• প্রোমোটারের করাল গ্রাস থেকে বাঁচবে কি ব্যোমকেশের প্রেসিডেন্সি বোর্ডিং হাউস!
    বর্তমান | ১৪ মার্চ ২০২৩
  • অর্ক দে, কলকাতা: কলকাতার কলেজ স্ট্রিট পাড়া। ঠিকানা ৩৩ নম্বর মহাত্মা গান্ধী রোড। গলিতে ঢুকেই ডান হাতে বড় তিনতলা বাড়ি। শতবর্ষ প্রাচীন এই বাড়ির দেওয়াল থেকে খসে পড়েছে পলেস্তরা। ইটের পাঁজরে ডালপালার সংসার। আদ্যিকালের একটা সাইনবোর্ড আছে বটে, তবে সেটি একদিকে নুইয়ে পড়েছে। তাতে ধুলো আর ঝুলের ফাঁক দিয়ে আবছা দেখা যাচ্ছে লেখাটা— ‘প্রেসিডেন্সি বোর্ডিং হাউস’। এক সময় এই বাড়িতেই এসে উঠেছিলেন ব্যোমকেশ বক্সি, অজিত রায়! 

    গল্পটা খোলসা করা যাক। তিনতলা এই জীর্ণ বাড়িতে তিন বছর কাটিয়েছিলেন ব্যোমকেশের স্রষ্টা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর গল্পে বিয়ের পর ব্যোমকেশ-সত্যবতী কিছুকাল এই মেসেই সংসার বেঁধেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন অজিত। এই মেসের ঘরে বসেই তাঁর কল্পনা-কলমে রূপ পেয়েছে ব্যোমকেশের একাধিক কাহিনি। শুধু শরদিন্দু নন, এখানে থাকতেন জীবনানন্দ দাশও। সেই মেসবাড়ি আজ জীর্ণ, ভঙ্গুর। তালা পড়েছে বহুকাল আগেই। নীচে চলছে পাইস হোটেল ‘মহল’। যা অবস্থা, তাতে যে কোনওদিন ধুলোয় মিশবে সেই স্মৃতি। মাটি চাপা পড়বে ইতিহাস। প্রোমোটারের হাত থেকে কি বাঁচবে এই বোর্ডিং?

    ১৯১৭ সাল নাগাদ এই মেসবাড়িটি তৈরি করেন নন্দলাল দত্ত। গোটা বাড়িতে ঘর রয়েছে ৩০টি। একতলায় এক সময় প্রেসিডেন্সি বোর্ডিং হাউসের রান্নাঘর ও খাবারের জায়গা ছিল। মেস উঠে যাওয়ার পর এখন সেই দু’টি ঘর নিয়েই চলছে পাইস হোটেল। এই হোটেল চালান নন্দলালের নাতি সন্দীপ দত্ত।  ভিতরে ঢুকলেই লম্বা বারান্দা। উপরের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এক ধারের লোহার রেলিং ভেঙে পড়েছে। বারান্দার কার্নিশে আগাছার বাস। ভিতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। সঙ্গে সোঁদা গন্ধ। সিঁড়ির গায়ে বড় ফাটল, রেলিংও ভাঙা। সন্দীপবাবু জানালেন, এখানে ছাদের উপর ৩ নম্বর ঘরে থাকতেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়— ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল। আর জীবনানন্দ দাশ থাকতেন ৪ নম্বর ঘরে। তিনি ১৯৩০ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কাটিয়েছেন এখানেই। শরদিন্দুবাবু ব্যোমকেশের প্রথম গল্প ‘পথের কাঁটা’ লিখেছিলেন ওই ঘরে বসেই। শরদিন্দু বা জীবনানন্দের সেই ঘরে এখন তালা ঝুলছে। বেশ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত দু’-একজন বোর্ডার থাকলেও এখন আর ঘর ভাড়া দেওয়া হয় না। বাড়ি মালিকের পরিজনরা দোতলার একটি ঘরে থাকেন। তবে, অনেক উঠতি কবি জীবনানন্দের ঘরে থাকতে চান। নিছকই শখ তাঁদের। অনেকে থেকেওছেন। কিন্তু এখন বাড়ির যা অবস্থা, তাতে থাকার অনুমতি দেওয়া যায় না। সন্দীপ দত্তের কথায়, ‘কিটসের বাড়ি যেভাবে লন্ডনে সংরক্ষণ করা হয়েছে, সেভাবেই এই বাড়ি সংরক্ষণ করতে চাই। আগে মেসবাড়ির নীচে বড় চৌবাচ্চা ছিল। সেখানে মেসের বাসিন্দারা স্নান করতেন। এখন সকলেই ব্যক্তিগত শৌচালয় খোঁজেন। তাই, বাড়ি সংস্কার না করলে বোর্ডিং চালু করা সম্ভব নয়।’  এখানেও অদূর ভবিষ্যতে মাথা তুলবে বহুতল? শরদিন্দু বা জীবনানন্দের স্মৃতিও কি মুছে যাবে? উত্তরের অপেক্ষায় মহানগর। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)