মেলাতে চান না। এই ম্যাচগুলোর মাধ্যমে দলের খেলায় একটা সিস্টেম আনতে চান ইস্টবেঙ্গল কোচ। কিন্তু আইএসএলের প্রথম ম্যাচের জন্য কতটা প্রস্তুত দল? কনস্ট্যানটাইন বলেন, 'আইএসএলের প্রত্যেক ম্যাচই কঠিন হবে। তাই লিগ শুরু হওয়ার আগে নিজের টিমকে কোনও রেটিং দেব না। ফ্রেন্ডলি ম্যাচের সঙ্গে মেলালে চলবে না।এই ম্যাচের রেজাল্টে গা ভাসিয়ে দিলে হবে না। আমি দলকে একটা সিস্টেমে আনার চেষ্টা করছি। কেরল শক্তিশালী দল। কোচও ভাল। কয়েকজন ফুটবলার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু গত দু'বছর ধরে বাকি দলটা এক আছে। সেখানে আমরা মাত্র দু'মাস প্রস্তুতির সময় পেয়েছি।প্রত্যেক সপ্তাহে আমাদের পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে।'

    আইএসএলে এখনও পর্যন্ত সাফল্য নেই ইস্টবেঙ্গলের। কোন লক্ষ্য সেট করে এগোবেন? কনস্ট্যানটাইন বলেন, 'শুধু আইএসএলের দুই বছর কেন? আমরা ২০ বছর পিছিয়ে। শেষবার কবে লিগ জিতেছে? আমরা আইএসএলের অন্যান্য দলের থেকে দু'মাস পরে শুরু করেছি। প্লে অফের যোগ্যতা অর্জন করতে পারলেই মিরাকেল। তবে আমরা প্রত্যেক ম্যাচ জেতার লক্ষ্য নিয়েই নামব।' এর আগে ভারতের ক্লাব ফুটবলের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও আইএসএলের খবর রাখতেন। ব্রিটিশ কোচের দাবি, প্রতি বছর প্রতিযোগিতার মান বাড়ছে। তবে আইএসএলে প্রমোশন এবং অবনমনের পক্ষে ইস্টবেঙ্গল কোচ। এই প্রসঙ্গে স্টিফেন বলেন, 'আইএসএল অন্তত ১২ দলের হওয়া উচিত। প্রমোশন এবং রেলিগেশন থাকা উচিত। তাহলেই প্রতিযোগিতামূলক লিগ হবে। তবে সপ্তাহান্তে ম্যাচ রাখার সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক। এটা উইকএন্ড স্পোর্ট। আয়োজকদের এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয়।' ডুরান্ডে সাফল্য পায়নি ইস্টবেঙ্গল। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে। এদিন লাল হলুদ কোচ জানিয়ে দেন, নক আউট পর্বে কোয়ালিফাই করার চেষ্টাও করেনি ইস্টবেঙ্গল। এই প্রসঙ্গে কনস্ট্যানটাইন বলেন, 'মুম্বইয়ের মতো দলকে হারানো আমাদের জন্য ভাল রেজাল্ট ছিল। আমরা প্রস্তুতির জন্য দু'সপ্তাহও সময় পাইনি। বেশিরভাগ দল বিদেশি নিয়েই খেলতে এসেছিল। আমাদের সেট হতে কিছুটা সময় লাগত। সত্যি বলতে আমরা কোয়ালিফাই করারও চেষ্টা করিনি। ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হিসেবে নিয়েছিলাম। প্রস্তুতিই প্রধান লক্ষ্য ছিল।' ডুরান্ডের চারটে ম্যাচের জন্য নিজের আসল লক্ষ্য থেকে সরতে চাননি লাল হলুদের ব্রিটিশ কোচ। 

