• বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমের সব চিকিৎসা খরচও বেঁধে দিতে চলেছে রাজ্য
    বর্তমান | ১৪ মার্চ ২০২৩
  • বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে চিকিৎসার বিল দেখে চমকে ওঠার দিন শেষ হতে চলেছে! সৌজন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রাজ্যের সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে চিকিৎসা ও আনুষঙ্গিক পরিষেবার খরচের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিতে চলেছে তারা। ইন্ডোর, আউটডোর থেকে শুরু করে রক্ত পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়—চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষেত্রেই খরচ বেঁধে দেওয়া বা ক্যাপিং করা হবে। হাসপাতালগুলির শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী (এ, বি, সি ইত্যাদি) বেড ভাড়া, আউটডোরে দেখানোর খরচ, রোগ ও রক্তপরীক্ষার খরচ নির্ধারণ করা হবে। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। 

    এই পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়িত করতে নবান্নের নির্দেশে গত ২ মার্চ একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের নির্দেশিকা অনুসারে সেই কমিটিতে রয়েছেন ছ’জন সিনিয়র প্রশাসক ও বিশিষ্ট চিকিৎসক। আছেন দুই স্বাস্থ্য অধিকর্তা, পিজি’র অধিকর্তা ডাঃ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীণ ফিজিশিয়ান ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায় এবং দুই বিশিষ্ট গ্যাসট্রোএনট্রোলজিস্ট ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরী, ডাঃ গোপালকৃষ্ণ ঢালি। বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনগুলির একজন করে প্রতিনিধিও থাকবেন কমিটিতে। রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের সেক্রেটারি আরশাদ ওয়ারসিকে দ্রুত কমিটির বৈঠক ডাকতে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, রাজ্যে প্রায় চার হাজার প্রাইভেট হাসপাতাল ও নার্সিংহোম রয়েছে। এর মধ্যে কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় রয়েছে ৮০টি বড় হাসপাতাল। এই শ্রেণির হাসপাতালে ১০০ বা তারও বেশি বেড রয়েছে। স্বাস্থ্য কমিশনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, কলকাতা হাইকোর্ট এক রায়ে বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচ বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছে। সরকারও এটা করতে চাইছে। শীঘ্রই কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হবে। সুকুমারবাবু, ডাঃ চৌধুরী সহ বিশিষ্ট চিকিৎসকরা কমিটি গঠনের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে পূর্ব ভারতের বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠনের শীর্ষকর্তা রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘এখনও এমন কোনও চিঠি বা নির্দেশ পাইনি। তা পেলে পদক্ষেপ করব।’  

    প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন গঠিত হয়। তারা এখনও পর্যন্ত ৩৩টি ‘অ্যাডভাইজারি’ প্রকাশ করেছে। তার মধ্যে ১৪টিই অবশ্য কোভিড সংক্রান্ত। হাসপাতালের ফার্মাসি বিলে ১০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণাও করেছে তারাই। চিকিৎসায় গাফিলতি সংক্রান্ত ১৫০০ মামলার নিষ্পত্তির পাশাপাশি প্রায় ৬৫০টি মামলায় ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছে কমিশন। মোট ৬ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর ৬ বছর কেটে গেলেও প্রাইভেট হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির পরিষেবা সংক্রান্ত খরচ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি তারা। এবার শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেটাই দেখার!
  • Link to this news (বর্তমান)