• উন্নয়নের জোয়ারেও বুদবুদে ‘কাঁটা’ শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব
    বর্তমান | ১৪ মার্চ ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: পাঁচ দশক পর বুদবুদ বাজারের ড্রেন সংস্কারে হাত দিল প্রশাসন। খুশি এলাকার মানুষ। আলোয় ঝলমলে হয়েছে বুদবুদ বাজার। মার্চ মাসের মধ্যে বুদবুদ সহ গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির ১৬টি রাস্তা সংস্কার হতে চলেছে। বহু জায়গায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছচ্ছে। উন্নয়নের এমন মসৃণ পথে কাঁটা শুধু শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। দিদির দূত কর্মসূচিতে এসে সেই দ্বন্দ্বের আঁচ পেয়েছেন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দ্বন্দ্ব-কাঁটা না উঠলে উন্নয়নের ফসলে পোকা লাগতে বাধ্য।

    পানাগড় সেনা ছাউনি দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেনার সংখ্যাও বেড়েছে অনেকটাই। আর এই সেনা ছাউনির সবচেয়ে কাছের বাজারই হল বুদবুদ। বুদবুদ বাজারের একটি রাস্তা অ্যামুনেশন রোড নামেই পরিচিত। বহু সেনা জাওয়ানের পরিবার এখানে বাড়ি বানিয়েছেন। কেউ বা ভাড়ায় থাকেন। পঞ্চায়েত এলাকা হলেও জীবনযাত্রায় পুরসভার ‘স্ট্যাটাস’। বুদবুদ বাজারের জন্য শেষবার নিকাশি নালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। তার পর এবারই প্রথম পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে হাই ড্রেন হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও ১০ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছে এই খাতে। বুদবুদ বাজার আলোয় সেজে উঠেছে বুদবুদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সৌজন্যে। 

    মার্চ মাসের মধ্যে ১৬টি রাস্তা সংস্কার হবে। তার মধ্যে মানকরে রাস্তায় সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকা, পুরসায় ৪১ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা, শোধপুর গ্রামের জন্য ৫৪ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা, তিলডাঙা থেকে সিমনোর গ্রাম পর্যন্ত ৩১ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে রাস্তা সংস্কার হবে। যে সব গ্রামের রাস্তা খারাপ প্রায় প্রতিটি রাস্তাই সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের ক্ষোভে প্রলেপ পড়বে। এছাড়াও কৃষি প্রধান এলাকায় কৃষক বন্ধু প্রকল্প ও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার শাসকদলকে এগিয়ে রাখছে। 

    অনামিকা সাহা বলেন, আগে কলকাতায় থাকতাম, এখন বুদবুদে থাকি। কোনও সমস্যা নেই। বাজারের নিকাশি সমস্যা মিটে গেলে আরও ভালো হয়। বুদবুদ সুভাষপল্লির সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, কাজ তো হয়েছেই। আমাদের এখানেও বাড়ি বাড়ি পানীয় জল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা দ্রুত করলে ভালো হয়। 

    কিন্তু বিরোধী শূন্যতা ও উন্নয়নের জোয়ারেও তৃণমূলকে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বুদবুদ পঞ্চায়েতে শাসকদলের দ্বন্দ এমন পর্যায়ে যে তৃণমূল সদস্যর এলাকাতেও বঞ্চনার অভিযোগ ওঠে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। যার ফল ভোগ করতে হয় সাধারণ মানুষকে। পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধির ব্যবহার নিয়েও বুদবুদ বাজারে ক্ষোভ আছে। নেতার ঔদ্ধত্যে লাগাম না টানলে চিন্তা বাড়বে শাসক শিবিরের। শাসকদলের জনাকয়েক পঞ্চায়েতের প্রতিনিধির বিপুল আর্থিক উন্নতি নিয়ে সরব দলেরই একাংশ। দিদির দূত কর্মসূচির জন্য তৃণমূলের পতাকা লাগাতে গিয়ে তৃণমূল নেতার হাতে মার খেয়ে ১৮টি সেলাই পড়েছে এক তৃণমূল কর্মীর। এ নজিরে উৎসাহিত বিরোধীরা।

    ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় বলেন, বেনিয়মের সঙ্গে কোনওদিন আপোস করিনি। প্রতিটি বুথ ধরে আমি কর্মসূচি করছি, দলের ভালো ফল হবে। জেলা সহসভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ব্লক সভাপতি সবাইকে নিয়ে চলছেন না। বিধায়ক নেপাল ঘোড়ু‌ই বলেন, আগের তুলনায় দ্বন্দ্ব কমেছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা মিটে যাবে। পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি অনুপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাম আমলে কেন ড্রেন করা হয়নি। আমরাই উন্নয়ন করেছি। সিপিএম নেতা কমল সরকার বলেন, আমাদের আমলেই প্রথম অ্যামুনেশন রাস্তা তৈরি হয়। কোনও বঞ্চনা হয়নি। কংগ্রেস নেতা জয়গোপাল দে বলেন, ড্রেনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। রাজ্যে সরকারের বেনিয়মের আঁচ বুদবুদেও পড়বে।  নিজস্ব চিত্র 
  • Link to this news (বর্তমান)