• পিস্তল উঁচিয়ে শাসানি, বিতর্কে বিজেপি নেত্রী রাতে দলীয় নেতার বাড়িতে চড়াও, হুঙ্কার
    বর্তমান | ১৪ মার্চ ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: বর্ধমানে পিস্তল দেখিয়ে দলের এক নেতাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিজেপি নেত্রীর বিরুদ্ধে। ঘটনার জেরে দলের অন্দরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিজেপি নেতা ইন্দ্রনীল গোস্বামীর স্ত্রী বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, রবিবার রাত ১টা নাগাদ বিজেপির মহিলা মোর্চার সাধারণ সম্পাদিকা পূজা দেবনাথ ও তাঁর তিন সঙ্গী বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন। 

    পূজা নীচে দাঁড়িয়ে তিনজনকে পাইপ বেয়ে উপরে ওঠার নির্দেশ দেন। ওদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে বিজেপি নেত্রী পিস্তল উঁচিয়ে তাঁদের শাসাতে থাকেন। বাড়ির সবাইকে তিনি গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সেই সময় পাড়ার লোকজন ছুটে এলে সকলে পালিয়ে যায়। বর্ধমানের লাকুর্ডি শিবতলা এলাকায় এই ঘটনা ঘিরে জেলা রাজনীতিতে শোরগোল পড়েছে।

    যদিও পূজাদেবী তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এধরনের অভিযোগ করা হয়েছে বলে প্রথম শুনলাম। ওঁদের কেন হুমকি দিতে যাব?

    বিজেপি নেতা ইন্দ্রনীল গোস্বামী বলেন, ওই ঘটনার পর আতঙ্কে আছি। মাঝ রাতে ওরা বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। অন্ধকার থাকায় ছবি তোলা যায়নি। কিছু না হলে অকারণে কেন অভিযোগ করতে যাব? যুব মোর্চার গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলাম। দলের বদনাম করার কোনও উদ্দেশ্য নেই। 

    বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগেও দলের আরএক নেতাকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কেশব কোনার নামে ওই নেতা শক্তিগড় থানায় বিজেপির দুই যুব নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, দলের নিয়ন্ত্রণ এখন মস্তানদের হাতে রয়েছে। ওদের হাতে কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্র আসছে সেটা তদন্ত করা দরকার। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দলীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বর্ধমানে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল ব্রেআব্রু হয়ে গিয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বিধানসভা নির্বাচনের আগে জেলা পার্টিঅফিস ভাঙচুর করা হয়। 

    ওই ঘটনার পর রাজ্য নেতৃত্ব কয়েকজনকে শোকজ করে দায় সারে। কড়া পদক্ষেপ না নেওয়ায় দলের কোন্দল বেড়েই চলেছে। দলের এক গোষ্ঠী ময়দানে না নেমে সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের কুৎসা করছে। তারা জেলার কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে কুৎসা করছে। কখনও কখনও তারা শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। 

    এক বিজেপি নেতা বলেন, কিছু নেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় সমলোচনা করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাদের জনপ্রিয়তাও নেই। অন্য গোষ্ঠীর অবশ্য দাবি, দলের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যার কথা নেতাদের একাধিকবার জানানো হয়েছিল। রাজ্য নেতাদেরও চিঠি করা হয়। কিন্তু তাঁরা পদক্ষেপ নেননি। সেই কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা করতে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন। 

    দলের এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, জেলা কমিটির ভোল বদল করা উচিত। লড়াকু নেতাদের সামনে আনা প্রয়োজন। দলের কর্মসূচি পার্টি অফিসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। ময়দানে নেমে লড়াই করার মানসিকতা কারও নেই। সেই কারণে জেলার অধিকাংশ বুথে কমিটি গঠন হয়নি। সংগঠনের কথা চিন্তা না করে দুই গোষ্ঠীর নেতারা একে-অপরকে টাইট দিতে ব্যস্ত রয়েছেন। রবিবার রাতের ওই ঘটনায় দলের নগ্ন রূপ আবার সামনে এসেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)