• রাজ আমলের পিলখানা দিঘি পরিত্যক্ত ডোবা, সংস্কারের দাবি পুরবাসীর
    বর্তমান | ১৪ মার্চ ২০২৩
  • সংবাদদাতা, মাথাভাঙা: মেখলিগঞ্জ শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে রাজ আমলের শতাব্দীপ্রাচীন পিলখানা দিঘি এখন বুজে গিয়ে ডোবায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে দিঘিটি সংস্কার করার দাবি জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না পুরসভা। বাজারের উত্তর-পূর্ব দিকে পিলখানা দিঘিটি রয়েছে। স্থানীয়রাই জানান, এই দিঘির সঙ্গে মেখলিগঞ্জ শহরের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। একইসঙ্গে বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য কোনও জলাধার না থাকায় দিঘিটি সংস্কার করে জলাধার তৈরি করাও সম্ভব। মেখলিগঞ্জ পুরসভা অবশ্য দাবি করেছে, দিঘিটি সংস্কার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে দিঘি সংস্কার করার প্রস্তাব রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। 

    বামআমলে দিঘির পাড় দখল রুখতে সীমানা প্রাচীর দিয়েছিল পুরসভা। বর্তমানে সেই প্রাচীরের কয়েক জায়গায় ভেঙেও গিয়েছে। দিঘির চারদিকে আর্বজনা ফেলেন একাংশ স্থানীয় বাসিন্দা সহ ব্যবসায়ীরা। পূর্বদিকে বেশকিছুটা জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বাড়িঘর। পিলখানা দিঘি এখন তাই আর দিঘি নেই, একটি নোংরা আর্বজনায় ভর্তি ডোবায় পরিণত হয়েছে। অথচ স্থানীয় বয়স্ক অনেক বাসিন্দার দাবি, কোচবিহার রাজআমলে এই শহরে স্থানীয় বিত্তশালী ব্যক্তিরা হাতির পিঠে চড়ে বাজার করতে এসে এই দিঘিতে হাতিকে জল খাওয়াতেন, স্নান করাতেন। ব্যবসায়ী ও ক্লান্ত পথচারীরা দিঘির জলে স্নান করে ক্লান্তি দূর করতেন। তারপর তিস্তা নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। কালের আর্বতে পিলখানা দিঘিও তার চরিত্র বদলে বর্তমানে একটি ডোবায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী নরেন তরফদার, জীবন সাহা প্রমুখ বলেন, বাজার এলাকায় কোনও জলাধার নেই। শুকনো দিনে তিস্তাও শহরের দিক থেকে সরে গিয়ে কয়েক কিমি দূরে চলে যায়। যে কোনও অগ্নিকাণ্ডে দমকল বিভাগকে জল সরবরাহে সঙ্কটের মুখে পড়তে হয়। তাই ঐতিহাসিক এই দিঘিটি সংস্কার করা একান্ত প্রয়োজন। দিঘিটি থাকলে শহরের ইতিহাসও বেঁচে থাকবে। দিঘিতে আর্বজনা ফেলার উপর এখনই নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত পুরসভার। এ জন্য নজরদারির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। 

    এ ব্যাপারে শহরের বাসিন্দা তথা ব্যবসায়ী সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা তথা তৃণমূল নেতা বিষ্ণুপদ ঘোষ বলেন, পিলখানা দিঘিটির সঙ্গে শহরের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। একইসঙ্গে দিঘিটি সংস্কার করলে শহরে জলাধারও তৈরি হবে। এ নিয়ে আমরা পুরকর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানিয়েছি। পুরসভা পরিকল্পনাও নিয়েছে শুনেছি। আমরা চেষ্ট করছি দিঘিটিকে আবারও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। 

    প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক পরেশচন্দ্র অধিকারী বলেন, পিলখানা দিঘিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আগে একবার সীমানা প্রচীর তুলে দেওয়া হয়েছিল। অনেক জায়গায় দিঘিটি ভেঙে গিয়েছে। দিঘির সঙ্গে শহরের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। পুরসভাকে নিয়ে আমরা পরিকল্পনা তৈরি করব। মেখলিগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান কেশবচন্দ্র দাস বলেন, পিলখানা দিঘিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে সংস্কারের প্রস্তাব রাজ্যে পাঠিয়েছি। বরাদ্দ এলে কাজ শুরু করা হবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)