• গরম পড়তেই পানীয় জলের সঙ্কট শহরে
    বর্তমান | ১৪ মার্চ ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: গরম পড়তেই পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে শিলিগুড়িতে। কোথাও স্ট্যান্ড পোস্ট দিয়ে সুতোর মতো জল পড়ছে, আবার কোথাও সেটুকুও পড়ছে না। শুখা মরশুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা। জল সরবরাহের এই পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েছে শিলিগুড়ি পুরসভা। তাদের বক্তব্য,  চাহিদার তুলনায় জল উৎপাদন কম হওয়ায় এমন পরিস্থিতি। এর মোকাবিলায় অম্রুত-২ প্রকল্পে নতুন করে একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও ১৩টি রিজার্ভারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। 

    শিলিগুড়ি শহরের জল সঙ্কট দীর্ঘদিনের। গরম পড়তেই সেই সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুরসভার বসানো স্ট্যান্ড পোস্টে নিয়মিত জল পড়ছে না বলে অভিযোগ। দু’বেলার জায়গায় কোনও স্ট্যান্ড পোস্টে একবেলা জল পড়ছে। তাও আবার সুতোর মতো। জলের গতি নেই। কোনও কোনও জায়গায় স্ট্যান্ড পোস্ট দিয়ে জলই পড়ছে না। এমনকী পুরসভার সরবরাহ করা নলবাহী পানীয় জল বাড়িতেও নিয়মিত আসছে না। শহরের ৪৭টি ওয়ার্ডেই কমবেশি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন জায়গায় স্ট্যান্ড পোস্টের সামনে জলের জন্য পাত্র নিয়ে দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন বাসিন্দারা। শহরবাসীরা এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, শীতের মরশুমে জল কম এলেও সমস্যা সেভাবে বোঝা যায়নি। এখন জল কম আসায় চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। জল কিনে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বস্তি এলাকার বাসিন্দারা বলেন, স্ট্যান্ড পোস্টে সুতোর মতো জল পড়ছে। তাই দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সকলেরই বক্তব্য, এ ব্যাপারে পুরসভা এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভরা শুখা মরশুমে জলের সঙ্কট আরও বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে পুরসভার বিরোধী দল বিজেপি সরব হয়েছে। সোমবার তারা শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে অভিনব কায়দায় বিক্ষোভ দেখায়। বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজু সাহা বলেন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। এখানে বহুদিন ধরে স্ট্যান্ড পোস্ট দিয়ে জল পড়ে না। তাই স্ট্যান্ড পোস্টের ‘শ্রাদ্ধানুষ্ঠান’ করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। 

    পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মহানন্দা লিঙ্ক ক্যানেলের জল ফুলবাড়ির প্ল্যান্টে পরিস্রুত করে সরবরাহ করা হয়। এ জন্য শহরে ১৬টি ওভারহেড রিজার্ভার ও এক হাজার ৬০০টি স্ট্যান্ড পোস্ট রয়েছে। বহু বাড়িতে জলের সংযোগ আছে। বর্তমানে শহরে নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জলের চাহিদা দিনে প্রায় ৮ কোটি লিটার। কিন্তু এখন উৎপাদন হচ্ছে দিনে সাড়ে ৫ কোটি লিটার। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় এখানে দিনে প্রায় ২কোটি ৫০ লক্ষ লিটার কম জল মিলছে। 

    পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পরিষদ সদস্য দুলাল দত্ত বলেন, শহরে লোকসংখ্যা বেড়েছে। তাই জলের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু, চাহিদার তুলনায় জল কম উৎপাদন হওয়ায় এদিক ওদিক করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে আটটি ডিপ টিউবওয়েল চালু করা হয়েছে। একটি টিউবওয়েলে আয়রন প্লান্ট বসানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অম্রুত-২ প্রকল্পের অধীনে মেগা জল প্রকল্প তৈরির চেষ্টা চলছে। 

    পুরসভা সূত্রের খবর, অম্রুত-২ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং ১৩টি জায়গায় ওভারহেড রিজার্ভার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে একটি প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে।   
  • Link to this news (বর্তমান)