    গত দু'বছর আইএসএল ডার্বি জিততে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। এবার কি সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটবে? স্টিফেন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আপাতত ডার্বি নিয়ে ভাবছেনই না, পাখির চোখ কেরল ম্যাচ। প্রথম ম্যাচ কেরলের দর্শকঠাসা স্টেডিয়ামে খেলা কঠিন মেনে নিলেন। তবে জয়ের জন্যই ঝাঁপাবে ইস্টবেঙ্গল। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে কী বার্তা দিলেন ব্রিটিশ কোচ? কনস্ট্যানটাইন বলেন, 'সমর্থকদের প্রত্যাশা থাকা স্বাভাবিক। আমাদের লোকানোর কোনও জায়গা নেই। জাতীয় দলের কোচ থাকাকালীনও ১ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষের প্রত্যাশা সামলাতে হয়েছে। এবারও অসংখ্য সমর্থক আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে।' ডুরান্ড কাপের প্রথম তিন ম্যাচে গোল পেতে সমস্যা হয়েছিল লাল হলুদের। যদিও মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে এবং পরবর্তীতে প্রস্তুতি ম্যাচে একাধিক গোল পেয়েছে ইস্টবেঙ্গল। লাল হলুদ কোচের দাবি, স্ট্রাইকিং সমস্যা মিটে গিয়েছে। কেরল ম্যাচে ক্লিনশিট রাখাই লক্ষ্য। স্টিফেন বলেন, 'স্কোরিং নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কেরল ম্যাচে যাতে আমরা কোনও গোল না হজম করি সেদিকে নজর রাখতে হবে। একটা না দুটো গোল পেলাম সেটা বড় বিষয় না। ক্লিনশিট রাখার চেষ্টা করতে হবে।' কলকাতা লিগের সুপার সিক্সের প্রথম ম্যাচে উন্নিকৃষ্ণণ, জেসিন টিকের মতো তরুণরা নজর কেড়েছেন। তবে এখনই তাঁদের সিনিয়র দলে নেওয়ার কথা ভাবছেন না লাল হলুদ কোচ। আরও পরোখ করে নিতে চান। হাবেভাবে সেই ইঙ্গিতই দিলেন।

    দুই দফায় দীর্ঘ বছর জাতীয় দলের কোচ ছিলেন স্টিফেন। এবার ক্লাব কোচিংয়েও হাতেখড়ি হয়ে গেল। কোনটা বেশি কঠিন? কনস্ট্যানটাইন বলেন, 'ক্লাবে প্লেয়ারদের সঙ্গে অনেক বেশি সময় পাওয়া যায়। কিন্তু জাতীয় দলে সেই সময়টা থাকে না। প্লেয়ারদের একটা নির্দিষ্ট সিস্টেমে আনার সময়টুকুও থাকে না একজন জাতীয় দলের কোচের হাতে। কিন্তু ক্লাবে প্রত্যেক দিন সেটা করার সুযোগ থাকে। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে একটা ম্যাচে হারলে পরের ম্যাচের জন্য দু'মাস অপেক্ষা করে থাকতে হয়। কিন্তু ক্লাব স্তরে পরের ম্যাচেই শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকে।' প্রাক্তন জাতীয় কোচের দাবি, ভারত-ভিয়েতনাম ম্যাচ তিনি দেখেননি। তবে বছর দশেক আগে এই ভিয়েতনামকেই ৩-০ গোলে হারিয়েছিল ভারত। কিন্তু এবার একেবারে উলটপুরাণ। এর কারণ নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও, রোগ খুঁজে ফেলেছেন সুনীলদের প্রাক্তন কোচ। স্টিফেন বলেন, 'দীর্ঘ ২০ বছরে প্লেয়ারদের ধরন বদলেছে। আমার সময় দলে একাধিক লিডার ছিল। আনচেরি, বিজয়ন, বাইচুং, দেবজিৎ, ক্লাইম্যাক্স, অ্যালভিটো।‌ এরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে শক্তপোক্ত ছিল।' সময়ের সঙ্গে ফুটবলারদের ধরন বদলালেও ভারতীয়দের প্রশংসা করেন ব্রিটিশ কোচ। একইসঙ্গে ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়েও আশাবাদী। 
  • Link to this news (আজকাল)